গোপালপুরে ডেরা গাড়ছে দুষ্কৃতীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁকসা |
ভাড়াটে সেজে দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিচ্ছে দুর্গাপুর শহর লাগোয়া কাঁকসার গোপালপুরে। আর তাদের কাছ থেকেই মিলছে আগ্নেয়াস্ত্র। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ অবশ্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গোপালপুর গ্রামে জনসংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি। এত বড় গ্রাম শিল্পাঞ্চলে আর নেই। দুর্গাপুর শহর থেকে দূরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার। গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা। পঞ্চায়েত অফিস, সরকারি স্কুল, বেসরকারি স্কুল, কম্পিউটার কেন্দ্র, বড় বাজার আছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থাও আছে। পুর এলাকায় থাকার প্রায় সমস্ত সুবিধা ভোগ করেন এখানকার বাসিন্দারা। গ্রামের পাশেই বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই, পুর এলাকার অন্যান্য অনুষঙ্গও যথারীতি হাজির হতে শুরু করেছে এই গ্রামে। পুলিশের হিসাবে, সাধারণত গ্রামের থেকে শহরাঞ্চলে অপরাধমূলক কাজকর্মের মাত্রা বেশি। শহরাঞ্চলে দুষ্কর্ম করে অপরাধীরা লাগোয়া গ্রামাঞ্চলে গা ঢাকা দেয়। সেখানে গোপালপুরের আয়তন ও জনসংখ্যা দুষ্কৃতীদের বাড়তি সুবিধা দেয়। সেই কারণেই শিল্পাঞ্চলে অপরাধমূলক কাজকর্ম করার পরে দুষ্কৃতীরা গোপালপুরকে নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বেছে নিচ্ছে। গত কয়েক দিনে গোপালপুর থেকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পরে পুলিশের এমনই ধারণা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিশাল এই গ্রামে বহু বাসিন্দাই বাড়ি ভাড়া দেন। কিন্তু কাকে ভাড়া দিচ্ছেন, তা নানা কারণে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেন না তাঁরা। তার মধ্যে অন্যতম এই আশঙ্কা যে, ভাড়াটেকে বেশি প্রশ্ন করলে সে অন্য কোনও বাড়িতে চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আয় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা। এই সুযোগটাই কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। নিপাট ভালমানুষ সেজে তারা এখানে থাকে। বাড়ির মালিক বা আশপাশের বাসিন্দারা জানতেও পারেন না, ভাড়াটের কাছে সব সময় আগ্নেয়াস্ত্র মজুত আছে। যে কোনও সময় বড় বিপদ ঘটতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে এক রাতে এমনই এক ভাড়াটেকে ব্যাগ হাতে বেরোতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল স্থানীয় যুবকদের। তাঁরা জোর করে ব্যাগ খুলে দেখেন ভিতরে আগ্নেয়াস্ত্র। লোকটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গ্রামের শান্তিরঞ্জন হালদারের বাড়িতে দিন দশেক আগে ভাড়াটে হয়ে আসা এক যুবককে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র-সহ সদ্য গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে হুগলির চুঁচুড়া থানার পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক জন বড় হস্টেলের মতো বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। এক-একটি বাড়িতে ২৫-৩০ জন করে ভাড়া থাকছেন। পাড়ার বাসিন্দারা তাদের কাউকেই চেনেন না। অনেকেরই গতিবিধি সন্দেহজনক বলে দাবি তাঁদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেমনই এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এই এলাকা খুবই শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু এখান থেকে দুষ্কৃতীরা ধরা পড়তে থাকায় আমরা খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। যে কোনও দিন আমরাও তো বিপদে পড়ে যেতে পারি।”
কাঁকসা থানা সূত্রে বলা হচ্ছে, গোপালপুরের মতো বড় এলাকায় কে কার বাড়িতে ভাড়াটে হিসাবে থাকছে, তা আগাম জানা সম্ভব নয়। সেই জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। বাড়ির মালিকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে, কাউকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পরে যতটা সম্ভব তার পরিচয় খতিয়ে দেখা, কিছু জরুরি কাগজপত্র যেমন ভোটার পরিচয়পত্র, স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্রের প্রতিলিপি নেওয়ার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। নতুন ভাড়াটে বাড়িতে এলে সেই সমস্ত প্রমাণপত্রের প্রতিলিপি থানায় জমা দিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “অন্য কোথাও অপরাধ করে এসে গোপালপুরে লুকিয়ে পড়ার ঘটনা সম্প্রতি প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। সেই জন্য বহিরাগতদের উপরে বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহলদারিও।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নীলরতন সরকার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা বাড়ির মালিকদের একাংশের সঙ্গে এই বিষয়ে এক দফা বৈঠক করেছেন। |