অধীর চৌধুরীর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদনের শুনানি পিছিয়ে গেল। বৃহস্পতিবার, বহরমপুর জজকোর্টের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অসিতকুমার দে’র এজলাসে রেল প্রতিমন্ত্রীর আগাম জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু এ দিন বিচারক ওই শুনানির আবেদন গ্রহণ করেননি। আগামী ২৯ অক্টোবর এ ব্যাপারে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। সে দিনই জানা যাবে রেল প্রতিমন্ত্রীর অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন গ্রাহ্য হবে কিনা।
এর ফলে তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ খুনের মামলায় অধীরের উপরে গ্রেফতারের খাঁড়া আপাতত ঝুলেই রইল। এ দিন এ ব্যাপারে অধীর অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন বহরমপুরে কেন্দ্রীয়মন্ত্রীর আইনজীবী কাঞ্চনলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার থেকে আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুজোর ছুটির জন্য বন্ধ থাকছে আদালত। তার আগে বৃহস্পতিবারই ছিল এক মাত্র কাজের দিন। এ দিন আদালতে বহু মামলার শুনানি ছিল। সম্ভবত সে জন্যই বিচারক এ দিন নতুন করে আর কোনও শুনানির আবেদন গ্রহণ করতে রাজি হননি। ওই আবেদনের শুনানির জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ধার্য হয়েছে। ওই দিনই জানা যাবে আবেদনটি গ্রাহ্য হবে কিনা।”
এ দিন অধীরের আইনজীবী বিচারকের কাছে অন্তবর্তী জামিনের আবেদন করা মাত্র সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় আপত্তি তোলেন। তাঁর দাবি ছিল, অধীরের মামলার ‘কেস ডায়েরি’ এখনও সিজেএম আদালত থেকে জেলা দায়রা বিচারকের আদালতে এসে পৌঁছয়নি। আদালত না খুললে তাই ওই শুনানি গ্রাহ্য করা যাবে না।
২০১১ সালের ১৫ মে বহরমপুর শহরের মোহনের মোড়ে দুষ্কৃতীদের বোমায় খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ। তদন্তে নেমে পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতরা সবাই অবশ্য পরে ওই মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে, ওই আট জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অন্য মামলা করায় ধৃতেরা সকলেই এখন জেল হেফাজতে।
২৫ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অলি বিশ্বাসের আদালতে ৩৯৬ পাতার চার্জশিট জমা দেয় বহরমপুর থানার পুলিশ। সেই চার্জশিটে অধীরের বিরুদ্ধে অন্য অভিযুক্তদের মতোই খুন, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্ত রেল প্রতিমন্ত্রীকে ‘পলাতক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বহরমপুরে অধীরের আইনজীবীরা অবশ্য ওই চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের দাবি, কামালের স্ত্রী নীলা হামিদ ও মেয়ে করিশমা বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁরা অধীরকে ওই খুনের ‘মূল ষড়যন্ত্রী মনে হয়’ বলে উল্লেখ করেন। মন্ত্রীর আইনজীবীদের প্রশ্ন, আড়াই বছর আগের ঘটনা হওয়া সত্ত্বেও এত দিন গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি কেন? তা ছাড়া ‘মনে হওয়ার’ উপরে ভিত্তি করে কি কাউকে অভিযুক্ত করা যায়?
চার্জশিটে তাঁর নাম রয়েছে জানতে পেরে অধীর অবশ্য জানিয়েছিলেন, অন্তবর্তী জামিনের পথে পা বাড়াচ্ছেন না তিনি। তবে দলের হাইকমান্ডের, বিশেষত রাহুল গাঁধীর পরামর্শে শেষ পর্যন্ত আইনি সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বহরমপুরের সাংসদ। সেই সঙ্গে, দলের নির্দেশে পুজোর আগে দিল্লি থেকে নিজের কেন্দ্র বহরমপুরে আসাও পিছিয়ে দেন রেল প্রতিমন্ত্রী।
অধীরকে গ্রেফতারের এই ‘ষড়যন্ত্রের’ তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও। এ দিন তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্র করে অধীরকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতারের কথা যদি মমতা ভেবে থাকেন, তা হলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন!”
পুজোয় বহরমপুরে আসছেন না তিনি। এর ফলে মাথায় হাত পড়েছে শহরের বেশ কিছু পুজো উদ্যোক্তার। উদ্বোধন করবে কে?
|