গ্রাম ছাড়ল মৃতার পরিবার, দুই
প্রতিবাদীর নামে এফআইআর
কামদুনি ছেড়ে চলেই গেল নিহত ছাত্রীর পরিবার।
সরকারি চাকরি নেওয়া এবং আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর জেরে গত ক’দিনে গ্রামের মধ্যেই একঘরে হয়ে পড়েছিল পরিবারটি। এ দিন তারা গ্রাম ছেড়েই চলে গিয়েছে বলে এলাকা সূত্রের খবর। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “ওঁরা চলে যাওয়ার আগে পোষা ছাগলটা দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউই তা নিতে রাজি হয়নি।”
ঘটনাচক্রে এ দিনই মৃতার পরিবারের তরফে প্রতিবাদ মঞ্চের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মঞ্চের সদস্য ভাস্কর মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ কয়ালের (মঞ্চের সম্পাদক মৌসুমি-র স্বামী) নামে এফআইআর দায়ের করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে জোর করে ঢোকা, ভয় দেখানো এবং জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল সোমবারই। ওই দিন মহাকরণ থেকে একটি চিঠির প্রতিলিপি সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করেছিল, ‘কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চের কর্মকর্তারা মুখোশের আড়ালে নিজেদের আখের গোছাতে কয়েকটি স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যমের কুপরামর্শে দোষীদের আড়াল করে লক্ষ-লক্ষ টাকা উপার্জনের রাস্তায় নেমে পড়েছে। এই প্রতিবাদী মঞ্চের কর্মকর্তারা আমাদের পরিবারের সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রী সম্বন্ধে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চে সামিল করে।’ এই চিঠি প্রকাশের পর দিনই প্রতিবাদী মঞ্চ গ্রামে একটি সভা ডাকে।
পুলিশের সঙ্গে কথা গ্রামবাসীদের। ছবি: দেবাশিস রায়।
তাতে ওই ছাত্রীর পরিবারের কেউই হাজির হননি। এর মধ্যে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন মৃতার ভাই ও কাকিমা। এ দিন বারাসতে জেলা পরিষদে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন মৃতার বাবাও। প্রতিবাদ আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুখ খোলা এবং সরকারি চাকরি গ্রহণ করার এই পদক্ষেপের পরেই গ্রামের মধ্যে কার্যত একঘরে হয়ে পড়ে পরিবারটি। প্রতিবাদী মঞ্চ নিজের মতো করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এলাকার মানুষের এও দাবি নির্যাতিতা ছাত্রীর কাকিমা পরে আলাদা করে চিঠি দিয়ে তাঁদের জানিয়েছিলেন, প্রতিবাদী মঞ্চের বিরুদ্ধে আনা আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। মঞ্চের সদস্য হওয়ার জন্যও তাঁদের কেউ চাপ দেয়নি। এই চিঠিটি উদ্ধারের জন্য বৃহস্পতিবার দিনভর কামদুনিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। শেষে এলাকার বাসিন্দারাই চিঠির প্রতিলিপি পুলিশের হাতে তুলে দেন। তবে পুলিশের বক্তব্য, ওই চিঠিতে নিহত ছাত্রীর পরিবারকে জোর করে সই করানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কথায়, নিহত ছাত্রীর কাকিমা এবং ভাই অভিযোগ করেছেন, প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ভাস্কর মণ্ডল-সহ কয়েক জন তাঁদের বাড়িতে ঢুকে জোর করে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। তাতেই ওই বয়ান লেখা হয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই ভাস্কর মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ কয়ালের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে জোর করে চিঠি লেখানোর বিষয়টি জানতে পেরে তৃণমূলই পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রতিবাদী মঞ্চ দোষীদের শাস্তি নিয়ে আন্দোলন করুক। কিন্তু জোর করে চিঠি লেখালে বা ভয় দেখালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”
এলাকার মানুষ জানান, বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা নাগাদ প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ভাস্কর মণ্ডলের বাড়িতে হানা দেয় শাসন থানার একটি দল। ভাস্করকে বাড়িতে পায়নি পুলিশ। তাঁর বাবা-মা-স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন পুলিশকর্মীরা। তল্লাশি চালানো হয় ভাস্করের ঘরেও। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, পুলিশি অভিযান হতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁরাই ভাস্করকে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
কামদুনির বাসিন্দাদের বক্তব্য, এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ ফের হাজির হয় পুলিশ। সে সময় এলাকার বাসিন্দারা ভাস্করকে নিয়ে সদলবলে পুলিশের সামনে আসেন। প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক মৌসুমি কয়াল পুলিশকে বলেন, “ভাস্কর বা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কাউকে গ্রেফতার করলে, আমরা সবাই গ্রেফতার বরণ করব।” পুলিশ তাঁদের জানায়, ভাস্করকে গ্রেফতারের জন্য নয়, তদন্তের কাজেই তারা এসেছে। এর পরেই পুলিশ তাঁদের কাছে নির্যাতিতার কাকিমার লেখা চিঠিটি চায়। কিন্তু মূল চিঠিটি পুলিশকে দেননি এলাকার মানুষ। চিঠিটির ফটোকপি দেওয়া হয় পুলিশকে। এ দিন নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কামদুনির বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, “যে পরিবারের জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম, তাঁরাই প্রশাসনের দেওয়া চাকরি-টাকা নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন।” ওই পরিবারটি যে কার্যত গ্রামে একঘরে হয়ে পড়েছে, তারও প্রতিফলন মিলেছে এলাকার মানুষের হাবেভাবে। যে ভিটেবাড়ি থেকে (নির্যাতিতার বাড়ি) কামদুনির আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা এ দিন কার্যত পরিত্যক্ত। দরজায় তালা। তবে নিহত ছাত্রী পরিবার গ্রামই ছাড়ুক বা প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে এফআইআর-ই হোক, আন্দোলন থামবে না বলে মঞ্চের সম্পাদক মৌসুমি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের আন্দোলন গ্রামের মেয়েদের নিরাপত্তা, রাস্তা-বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি ও পুলিশ ফাঁড়ির দাবিতে। যত দিন তা না মিলছে, আন্দোলন চলবেই।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.