আশঙ্কা গভীরতর ওবামার সফর বাতিলে
স্নায়ুযুদ্ধে বিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ দুই দলই। দূর অস্ৎ সমাধানের চাবি। তাই বাজেট পাশের সময় পেরোনোর পর দ্বিতীয় দিনেও তালা মার্কিন প্রশাসনে।
পরিস্থিতি এমনই যে, অনেক আগে ঠিক হয়ে থাকা এশিয়া সফরও এ দিন কাটছাঁট করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেইয়ের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর মালয়েশিয়া ও ফিলিপিন্স যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ইতিমধ্যেই সফর ছাঁটাইয়ের কথা জানানো হয়েছে শেষ দুই দেশকে। এমনকী আগামী শনিবার বাকি সফরের জন্যও ওবামা রওনা দেবেন কি না, প্রশ্ন থাকছে তা নিয়ে।
অনেকে মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে আরও গভীর হল আশঙ্কা। কারণ, এর মানে কি সমাধানসূত্র একেবারেই অধরা মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্টের কাছে? থাকছে প্রশ্ন, মাঝ-অক্টোবরের আগে এই দড়ি টানাটানি মিটবে তো? কারণ তখন আবার মার্কিন কংগ্রেসে আসবে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব। যা পাশ না-হলে, অনেক খরচ চালাতেই পারবে না ওবামার দেশ। মেটাতে পারবে না পুরনো ধারও। সে ক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথম বার সময়মতো বকেয়া না-মেটানোর ‘লজ্জা’য় পড়বে তারা। পৃথিবী জুড়ে ফের তৈরি হবে মন্দার সম্ভাবনা।
সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। বুধবার ওয়াশিংটনে। ছবি: এএফপি।
দেশকে এমন গভীর অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করানোর দায় বিরোধী রিপাবলিকানদের উপর চাপিয়ে মঙ্গলবারও তাদের তুলোধোনা করেছেন ওবামা। অভিযোগ তুলেছেন, মার্কিন অর্থনীতিকে পণবন্দি করার। চাপ বাড়াতে খাস হোয়াইট হাউসের লনে নিয়ে এসেছেন এমন বারো জনকে, যাঁরা এই মুহূর্তে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বাইরে। কিন্তু ‘ওবামা-কেয়ার’ চালু হলে সেই সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ, চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন, পরিষেবায় যে খরচের বিরোধিতা করে রিপাবলিকানরা প্রশাসনকে অচল করে রেখেছে, সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের জন্য তা কতটা জরুরি।
কিন্তু তাতেও জট খোলেনি। তাই এখনও একরাশ উদ্বেগ নিয়ে হোয়াইট হাউস আর মার্কিন কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আমেরিকা। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, বুধবার গভীর রাতে যুযুধান দুই দলকে (ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান) বৈঠকে ডেকেছেন ওবামা। সকলেরই অনুমান সেখানে ফের এক দফা দর কষাকষির।
মার্কিন সরকারের আর্থিক বছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। কিন্তু তার আগে মূলত ওবামা-কেয়ার (কম খরচে প্রায় সবার জন্য চিকিৎসা বিমা) নিয়ে দুই দলের মতানৈক্যে বাজেট পাশ না-হওয়ায় মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে আমেরিকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক প্রশাসনিক কাজকর্ম। গত ১৭ বছরে এই প্রথম। বিল ক্লিন্টনের পর ফের বারাক ওবামার জমানায়।
তার পর এ দিনও একই রকম থেকে গিয়েছে আমেরিকার ছবি। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখতে যাওয়ার ফেরি বন্ধ। দাসপ্রথা তুলে দেওয়া প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের মূর্তি দেখানোর সরকারি গাইড গরহাজির। পৃথিবী বিখ্যাত মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা ছুটিতে। ১৪০টি ন্যাশনাল পার্ক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিফলক, মনুমেন্টের মতো বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে তালা। দরজা বন্ধ বিভিন্ন সরকারি দফতরে। না-চেয়েও অবেতন ছুটি কর্মীদের। সব মিলিয়ে, কোনও দানবের হ্যাঁচকা টানে যেন থমকে দিয়েছে মস্ত গাড়ির চাকা।
বন্ধ স্ট্যাচু অব লিবার্টিও। ঝুলছে তারই নোটিস। বুধবার। ছবি: এএফপি।
আর এই সব দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ। অনেক জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে পোস্টার হাতে পথে নেমেছেন তাঁরা। সবে মন্দা থেকে মাথা তুলতে শুরু করা মার্কিন অর্থনীতিকে নিয়ে এমন ‘ছিনিমিনি খেলা’য় তাঁরা বিরক্ত।
আর এই রাগ যে আগামী দিনে ভোট-বাক্সে পড়তে পারে, তা বিলক্ষণ আঁচ করতে পারছেন রিপাবলিকানরা। যে কারণে এ দিন পার্ক খোলা এবং কিছু জরুরি চিকিৎসা পরিষেবার জন্য টাকা সংস্থানের প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। কিন্তু পত্রপাঠ তা খারিজ করে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাদের বক্তব্য, “হয় ওবামা-কেয়ার সমেত পুরো বাজেট পাশ হোক, নয়তো লড়াই জারি।”
এই তাল ঠোকাঠুকিতেই আপাতত স্তব্ধ প্রশাসন। মার্কিনদের দমবন্ধ অপেক্ষা কাজে ফেরার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.