গেদে সফল। এ বার বনগাঁ।
এ-পার বাংলা ও-পার বাংলা ট্রেন যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বনগাঁ সীমান্ত স্টেশন। এখন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলে গেদে সীমান্ত দিয়ে। ওই ট্রেনে যাত্রী-সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আর গেদের সেই সাফল্যই বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী-সফরের নতুন পথ খুলে দিতে পারে।
রেল প্রশাসন সূত্রের খবর, নতুন পথে আরও একটি মৈত্রী এক্সপ্রেস চালানোর ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এবং নীতিগত সম্মতি জানিয়েছে দু’পক্ষই। বল এখন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোর্টে। যাত্রাপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করে সবুজ সঙ্কেত দেবে তারাই।
এ-পারের সঙ্গে ও-পারের সৌহার্দ্য বিনিময়ে বনগাঁর নাম অবশ্য গেদের আগেই থাকবে। কারণ, বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বাসযাত্রা (শ্যামলী ও সৌহার্দ্য) শুরু হয়েছিল আগেই। একই লক্ষ্যে গেদে সীমান্ত দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল। মূলত দু’পারের বাংলাভাষী মানুষের উৎসাহ আর উদ্দীপনার এই যাত্রায় গোড়ার দিকে ট্রেনে যাত্রী হচ্ছিল ভালই। কিন্তু পরে যাত্রী-সংখ্যাও কমতে শুরু করে।
কেন?
ভারতীয় রেলের খবর, সপ্তাহে এক দিন ঢাকা যাওয়ার পথে গেদে ও দর্শনায় ট্রেন থেকে নেমে পড়তে হয় যাত্রীদের। দু’দেশের ওই দুই সীমান্ত স্টেশনে প্রত্যেক যাত্রীর অভিবাসন সংক্রান্ত নথিপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। রেলের এক মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশি যাত্রীদের অধিকাংশই এ-পারে আসেন চিকিৎসা করাতে। অভিবাসন বিভাগের পরীক্ষার জন্য যাত্রাপথে দু’বার ট্রেন থেকে নেমে দীর্ঘ সময় বসে থাকাটা অসুস্থ মানুষ তো বটেই, সাধারণ যাত্রীদেরও বিরূপ করে তুলেছিল।
তার পরিণামে যাত্রী-সংখ্যাও কমতে শুরু করেছিল। |
প্রথম তিন বছরের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দু’দেশের রেলকর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জটিলতা অনেকটাই কাটিয়ে ফেলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকার যাতায়াতের পথে (দুই ট্রেনেই) অভিবাসন পরীক্ষার কাজ চলন্ত ট্রেনেই সেরে ফেলায় দর্শনা স্টেশনে নামা এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকা থেকে রেহাই পান যাত্রীরা। ভারতের তরফে স্টেশনে নেমে অভিবাসন পরীক্ষার কাজ এখনও চলছে। তবে এ-পারেও বেশ কিছু জটিলতা কাটিয়ে ফেলা গিয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে গত দু’বছরে মৈত্রীর যাত্রী-সংখ্যা বেড়েছে। ট্রেনযাত্রার সময়ও কমেছে অনেকটাই। রেলের তথ্য জানাচ্ছে, প্রথম বছর কলকাতা থেকে ঢাকা যাওয়ার ভারতীয় রেলে যাত্রী-সংখ্যা ছিল ৪৪৭৩। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৯৭৬৪। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যাত্রী-সংখ্যা বেড়ে ৪০৮০ হয়ে গিয়েছে। একই হারে বাংলাদেশ রেলের যাত্রী বেড়েছে গত দু’বছরে।
সাফল্যের এই ছবিটাই বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালানোর ভাবনায় অক্সিজেনের কাজ করেছে। বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে প্রস্তাবিত রুটে যশোহর হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাবে ট্রেন। ভারতীয় রেল বোর্ডের খবর, এই বিষয়ে দু’দেশের রেলকর্তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের মতো এ দেশেও অভিবাসন বিভাগের পরীক্ষার ব্যাপারটা চলন্ত ট্রেনেই সেরে ফেলা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা চালু হলে দর্শনার মতো এখানেও যাত্রীদের প্রায় দু’ঘণ্টা সময় বাঁচবে। তাতে যাত্রী আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও এই ব্যাপারে রেল বোর্ডের কর্তাদের কাছে খোঁজখবর নিয়েছেন। পরিকল্পনাটি কোথায় আটকে আছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। অধীরবাবুর অনুকূল বার্তা পেয়ে নতুন উদ্যমে ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে রেল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মধ্যে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ সীমান্ত দিয়েই অনেক আগে কলকাতা-উত্তরবঙ্গ ও কলকাতা-অসম ট্রেন চলত। তাই যাত্রাপথে বেশির ভাগ এলাকায় লাইন পাতা রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এই পথে ট্রেন চলত। পরে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন শুধু মালগাড়ি চলে। রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর আশাবাদী, “এই রুটে ট্রেন চললে যাত্রী-সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।”
রেলের এক মুখপাত্র জানান, বনগাঁ থেকে যশোহর-খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে আগের মতো উত্তরবঙ্গ ও অসম-রুটে রেল চালানোর ভাবনাও ফের শুরু হবে। |