হাইকোর্টের নির্দেশে অধিগৃহীত জমি ফেরত দিল প্রশাসন
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় চাষজমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা বানিয়েছিল প্রশাসন। পরে তাতে আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জমির মালিকেরা। মাস পাঁচেক আগে চাষিদের সেই অধিগৃহীত জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। নানা কারণে এতদিন সেই নির্দেশ কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। বৃহস্পতিবার এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের প্রবল বাধা সত্ত্বেও লিখিত ভাবে নলহাটি থানার কামালপুর গ্রামের ১৩ জন চাষিকে ওই জমি ফিরিয়ে দিল জেলা প্রশাসন। অবশ্য এত বিবাদের পরে জমি ফেরত পেলেও তাঁরা প্রত্যেকেই সেখানে রাস্তা বজায় রাখার ব্যাপারে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি। যার পেছনে ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রবল চাপের দিকেই ইঙ্গিত করছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
এ দিন পিচ না ঢালা রাস্তার ওই অংশটি ভাঙতে এলে বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই প্রশাসনকে বাধা দেন। যার জেরে দিনভর দফায় দফায় আলোচনার পরে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক তৈরি হওয়া রাস্তা না ভেঙেই চাষিদের কাছ থেকে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার মুচলেকা নিয়ে ফিরে যান প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। অবশ্য রাস্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওই ১৩ জন চাষি প্রশাসনের কাছে নানা শর্ত আরোপ করেছেন। যদিও বিক্ষোভকারীরা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের ক্ষোভ, ওই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কেন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হল না। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মতো জনহিতকর কাজের ক্ষেত্রে এমন রায় ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা তৈরি করবে বলেই তাঁদের অভিযোগ। এরফলে বিভিন্ন এলাকায় ওই প্রকল্পে রাস্তা তৈরি বাধা পাবে বলেই তাঁরে অনুমান। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অধিগৃহীত জমিতে রাস্তা চেয়ে পাল্টা বিক্ষোভ। ছবি: অনির্বাণ সেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৯-১০ আর্থিক বর্ষে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নলহাটি থানার গোপালচক মোড় থেকে টিঠিডাঙা গ্রাম পর্যন্ত ৬.৪ কিলোমিটার রাস্তা গড়ার অনুমোদন পায়। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ওই রাস্তা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা রামপুরহাট মহকুমার সহকারি বাস্তুকার অরিজিৎ ঘোষ বলেন, “গোপালচক থেকে ৫ কিমি রাস্তা তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে কামালপুর গ্রাম পেরিয়ে প্রায় ১৫০ মিটার রাস্তা নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়। সেখানে মাটি ভরাট, পাথর ফেলা, রাস্তা চওড়া হয়ে যাওয়ার পরে ওই অংশ নিয়ে ১৩ জন চাষি আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টে যান।” তার জেরেই ওই ১৫০ মিটার অংশে পিচ পড়া বাকি থাকতেই কাজ থমকে যায়। অবশ্য ১৫০ মিটার পরের অংশের কাজ স্বাভাবিক ভাবেই সম্পূর্ণ করা হয়। যদিও কামালপুর গ্রামের ওই চাষিদের আপত্তির কথা শুনে ক্ষোভ ছড়ায় প্রতিবেশী কয়েকটি গ্রামের মধ্যে। তাঁদের দাবি, ওই রাস্তার জন্য এলাকার আর্থ-সামাজিক চেহারা বদলেছে। মাত্র ১৫০ মিটারে আপত্তি জানিয়ে ওই ১৩ জন চাষি এলাকার উন্নয়নে বাধা দিয়েছেন। ফলে প্রথম থেকেই রাস্তা নিয়ে কামালপুরের ওই বাসিন্দাদের সঙ্গে টিঠিডাঙা গ্রামের বিতণ্ডা শুরু হয়।
যদিও কামালপুর গ্রামের সন্যাসী মণ্ডল, তমাল লেট, নিতাই বাগদি, গৌর বাগদিদের অভিযোগ, “প্রশাসন আমাদের চাষযোগ্য প্রায় ২ বিঘা জমির উপরে জোর করে রাস্তা বানিয়েছে। রাস্তা বানাতে বাধা দিতে গেলে টিঠিডাঙার লোকজন আমাদের মারধরও করে। পরে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই। সব শুনে আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।” তাঁদের দাবি, কোনও রকম আলোচনা না করেই তাঁদের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ফলে চাষবাসে ক্ষতি হয়। সন্যাসী মণ্ডল বলেন, “আমার জমির প্রায় ৩০০ বর্গফুট নেওয়া হয়েছিল। যার জেরে তুঁত উৎপাদনে ব্যাপক লোকসান হয়।” আবার সুনীল মণ্ডলের অভিযোগ, “জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রেশম চাষের জন্য আমাদের বাইরে থেকে অনেক দাম দিয়ে তুঁত পাতা কিনতে হয়েছে।” জমি ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে তাঁদের দাবি। অরিজিৎবাবু অবশ্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ক্ষেত্রে জমি না পেলে দফতর কোনও সড়ক নির্মাণ করতে পারে না। প্রথম দিকে ওই ১৩ জন চাষি কোনও আপত্তি না জানানোয় রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে সমস্যা শুরু হওয়ায় রাস্তার তৈরি ব্যাহত হয়।” রামপুরহাট মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায় বলেন, “আমরা অনিচ্ছুকদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পরে আদালতের রায় আসে।” কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের জেরে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে দেরি হয় বলে তাঁর দাবি।
এ দিন আদালতের নির্দেশ পালন করতে এসে অন্য গ্রামগুলির বাসিন্দাদের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েন প্রশাসনের লোকজন। গোপালচক মোড়ে নির্দেশ কার্যকর করতে আসা সুব্রতবাবুর গাড়ি ঘেরাও করেন টিঠিডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, কামালপুরের বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের ওই রাস্তা ব্যবহার করতে দেন না। ফলে নলহাটি ২ ব্লকের সঙ্গে তাঁদের কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে প্রশাসনকে এলাকায় পৌঁছতে সাহায্য করে। পরে কামালপুরের ওই চাষিদের সঙ্গে প্রশাসন দফায় দফায় আলোচনা করে। শেষে ঠিক হয় রাস্তা যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় রেখেই জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সুব্রতবাবুর দাবি, “এ দিন আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু ওই ১৩ জন চাষি রাস্তা না ভাঙার অনুরোধ জানিয়েই জমি ফেরত নিয়েছেন। ওই জমি তাঁরা চাষ করবেন নাকি রাস্তার জন্যই ছেড়ে দেবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার।” ওই চাষিরা অবশ্য জানিয়েছেন, প্রশাসন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলে তাঁরা রাস্তা ব্যবহারে বাধা দেবেন না। এ ক্ষেত্রে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট চাষিদের জমি অধিগ্রহণের নিয়ম মোতাবেক ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.