শিল্পীদের টানছে বাড়তি রুজি, শোলার সংসারে গিন্নি দশভুজা
ছরে চারদিনের জন্য বাপের বাড়ি আসে মেয়ে।
কিন্তু মন খুলে দুটো কথা বলার আগেই কী করে যেন শেষ হয়ে যায় দিনগুলো। আবারও শুরু হয় পরের বছরের ভাবনা। মেয়েকে কী খাওয়ানো হবে, কী ভাবে সাজানো হবে, সেই আলোচনাই চলতে থাকে বারোয়ারি থেকে অন্দরমহল সর্বত্র।
কাটোয়ার বনকাপাশি গ্রামেও বছরের বেশিরভাগ সময় জুড়েই দুর্গাকে সাজানোর প্রস্তুতি চলে। গ্রামের প্রায় সব ঘর জুড়ে দেবীর ডাকের সাজ তৈরি চলে বছরের ন’মাস জুড়ে। কিন্তু এ বছর যোগ্য কারিগররে অভাব দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, অনেকে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করতে যাচ্ছেন, আবার অনেকে বেশি রোজগারের আশায় ছুটছেন ভিন রাজ্যে। ফলে প্রতিমাকে সাজাতে দিন রাত এক করে, সংসার সামলে নেমে পড়েছেন বাড়ির গিন্নিরা। সঙ্গে রয়েছে কলেজ পড়ুয়ারাও।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ওই গ্রামে তৈরি করেছেন শোলা-হাব। গ্রামের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী আশিস মালাকার ফি বছর প্রশিক্ষণ দিতে বিদেশে যান। এ বার গিয়েছেন জিম্বাবোয়ে। তাছাড়া এখানকার তৈরি গয়না কলকাতার কুমোরটুলি থেকে ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক, যাদবপুর, গাঙ্গুলিবাগান ছেয়ে যায়। এখানকার গয়নার চাহিদা রয়েছে রাজ্যের বাইরেও। প্রতি বছরই দিল্লি, পটনা, লক্ষ্মৌ, পুনের একাধিক পুজো উদ্যোক্তা সরাসরি বনকাপাশির শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শোলার গয়না নিয়ে যান। আবার গ্রামের শিল্পীরা নিজেরাও গিয়ে প্রতিমাকে সাজিয়ে দিয়ে আসেন।
লম্ফের আলোয় কাজে ব্যস্ত মহিলারা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে শোলার গয়না তৈরির কারখানা। প্রতি কারখানাতে পুজোর মরসুমে গড়ে ১৫-২০ জন কারিগর প্রয়োজন। বিভিন্ন শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বছরে ন’মাস ওই গয়না তৈরি করা হয়। পুরে পুজোর মরসুমে তা বিক্রি করা হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বৈশাখ মাসের পর থেকে কাজের চাপ বাড়তে থাকে। দরকার হয় বেশি কারিগরের।
কিন্তু দিনে দিনে কাজের বরাত বাড়লেও কারিগরের সংখ্যা কমছে বলে দাবি শিল্পীদের। তাঁরা জানান, গ্রামের বেশিরভাগ যুবকই শোলার কাজ করতে আর রাজি হচ্ছেন না। বরং ভিন রাজ্যে গিয়ে অন্য কাজ করতেই বেশি আগ্রহ তাঁদের। আবার ১০০ দিনের কাজে কম পরিশ্রমে বেশি টাকা মেলে বলেও শোলার কাজে যুবকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় এক শিল্পী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “সারা দিন ধরে কাজ করতে হয়। সূক্ষ্ম কাজের জন্য চোখে চাপও পড়ে। কিন্তু মজুরি কম বলে নতুন কেউ আর এই কাজে আসতে চাইছে না।”
গ্রামে প্রায় ১০০টি কারখানা রয়েছে। বছরের অন্য সময় শ’পাঁচেক লোক এই কাজে যুক্ত থাকলেও গরম কাল পড়তেই কারিগরের সংখ্যা এক লাফে চার-পাঁচ গুন বেড়ে যায়। সুজয়কুমার পাল নামে এক শিল্পী বলেন, “মাঘ মাস থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে কারিগর ‘বুক’ করে রাখতে হয়, নাহলে কারিগর মেলা ভার।” একেক জন শিল্পী গড়ে ২৫-৩০টা গয়না তৈরির অর্ডার নেন। মহালয়ার পর থেকে মণ্ডপে গিয়ে দেবীকে সাজানোর কাজও তাঁরাই করেন। শিল্পীরা জানান, এই দশ-বারো দিনে কয়েক কোটি টাকার শোলার সাজ বিক্রি হয়। শিল্পী কাজল পাল বলেন, “সবচেয়ে বেশি কারিগর সমস্যা দেখা যায় প্রতিমা সাজানোর সময়। কারণ দক্ষ কারিগর না হলে প্রতিমাকে সাজ পরানো সম্ভব হয় না। তার মধ্যে অনেককে বাইরে গিয়েও প্রতিমা সাজাতে হয়। ফলে অভাব তো হয়ই।” কারিগরের অভাব মেটাতে কলেজ পড়ুয়া থেকে বাড়ির বধূ সকলকেই হাত লাগাতে হয়। দু’পয়সা বাড়তি রোজগারও হয় তাঁদের। কলেজ পড়ুয়া সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বা সুরজিত্‌ ঘোষ বলেন, “কারিগর মিলছে না বলে আমরা হাত লাগিয়েছি। বাবা-কাকাদের কিছুটা সুবিধা হচ্ছে বৈকি।” সংসারের কাজ সামলে শোলার গয়না গড়ছেন অনিতা দাস, দেবীকা ঘোষেরা। তাঁদের কথায়, “কিছু করার নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি।” অন্য শিল্পীরা বলেন, “মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখি দু’এক দিনের মধ্যে সব কাজ তুলতে পারি কিনা।”
দুর্গা আসার আগে ঘুম উড়ে গিয়েছে তাই এই শোলা শিল্পীদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.