চিকিৎসা করাতে আসা রোগিণীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে বাঁকুড়া ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চক্ষু বিভাগের এক প্যারামেডিক্যাল কর্মীকে গামছা পরিয়ে ঘোরালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে কাঞ্চনপুর এলাকায়। সমরেশ কুম্ভকার নামে অভিযুক্ত ওই কর্মীকে আপাতত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলাস্বাস্থ্য দফতর।
সমরেশবাবু প্রায় দুবছর বাঁকুড়া-২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে খবর, এর আগে তিনি মালদহের একটি হাসপাতাল, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ, শালতোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রতেও কয়েক বছর কাজ করেছেন। সব জায়গাতেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “সমরেশবাবু বাঁকুড়া মেডিক্যালে থাকাকালীন সেখানকার নার্সদের উত্ত্যক্ত করতেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে শালতোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হল। সেখানেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় সরিয়ে দেওয়া হয়।” জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “অভিযুক্তকে আপাতত অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।” |
অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী। —নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরে কাঞ্চনপুর লাগোয়া একটি গ্রাম থেকে এক গৃহবধূ তাঁর আত্মীয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চোখের চিৎকিসা করাতে এসেছিলেন। সমরেশবাবুই তাঁর চোখ পরীক্ষা করে দেখেন। পরে তাঁকে কু-প্রস্তাব দেন অভিযোগ। এই অভিযোগ গ্রামবাসীদের কানে আসতেই মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পথেই সমরেশবাবুর পথ আটকান তাঁরা। গ্রামের বাসস্ট্যান্ডেই তাঁকে আটকে গামছা পরিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান এবং একটি মুচলেকা দিয়ে রোগিণীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকারও করেন সমরেশবাবু। এর পরেই বাসিন্দারা অভিযুক্তকে অন্যত্র বদলি করার দাবিতে স্মারকলিপি দেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারী অখিল মিশ্র, সঞ্জীব গোস্বামী, লালু মালরা বলেন, “এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। অভিযুক্তকে অবিলম্বে এখান থেকে বদলি করা হোক।” সমরেশবাবু অবশ্য দাবি করেন, “আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রামবাসীরাই আমাকে নিগ্রহ করেছেন। ওঁদের চাপেই মুচলেকা দিয়ে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি।”
দুপুরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত হন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং বাঁকুড়া-২ যুগ্ম বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী। তাঁরা অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমন পাল ও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাঁকুড়া বিধায়কের প্রতিনিধি রবিলোচন রানাকে নিয়ে বৈঠকে করেন। বৈঠকেই সমরেশবাবুকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবিলোচনবাবু বলেন, “বৈঠকে সমরেশবাবু নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। ওঁকে রানিবাঁধে বদলি করা হয়েছে।” |