বিপন্ন শৈশব, বিড়ি বাঁধতে
বাধ্য হচ্ছে ধুলিয়ানের কচিকাঁচারা
০০০ বিড়ি বাঁধলে পাওয়া যায় ৭৫ টাকা। যদিও বিড়ি বাঁধার সরকার নির্ধারিত মজুরি হল ১৭০টাকা, মুর্শিদাবাদে। কিন্তু মুর্শিদাবাদে যে শিশুরা বিড়ি বাঁধে, তারা তো শ্রমিকই নয়! ফলে, ওদের জন্য এই আইনি অনুশাসন নেই। ৭৫ টাকাতেই তাই কিনে নেওয়া যায় শৈশব।
সম্প্রতি চাইল্ড রাইটস অ্যাণ্ড ইউ (ক্রাই) ও মারফত নামে দুই বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা, ‘বিহাইন্ড দ্য স্মোকস্ক্রিন’-এর রিপোর্টে উঠে এল এমনই সব তথ্য। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পুরসভার ১৭৫০ টি বাড়িতে করা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ১০০ জনে ৩২ জন ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়ে বিড়ি বাঁধার কাজ করে। ছেলেদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা শতকরা ১৪.০২ জন। ১০ জনে ৮ জন কিশোরীই বাড়িতে বিড়ি বাঁধার কাজে যুক্ত।
১৯৮৬ সালে তৈরি হওয়া শিশুশ্রম বিরোধী ও নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কমবয়সীরা ১৬টি কাজ ও ৬৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ (হ্যাজার্ডাস) কাজ করতে পারবে না। কোনও মালিক যদি সেই কাজ তাদের দিয়ে করালে তা হবে বেআইনি। প্রাক্তন ডেপুটি লেবার কমিশনার সুমিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, আইন থাকলেও আইনের ফাঁক রয়েছে। বিড়ি বাঁধার কাজটি যেহেতু পরিবারের অনেকে এক সঙ্গে করেন, তাতে শিশুরাও যোগ দেয়, সরাসরি একে আইন করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না।
মুর্শিদাবাদের শ্রম দফতরের আধিকারিক অসিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিড়ি শিল্পে নিযুক্ত শিশু শ্রমিকরা বাবা মাকে সাহায্য করে বাড়িতে বসে। বিড়ি কারখানাগুলোতে বিড়ি বাঁধার কাজ হয় না। বিড়ি মালিকরা এজেন্টের মাধ্যমে বিড়ি তৈরি করান। বিড়ি শ্রমিক হিসাবে নাম রয়েছে বাবা মায়ের। মা যখন সংসারের কাজ করেন তখন বাড়ির ছেলেমেয়েরা হয় বিড়ি বাঁধার কাজ করে। শ্রম আইন অনুযায়ী এক্ষেত্রে কিছু করার নেই।”
বিড়ি বেঁধেই চলে যায় দিনের বেশির ভাগ সময়। —নিজস্ব চিত্র।
এই প্রসঙ্গে মারফতের সম্পাদক অরূপ দাস বলেন, “পরিবারের অভাবের জন্যই বেশিরভাগ শিশু কাজ করতে বাধ্য হয়। এটা রুখতে সরকার কিছু পদক্ষেপ করেছে ঠিকই। রাজ্য সভায় শিশু শ্রম বিষয়ক বিলটি পাশ হয়ে গেলে তখন কাজটা অনেকটাই সহজ হবে।”
ধুলিয়ানের ১৯টি ওয়ার্ডের সমীক্ষা বলছে, বিড়ি বাঁধাকে কেন্দ্র করেই ওই অঞ্চলে তৈরি হয়েছে একটা বিকল্প অর্থনীতি। মেয়েরা কে কত ভাল বিড়ি বাঁধতে পারে, তার উপরই নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবন কেমন হবে। অনেক ছোট ছেলে মেয়েই বিড়ি বেঁধে স্কুলে যায়। নিজের বা ভাই বোনের পড়ার খরচ চালায়। স্বপ্ন দেখে পরবর্তীকালে শিক্ষক হওয়ার। মেয়ে ভাল বিড়ি বাঁধতে পারলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পণ ছাড়াই তার বিয়ে হয়ে যায়। কারণ শ্বশুরবাড়ির আর্থিক অবস্থাও বিড়ি বাঁধার উপরই নির্ভরশীল।
ধুলিয়ানের সিটুর ব্লক সম্পাদক মহম্মদ আজাদ বলেন, “এখানে লক্ষাধিক জনবসতির আয় বলতে বিড়ি বাঁধা। প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবারে মেয়েরা ঘরে বসে বিড়ি বাঁধেন। তাদের সঙ্গে স্কুল পড়ুয়ারাও কাজ করে। বিকল্প রুজির কোনও বন্দোবস্ত না থাকাতে তারা বাধ্য হয় এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে।”
এর পাশাপাশি স্কুলে যাওয়াও থাকে। মুর্শিদাবাদে শ্রমিক স্কুল রয়েছে ৪০টি। তাতেই দিনে পাঁচ ঘণ্টা করে চলে পড়াশোনা। স্কুল থেকে ফিরে ‘ঘরের কাজ’। কিন্তু তিন বছর ওই শ্রমিক স্কুলে পড়াশোনা করার পরে বেশির ভাগেরই আর মূলধারার স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠে না। ফলে শিক্ষার অধিকার অপূর্ণই রয়ে যায়। ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তি সরকার বলেন, “যে মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করছে সেই বাড়িতে বিড়ি বাঁধছে। পরিবারগুলোর বিকল্প রুজির ব্যবস্থা করতে না পারলে এটা আটকানো সম্ভব নয়।” ‘চাইল্ড রাইটস অ্যাণ্ড ইউ’ (ক্রাই)-এর আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “এই ভাবে একটা বড় অংশের শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
শুধু যে মূল ধারার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় ছেলেমেয়েরা তা নয়। স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হয় পরবর্তীকালে। সমীক্ষা প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারী অধিকার কর্মী নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বড় হয়ে মেয়েদের বিভিন্ন স্ত্রীরোগের শিকার হতে হয় এই কাজের জন্য। তা নিয়েও আলাদা সমীক্ষা হওয়া উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.