ঘেরাও শায়েস্তায় কড়া বিধি বিশ্ববিদ্যালয়ে
যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও তুলতে যথাযথ ব্যবস্থা না-নেওয়ায় দুই উপাচার্যকে ডেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। এ বার ছাত্র ও কর্মীদের ঘেরাও, আন্দোলনে রাশ টানতে কড়া আচরণবিধি তৈরি করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সিন্ডিকেটের বৈঠকে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিধি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে।
বৈঠকের পরে সুরঞ্জনবাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু নির্দেশিকা আছেই। যেমন, ক্লাস চলাকালীন সভা-সমাবেশ করা যাবে না, ক্যাম্পাসে মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যাবে না ইত্যাদি। তিনি বলেন, “এ বার একটি অভিন্ন আচরণবিধি তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সিন্ডিকেটে। ছাত্র, শিক্ষাকর্মী-সহ সকলের সঙ্গে কথা বলেই আচরণবিধি তৈরি করব। এই ব্যাপারে আচার্য-রাজ্যপালের পরামর্শও নেওয়া হবে।”
ক্যাম্পাসিংয়ের দাবিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতভর উপাচার্য, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার, বিজ্ঞান শাখার সচিব, আধিকারিক ও কিছু শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিটেক পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকে সেই আন্দোলনের নিন্দা করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। তিনি জানান, আচরণবিধি তৈরি করা হবে প্রধানত দু’টি বিষয় মাথায় রেখে।
কেউ যাতে আইন হাতে না-নেন।
নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে, গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের দাবিদাওয়া জানানোর রেওয়াজ চালু করা। এই বিধির একটি খসড়া তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেটের বৈঠকে পেশ করা হবে অনুমোদনের জন্য।

অবস্থান-বিক্ষোভের সময় উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে কথা। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
নিয়ম না-মানলে কড়া শাস্তির নিদান থাকবে আচরণবিধিতে। কড়া মানে কতটা কড়া? সুরঞ্জনবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া আমি সমর্থন করি না। কিন্তু কেউ যদি আইন ভাঙে, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই শাস্তি দেওয়া হবে।” সে-ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা, সাসপেন্ড ইত্যাদি পদক্ষেপের কথা ভাবা হতে পারে বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।
যদিও আচরণবিধি তৈরি করে বা কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জেরেই যে ক্যাম্পাস শান্ত রাখা যাবে না, উপাচার্য তা জানেন। সুরঞ্জনবাবুর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে না-পারলে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা যাবে না। আমরা বাইরে থেকে কারও উপরে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না।”
১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ৫০ ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পরে মুক্ত হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার। দু’দিন যেতে না-যেতেই ফের রাজাবাজারে ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটে। রাজ্যের প্রথম সারির দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর এই ধরনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন আচার্য-রাজ্যপাল নারায়ণন দুই উপাচার্যকে ডেকে পাঠান রাজভবনে। যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে ঘেরাও তোলার বদলে উপাচার্যেরা কেন ছাত্রদের হাতে আটকে থাকলেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। নারায়ণন জানান, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা রোখা যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেই। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও বারবার ঘেরাওয়ের সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছেন। আলোচনায় সমস্যার সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের।
কিন্তু রাজ্যপালের উদ্বেগ এবং শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে যে কোনও লাভ হয়নি, বৃহস্পতিবার ফের তার প্রমাণ মিলেছে। ছাত্র, শিক্ষকেরা নন। এ দিন আংশিক সময়ের শিক্ষকদের একটি দল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে মূল প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থান করে। শিক্ষামন্ত্রীও সেই সময় ছিলেন ওই ক্যাম্পাসে। তবে তাঁর সামনে বিক্ষোভ দেখাননি অবস্থানকারী শিক্ষকেরা। মূলত কলেজ পরিচালন সমিতি, শিক্ষক সংসদ ইত্যাদি পরিচালন সংস্থায় যুক্ত হওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এই নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কিছুটা কথা কাটাকাটিও হয় তাঁদের। শিক্ষকদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট বা বিধি মেনেই ওই সব সংস্থায় তাঁদের রাখার কথা। সুরঞ্জনবাবুর পাল্টা ব্যাখ্যা, “ওঁরা যে-সব দাবি জানাচ্ছেন, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার প্রধানত সরকারের। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করার নেই। আমরা এ বিষয়ে সরকারের পরামর্শ চেয়েছি। তাদের বক্তব্য না-জেনে কিছুই করা যাবে না।”
এ দিনই আবার গণ ক্যাজুয়াল ছুটি নিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়িজ কনফেডারেশনের সদস্যেরা। সে-জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কর্মীদের হাজিরা ছিল বেশ কম। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “এটা ঠিক যে, কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। আগেই জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার অনুপস্থিত কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।” এমনকী তাঁদের বেতন কাটার আশঙ্কাও যে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, সেই ইঙ্গিত দেন ব্রাত্যবাবু।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.