তর্পণের ভিড়ের
প্রস্তুতি নবদ্বীপে
তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ম্‌। তৃপ্ত হোক তিন ভুবন। তৃপ্‌ ধাতু থেকেই এসেছে তর্পণ শব্দটিও। পূর্বপুরুষকে তৃপ্ত করা। সেই সঙ্গে তৃপ্ত করা সকল জগত্‌কে।
অর্থাত্‌ প্রবহমান নদী জলে আবক্ষ দাঁড়িয়ে দু’হাতে জল নিয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে এই দিন শুধু যে পূর্বপুরুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তা নয়, সমগ্র ভূ অর্থাত্‌ অতীত, পূর্বের যাবতীয় প্রাণকে যেন সশ্রদ্ধ আমন্ত্রণ করা হয়। আশ্বিনের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষকে জল দান উত্তর পুরুষের শাস্ত্রমতে কর্তব্য বলে বিশ্বাস করেন বহু মানুষ।
আর সে কারণেই পুণ্যতোয়া গঙ্গার পাশে তীর্থক্ষেত্র নবদ্বীপে এই দিন সকালে ভিড় করেন বহু মানুষ। পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “বৈষ্ণবতীর্থ হলেও নবদ্বীপে শাক্ত প্রভাবও ছিল। মধ্যযুগের স্মৃতিশাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের অনেকেই থাকতেন নবদ্বীপে। আর তর্পণ থেকে শুরু করে এ ধরনের সামাজিক সংস্কারের নিয়ন্ত্রণ ছিল স্মৃতির পণ্ডিতদের হাতেই। সম্ভবত তখন থেকেই নবদ্বীপে তর্পণ করাটা খুবই পুণ্যের বলে বিবেচিত হত।” সেই ধারা এখনও রয়েছে। নানা জায়গা থেকে এই দিন হাজার হাজার লোক তর্পণ করতে আসেন নবদ্বীপে। তাঁদের স্নান-তর্পণ যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে দিকে নজর দিয়েছে শহর প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকালে রানিরঘাটে গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় পুরপিতা মিহিরকান্তি পাল বলেন, “নবদ্বীপের সব ক’টি ঘাট মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ তর্পণ করেন। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসেন। ইদানিং যেন ভিড়টা প্রতি বছর বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, যাঁদের তর্পণ নেই তাঁরাও স্নানের ঘাটে দল বেঁধে ভিড় জমাচ্ছেন মহালয়ার ভোরে। কেমন যেন হুজুগ লেগে গিয়েছে।” তাঁর কথায়, “তবে আমরাও তৈরি। কারও যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
ঘাটে ঘাটে সাজ সাজ রব তাই বৃহস্পতিবার থেকেই। অন্ধকার থেকেই স্নান শুরু হয়ে যায় বলে ঘাটের ধারে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে ঘাটগুলোকে। সংস্কৃত পন্ডিত শুভেন্দু কুমার সিদ্ধান্তের কথায়, “তর্পণ শুধু মহালয়ার সকালে গঙ্গার ঘাটে হই হই করে স্নান করার হুজুগ নয়, এ এক অন্তরঙ্গ দর্শন। তার অনুশীলনে বরং ভালই তো হয়।” প্রবীণ সংস্কৃতজ্ঞ পাঠক গোরাচাঁদ ভট্টাচার্যর কথায়, “হতে পারে এটা একটা এক দিনের ভ্রমণ-আনন্দের উত্‌সবে পরিণত হয়েছে। অন্তত একবার তো এই উপলক্ষে পিতৃপুরুষের কথা স্মরণ করা হচ্ছে। তা খারাপ হবে কেন?”
শান্তিরঞ্জনবাবু বলেন, “পরলোকগত প্রিয়জনেরা মহালয়াতে নিজ ধামে আসেন। তাই মহালয়া শব্দের অন্য অর্থ আনন্দ নিকেতন। অতীত দিনের মানুষগুলির উপস্থিতিতে গৃহ আনন্দময় হয়ে ওঠে। তাই তর্পণ আসলে এক স্মরণ উত্‌সব। মনে করা হয় যে সব প্রিয়জনেরা এখনও পুনর্জন্ম লাভ করেননি তাঁরা পিপাসু হয়ে আছেন। উত্তর পুরুষরা তাঁদের জল দান করে পিপাসা মেটাবেন।”
তবে জল কেবল নিজ প্রিয়জন পরিজনকে নয়, ব্রহ্মাণ্ডের সবাইকে এমনকি তৃণকেও তৃপ্ত করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.