কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে জেল খাটতে হওয়ায় জামিনে বেরিয়েই ফের তাকে ধর্ষণ করেছিল এক যুবক।
প্রায় সাত বছর আগের সেই ঘটনায় ওই যুবকের দশ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। বৃহস্পতিবার কালনা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অবনীকান্ত লাহা এই সাজা ঘোষণা করেন। গণধর্ষণের মামলাটি এখনও কালনা আদালতে বিচারাধীন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২২ অগস্ট পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড়ের জ্বালাহাটি গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরীর বাবা তাঁর মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ করেন। সেই ঘটনায় চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। ওই কিশোরীর বাবা ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি পূর্বস্থলী থানায় ফের অভিযোগ করেন, গণধর্ষণে অন্যতম অভিযুক্ত যুবক পলাশ দাস তাঁর মেয়েকে ফের ধর্ষণ করেছে।
কিশোরীর বাবা পুলিশকে জানান, দু’দিন ধরে তাঁর মেয়ে নিখোঁজ ছিল। সে দিন ভোরে বাড়ির কাছে একটি বেড়ার পাশ থেকে তাঁর বছর তেরোর মেয়েকে কোমরে দড়ি বাঁধা অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার মানুষজন। গ্রামের মানুষজন বিষয়টি পূর্বস্থলী থানায় জানান। পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে।
জ্ঞান ফেরার পরে মেয়েটি পুলিশকে জানায়, পলাশ রাতে তাকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার পরে শাঁখা ও সিঁদুর পরিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ধর্ষণ করে। পরের রাতে বাড়ির কাছাকাছি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া এক জবানবন্দিতে ওই কিশোরী জানায়, রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে শৌচাগারে যাওয়ার সময়ে তাকে ধরে ফেলে পলাশ। ওড়না দিয়ে তার মুখ বেঁধে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যায় সাবমার্সিবল পাম্পের একটি পরিত্যক্ত ঘরে। সেখানেই দড়ি দিয়ে কিশোরীকে বেঁধে নির্যাতন চালায় পলাশ। সেই সময়ে তাকে জেল খাটানোর জন্য রাগের কথাও পলাশ বারবার বলতে থাকে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছিল ওই কিশোরী। সে আরও জানায়, নির্যাতনের পরে সেই রাতে পলাশ তাকে পরিত্যক্ত ঘরটিতে ফেলে রেখে চলে যায়। পরের রাতে ফিরে এসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কাছাকাছি ফেলে রেখে পালায়।
মামলার সরকারি আইনজীবী অরূপ ভট্টাচার্য জানান, এই ঘটনার মাস চারেক আগে কিশোরীটির বাবা পূর্বস্থলী থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ করে জানান, তাঁর মেয়ে পাশের গ্রামে বাউল গানের আসরে গিয়েছিল। রাতে সেখান থেকে ফেরার পথে এলাকারই চার যুবক তাকে ধর্ষণ করে ও অচেতন অবস্থায় এক জনের বাড়ির বারান্দায় ফেলে রেখে পালায়।
অরূপবাবু বলেন, “ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত পলাশ। জামিনে ছাড়া পেয়ে জেল খাটার রাগে ওই কিশোরীকে ফের ধর্ষণ করে সে।” অরূপবাবু জানান, গণধর্ষণের মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছে কালনার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। |