দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছে আমেরিকা। সঙ্গে তামাম বিশ্বও। কারণ, ভারতীয় সময় অনুযায়ী গভীর রাত পর্যন্ত ‘ঝগড়া’ মেটেনি আমেরিকার সরকার ও বিরোধী পক্ষের। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেও তা না-মিটলে, সরকারি তহবিল থেকে আর টাকা খরচের উপায় থাকবে না মার্কিন প্রশাসনের। ফলে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক প্রশাসনিক কাজকর্ম। অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবেতন ছুটিতে যেতে বাধ্য হবেন প্রায় ৮ লক্ষ সরকারি কর্মচারী। দরজা বন্ধ থাকবে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক এসইসি-রও। চালু থাকবে সামরিক বাহিনী, সামাজিক সুরক্ষার মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবা।
টাকা খরচে অনুমোদনের অভাবে সরকারি কাজকর্মে তালা পড়ে যাওয়ার নিদর্শন অবশ্য মার্কিন মুলুকে ভুরিভুরি। ১৯৭৬ সালের পর থেকে এমনটা ঘটেছে ১৭ বার। তবে গত ১৭ বছরে এ রকম আর ঘটেনি। শেষ বার এমন ঘটেছিল বিল ক্লিন্টনের জমানায়। ১৯৯৫ সালে টানা তিন সপ্তাহ তালা পড়ে গিয়েছিল সরকারি কাজকর্মে।
এ বার আমেরিকার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে মন কষাকষির প্রধান কারণ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত আইন। যা ‘ওবামা-কেয়ার’ নামে পরিচিত। মার্কিন মুলুকে কম খরচে প্রায় সবাইকে চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় আনতে এই বিল পেশের জন্য সেই ২০০৮ সাল থেকেই জোরালো সওয়াল করে আসছেন ওবামা। ২০১০ সালের ২৩ মার্চ ওই বিল আইনে পরিণতও হয়েছে। চলতি মাস থেকে তার একটা বড় অংশ সত্যি সত্যিই কার্যকর হওয়ার কথা।
কিন্তু এখানেই বেঁকে বসেছে বিরোধী রিপাবলিকানরা। গোড়া থেকেই তারা এই আইনের বিরোধী। তাদের যুক্তি, এটি আসলে করদাতাদের অর্থের বিপুল অপচয়। সেই সঙ্গে বেসরকারি স্বাস্থ্য বিমার সর্বনাশও। এই যুক্তিতে ভর করেই মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি সভায় (হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ) ওবামা-কেয়ারকে আপাতত এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে সেখানে সংখ্যাগুরু রিপাবলিকানরা। জানিয়ে দিয়েছে, একমাত্র তবেই সরকারি খরচপত্রের বিল পাশ করবে তারা। কিন্তু এই প্রস্তাব পত্রপাঠ ফিরিয়ে দিয়েছে অপর কক্ষে (সেনেট) সংখ্যায় ভারী ডেমোক্র্যাটরা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দল স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোনও ভাবেই ওবামা-কেয়ারকে ‘বলি দিয়ে’ সরকারি খরচের বিল পাশে এগোতে চায় না তারা। আর পুরো বিষয়টি আটকে রয়েছে ঠিক এখানেই। যদি মার্কিন সময় অনুযায়ী সোমবার এই জট খোলে, তো ভাল। নইলে খরচের টাকার অভাবে ১৭ বছর পর ফের তালা পড়ে যাবে মার্কিন প্রশাসনের এক বড় অংশে।
মন্দার ছায়া সরিয়ে ধীরে ধীরে মাথা তুলতে শুরু করা মার্কিন অর্থনীতির পক্ষে এ ভাবে প্রশাসন স্তব্ধ হয়ে যাওয়া যে বিপুল ক্ষতির, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের তার থেকেও বেশি ভাবাচ্ছে মাঝ-অক্টোবরের কথা। কারণ, তখনই আসতে চলেছে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব।
বর্তমানে ১৬.৭ লক্ষ কোটি ডলার পর্যন্ত ধার করতে পারে আমেরিকা। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে এ মাসে তা ফের না-বাড়ালে, অনেক খরচই চালাতে পারবে না ওবামার দেশ। সে ক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথম বার সময়মতো বকেয়া না-মেটানোর ‘লজ্জা’য় পড়বে তারা। খরচ মেটানোর মতো অর্থ থাকবে না ট্রেজারির।
তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে তার আগে দুই দল নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে ফেলবে বলেই মনে করছেন সকলে। তবে তার শুরুটা সোমবারই হয় কি না, সে দিকেই এখন সাগ্রহে তাকিয়ে তাঁরা। |