কলকাতার পুজো আর কলকাতার নেই! বরং তাতে মিশে গিয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য থেকে নেপোলিয়নের দেশ। কোথাও আবার পাথর এসেছে ফা-হিয়েনের চিন থেকে। সব মিলিয়ে এ বার শহরের পুজোয় দেশ-বিদেশ মিলেমিশে একাকার।
দক্ষিণ কলকাতার পল্লিমঙ্গল ক্লাবে এ বার রয়েছেন দুই ফরাসি শিল্পী। পুজোকর্তা নারায়ণ রায় জানালেন, ফরাসি দূতাবাসের সূত্রেই শহরের পুজোয় মিশে যাচ্ছে ফরাসি শিল্প। গত রবিবারই শহরে পৌঁছেছেন জঁ জেভিয়ার রনো এবং গ্যালে ফোরে নামে দুই শিল্পী। পল্লিমঙ্গলের ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষের থিম মণ্ডপে ফ্রেস্কো পেন্টিং ফুটিয়ে তুলছেন তাঁরা। সঙ্গে রয়েছেন এ শহরেরই শিল্পী গোপাল পোদ্দার। তিনি হাতিবাগান নবীন পল্লিতেও বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছেন। সেখানে পাকিস্তান থেকে তিন শিল্পী এসে ফুটিয়ে তুলছেন সে দেশের চিত্রকলা। মণ্ডপ হচ্ছে লরির আদলে।
মুদিয়ালিতে অবশ্য এ বার মিলবে চৈনিক ছোঁয়া। তবে শিল্পী নয়, শিল্প-সামগ্রীর হাত ধরে। সেখানে শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ সুরাই মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করছেন চিনে নুড়ি-পাথর। পুজো কমিটির পক্ষে মনোজ সাউ বললেন, “চিন থেকে পাথর আনার গল্পটা বেশ মজার।” কী রকম? গোটা পুজোর জন্য লাগত ২-৩ টন পাথর। কিন্তু এ শহরের আতিপাঁতি খুঁজেও আধ টনের বেশি পাথর মেলেনি। শেষে বিপত্তারণ হয়ে এগিয়ে আসেন মুদিয়ালি এলাকারই বাসিন্দা, এক শাড়ি সংস্থার মালিক। তাঁর সূত্রেই চিন থেকে পাথর এল মুম্বইয়ে। সেখান থেকে সড়ক পথে মুদিয়ালি ক্লাবের মণ্ডপে।
বোসপুকুরে বিদেশি ছোঁয়া নেই। আছে প্রতিবেশী ওড়িশার শিল্প। সেখানে প্রতিমা তৈরির স্কেচ করেছেন পুরীর নারায়ণ মহারাণা। বোসপুকুরের কাজল সরকার বলছেন, ‘‘থিম খুঁজতে ওড়িশার গাঁয়ে-গঞ্জে ঘুরছিলাম। দরে পোষাচ্ছিল না।” শেষে হাল ছেড়ে বিশ্রাম নিলেন পুরীতে। আর তখনই খোঁজ পেলেন নাড়ু চিত্রপটকরের (নারায়ণকে যে নামে লোকে চেনে)। ব্যস, পরের দিনই নারায়ণের বাড়িতে গিয়ে কথাবার্তা পাকা করে ফেললেন বোসপুকুরের কর্তারা। নাড়ু চিত্রপটকরের স্কেচ অনুযায়ী, এ বার কাঠের বারকোষে খোদাই করে দুর্গামূর্তি তৈরি করছেন হলদিয়ার প্রদীপ মাইতি-দীপক ভৌমিকেরা। কাজলবাবু জানান, নারায়ণের দুর্গাপুজোর কাজ এই প্রথম নয়। পুরীর অনেক দুর্গাপুজোর মূর্তিই তাঁর গড়া।
পুজোকর্তারা বলছেন, বহু বছর আগেই বনেদি বাড়ির আঙিনা ছেড়ে দুর্গা নেমে এসেছিলেন সাধারণের মাঝে, হয়ে উঠেছিলেন সর্বজনীন। কিন্তু, বিশ্বায়িত অর্থনীতির দুনিয়ায় তিনি আর শহরে আটকে থাকতে নারাজ।
শিল্প-সংস্কৃতির লেনদেনে এ বার তিনি বিশ্বজনীন। |