|
|
|
|
|
আটচালা বাদে সাবেকিয়ানা অটুট
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
|
জৌলুস কমেছে। কিন্তু থিম পুজোর আড়ালে আজও হারিয়ে যায়নি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের খেপুত-দক্ষিণবাড় গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের পুজোর সাবেকিয়ানা।
শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তী ১১২৪ বঙ্গাব্দে বাড়ির মঙ্গল কামনায় প্রথম পুজো শুরু করেছিলেন। স্থানীয় সেকেন্দ্রারি গ্রামে আদি বাড়ি হলেও রুজির টানে শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তী বাড়ি সংলগ্ন খেপুত-দক্ষিণবাড় গ্রামে উঠে এসে বসবাস শুরু করেন। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পুজো করে সংসার চালাতেন তিনি। বর্তমানে বাড়ির প্রবীণ সদস্য লালমোহনবাবু, জানান, শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তী সেই সময়ই মাটির একটি ছোট আটচালা তৈরি করে পুজো শুরু করেছিলেন। সেই আটচালা আজ আর নেই। পরে বাড়ির সদস্যরা সবাই মিলে টাকা তুলে তৈরি করেছেন বড় পুজো মণ্ডপ। বিগত বছরগুলিতে এই একটি ছাড়া তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি পুজোয়। পুজোর শুরু থেকে বংশের দশম প্রজন্মের হাত ধরে পুজোর ঐতিহ্য এখনও অটুট।
আর্থিক কারণে পুজোর জৌলুস কমেছে। কিন্তু আন্তরিকতায় তার কোনও ছাপ পড়েনি। জন্মাষ্টমীর দিন বাড়ি সংলগ্ন একটি ছোট দিঘি থেকে মাটি তুলে প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়। সেই থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা তৈরির কাজ। পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা শিল্পীকে সাহায্য করতে এখনও ষষ্ঠীর দিন পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েরা মায়ের দশ হাতে নানান অস্ত্র সহ মাকে সাজিয়ে তোলে। চক্রবর্তী পরিবারের পুজো হয় তান্ত্রিক মতে। মহালয়ার দিন চণ্ডীর ঘট স্নান করিয়ে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে। পুরনো প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত পুজোয় ছাগল বলি হয়।
এছাড়াও এই পুজোর আরও কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। পুজোয় সপ্তমীর সকালে শুরু হয় হোম। নবমীতে পুজো শেষে বিশেষ মন্ত্রের মাধ্যমে সেই হোমের আলো নেভানো হয়। এছাড়াও ধূনো পোড়ানোর মধ্যেও একটি নতুনত্ব রয়েছে। পরিবারের সদস্যা তরুবালাদেবী, নীলিমাদেবী, পদ্মদেবী, অনিতাদেবী, মীরাদেবীরা জানান, অষ্টমীর পুজোর দিন আরতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাড়ির সকল মহিলা সদস্যদের দুই হাতে এবং মাথায় পেতলের বাটিতে ধূনো জ্বালিয়ে মায়ের কাছে বসে থাকার নিয়ম রয়েছে। নবমীতে মায়ের ভোগে দেওয়া হয় শোল মাছ পোড়া আর পান্তা ভাত। দশমীতে মাকে শ্বশুরালয়ে পাঠানোর আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যদের অনেকেই এখন কাজের সূত্রে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু শিকড়ের টানে পুজোর ক’দিন সবাই জড়ো হন চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাদালানে।
পুজোর প্রহর গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি চলছে চক্রবর্তী বাড়িতে। |
|
|
|
|
|