সিরিয়ার বহু আগেই চার্চিল-ছকে
বিষ গ্যাস, নিশানায় ছিল ভারতও
সামরিক নায়ক থেকে রাষ্ট্রনায়ক, সর্বত্রই কুর্নিশ পেয়েছেন তিনি। মায় সাহিত্যে নোবেলও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী হইচইয়ের মাঝখানে সদ্য প্রকাশিত একটি বই কিন্তু
দাবি করছে, সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আমলেই বিষ গ্যাস ব্যবহার করার পথে হেঁটেছিলেন উইনস্টন চার্চিলের মতো ব্যক্তিত্ব।
রাসায়নিক আক্রমণে সিরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ, এই অভিযোগে দিন কয়েক আগেই যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আমেরিকা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও ব্যক্তিগত ভাবে যুদ্ধ ঘোষণারই পক্ষপাতী ছিলেন। পার্লামেন্টে সমর্থন না পেয়ে তাঁকে নিরস্ত হতে হয়। কিন্তু ইতিহাসবিদ গিলস মিলটন দেখাচ্ছেন, অন্য দেশে বিষগ্যাসের হানা নিয়ে যাদের এত মাথাব্যথা, এক কালে তারাই ছিল এই বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরির আঁতুড়ঘর। নতুন বই লিখতে গিয়ে এই তথ্য হাতে এসেছে মিলটনের। বইয়ের নাম, ‘রাশিয়ান রুলে’।
তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে। উইনস্টন চার্চিল সে সময় প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেননি ঠিকই, কিন্তু কাঁধে চেপেছে গুরুদায়িত্ব। যুদ্ধ দফতরের মন্ত্রী তিনি। পোশাকি নাম, সেক্রেটরি অব স্টেট ফর ওয়ার। মিত্রপক্ষের বিশাল বাহিনী সামলানোর ঝক্কি তো কম নয়। কোনও রকম বেয়াদবি বরদাস্ত করতেন না চার্চিল। যেখানেই বিদ্রোহের আগুন, সেখানেই এক ধাক্কায় সব সাবাড় করে ফেলো এই ছিল তাঁর নীতি। আর সে কাজে বন্দুক বা কামান নয়, নিঃশব্দ ঘাতকই ছিল তাঁর পছন্দের তালিকায় পয়লা নম্বরে। যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাগুলিতে যত জনের প্রাণ যায়, তার চেয়ে অনেক কম লোক যন্ত্রণা না পেয়ে মারা যাবে নিজের ইচ্ছের সপক্ষে যুক্তিও সাজিয়েছিলেন তিনি।
মিলটনের দাবি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে উইল্টশায়ারের পোর্টন ল্যাবরেটরিতে এক মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। জুৎসই এক সাঙ্কেতিক নামও রাখা হয়েছিল তার ‘এম ডিভাইস’। দেখতে একটা শেলের মতো। ভেতরে কৌটোর মধ্যে পুরে রাখা তীব্র বিষগ্যাস। গ্যাসের প্রবল বিষক্রিয়ার মতোই রাসায়নিক নামটাও বেশ খটমট, ডাই-ফিনাইলঅ্যামাইনক্লোরোআরসাইন। যাঁর উপর এই অস্ত্র বানানোর ভার ছিল, তিনি নির্দ্বিধায় জানিয়েছিলেন এমন অস্ত্র আগে কেউ কখনও বানায়নি। এক বার এই গ্যাস নাকে ঢুকলেই শুরু হবে বমি। কাশতে কাশতে রক্ত উঠে আসবে মুখ দিয়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই নেতিয়ে পড়বে অবসন্ন শরীর।
কাদের জন্য এই বিষগ্যাসের কথা ভেবেছিলেন চার্চিল? তাঁর নিশানায় ছিল ভারত ও রাশিয়ার বিদ্রোহীরা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া মিত্রপক্ষে নাম লিখিয়েছিল। কিন্তু বলশেভিকদের দাপটে জারের আসন তখন রীতিমতো টলোমলো। বিদ্রোহী লাল সেনাদের গ্যাস দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন চার্চিল। ভারতেও তৎকালীন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বিদ্রোহী উপজাতিদের বিষ ধোঁয়ায় ঢেকে মেরে ফেলাই উচিত বলে বিশ্বাস করতেন তিনি। ইন্ডিয়া অফিসের এক গোপন নথিতে তাই কলমের এক আঁচড়ে লিখেছিলেন, ‘লেটস গ্যাস দেম।’
মারণাস্ত্র প্রয়োগের এই সিদ্ধান্তে সে সময় যুদ্ধমন্ত্রীর পাশে অবশ্য দাঁড়ায়নি ব্রিটিশ সরকার। তবে তাতে বিশেষ কিছু এসেও যায়নি চার্চিলের। ১৯১৮-এর অগস্টে পঞ্চাশ হাজার এম ডিভাইস বিশেষ বিমানে তুলে তিনি পাঠিয়ে দেন বলশেভিক ঘাঁটি উত্তর রাশিয়ার কিছু গ্রামে। ঐতিহাসিক মিলটনের দাবি, ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই তথ্য তাঁর হাতে আসে জাতীয় সংগ্রহশালায়। রাশিয়ায় ধ্বংসলীলা স্বচক্ষে দেখতে এক বিজ্ঞানীকেও সঙ্গে পাঠিয়েছিল ব্রিটেন। তাঁরই লেখা এক নথি খুঁজে পান মিলটন। তবে যে ভয়ঙ্কর প্রভাবের কথা চার্চিলের কল্পনায় ছিল, বাস্তবে ততটা মোটেই হয়নি। শরতে রাশিয়ার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে।
হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বদলে যায় নির্দেশ। হুকুম আসে, বন্ধ করা হোক অভিযান। এম ডিভাইসে ঠাসা বিমান দেশে নিয়ে গেলে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে না তো? আতঙ্কে তখন দিশাহারা ব্রিটিশ সেনারা। শেষমেশ শ্বেত সাগরের জলে বাকি অস্ত্র ফেলে পালিয়ে বাঁচে তারা।
চার্চিলের যাবতীয় পরিকল্পনায় জল ঢেলেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.