বাগডোগরায় শুরু রাতের উড়ান, আপ্লুত যাত্রীরা
বিস্তর জট কাটিয়ে পুজোর মুখে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে রাতের উড়ান চালু হল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে পরীক্ষামূলক ভাবে দমদম থেকে একটি বোয়িং ৭৩৭ বিমান এসে নামে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। তাতে ছিলেন ৪৮ জন যাত্রী। সেই বিমানটিই কিছু ক্ষণ পরে বাগডোগরা থেকে উড়ে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে রাত ৯টা ৫ মিনিটে কলকাতা পৌঁছেছে। এই প্রথম উড়ানের পাইলট ছিলেন আদিত্য শর্মা।
এমন ‘পুজো উপহার’ পেয়ে আবেগে ভেসে গেল বাগডোগরা। ট্যাক্সিচালক থেকে ট্যুর অপারেটর, রাজ্যের মন্ত্রী থেকে বিরোধী দলের নেতা, প্রায় সকলেই দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত। নানা জটিলতা কাটিয়ে রাতে বাণিজ্যিক বিমান ওঠানো-নামানোর ব্যবস্থা করতে পেরে গোটা বিমানবন্দরকে আলোর মালায় মুড়ে দিয়ে যেন অকাল দীপাবলি পালিত হল।
বাগডোগরায় শুরু হল রাতের উড়ান। প্রথম বিমানটি নামার পর
বেরিয়ে আসছেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
রাতে উড়ান চালু হল বাগডোগরায়
বিস্তারিত...
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও আবেগের সুর। তাই দমদম থেকে বাগডোগরার উদ্দেশে স্পাইস জেট-এর উড়ান রওনা হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “যাঁদের জন্য বাগডোগরা থেকে রাতের উড়ান চালু হল তাঁদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি, বাগডোগরা থেকে রাতে বিমান চলাচল স্থায়ী হবে।” রাতের প্রথম উড়ানে কলকাতা থেকে সওয়ার হয়েছিলেন সস্ত্রীক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। বাগডোগরায় নামার পরে গৌতমবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের মানুষ কতটা খুশি, তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। এক অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নিরলস চেষ্টায় এটা সম্ভব হল। আমরা আর বঞ্চিত ও অবহেলিত নই।”
ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের সময়ে প্রতি বারই বাগডোগরায় পৌঁছে রাতের উড়ান চালু করাতে সমস্যা কোথায়, তা নিয়ে বৈঠক করেছেন। এক এক করে নানা জট কাটানোর জন্য পদক্ষেপ করেছেন। কেন্দ্রের উপরে নিয়মিত চাপও বজায় রেখেছেন। বিমানবন্দরটি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। রাতে বিমান চলাচলের অনুমতি সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর পরে পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া হয়। প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে রাজ্য সরকার যোগাযোগও করে। শেষ পর্যন্ত স্পাইস জেট কর্তৃপক্ষ পরীক্ষামূলক ভাবে পুজোর মুখে রাতের উড়ান চালু করতে সম্মত হন।
স্পাইস জেটের বাগডোগরার স্টেশন ম্যানেজার সৌরভ থাপা বলেন, “আপাতত রোজ দমদম থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে বিমান ছেড়ে বাগডোগরায় পৌঁছবে ৭টায়। সাড়ে ৭টায় বিমানটি বাগডোগরা ছেড়ে কলকাতায় পৌঁছবে ৮টা ১০ মিনিটে। সেখান থেকে বেঙ্গালুরু যাবে। আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ভাবে নিয়মিত বিমান চালানো হবে।” এর পরে সব দিক বিবেচনা করে স্থায়ী ভাবে ওই উড়ান চালু রাখার কথা ভাববে স্পাইস জেট।এদিন সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ বাগডোগরা বিমানবন্দরে ঘোষণা হয়, ফ্লাইট নম্বর এসজি ৯৪৪ কিছুক্ষণের মধ্যেই বাগডোগরায় নামছে...। সঙ্গে সঙ্গেই বাগডোগরা বিমানবন্দর হাততালিতে যেন ভেসে যায়। কিছুক্ষণ পরে দমদম থেকে আসা উড়ান রানওয়ের মাটি ছুঁতেই উল্লাসে ভেসে গেল চারদিক। তখন আলোর মালায় সেজে ওঠায় বাগডোগরা বিমানবন্দরের সামনে অত্যুৎসাহীদের ভিড়ে পা রাখা দায়। এ দিন বিকেল থেকেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিশেষত, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত রাজ বসু, সম্রাট সান্যাল, সাধন রায়ের মতো ব্যবসায়ীরা তো প্রায় উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। ট্যুর অপারেটরদের কথায়, “আমরা ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমীক্ষা করেছি। তাতে রাতের উড়ান সমাদৃত হবে বলে স্পষ্ট হয়েছে। সেই রিপোর্ট সব ক’টি বিমান সংস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আসা করি, আগামী দিনে উড়ানের সংখ্যা বাড়বে।”
বাগডোগরায় নেমে ওই দৃশ্য দেখে অভিভূত স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা নেল ওয়ালও। উৎসবের কারণ জানার পরে তিনি বললেন, “রাতের উড়ান সব সময়েই সময় বাঁচায়। এতে পর্যটকেরা শুধু নন, সকলেরই সুবিধা হবে।” অদূরে দাঁড়ানো বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিককে তখন অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত ট্যুর অপারেটররা। কল্যাণকিশোরবাবু বললেন, “বহুদিন ধরে রাতের উড়ান চালুর চেষ্টা হচ্ছিল। সরকরি তরফে ও কয়েক জনের আন্তরিক চেষ্টায় এটা ফলপ্রসূ হয়েছে।” তিনি জানান, রাতে নামার পরে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকে তাঁরা নজর রেখেছেন।
সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “দশ বছর আগে আমি রাতের উড়ান চালু করানোর জন্য নানা মহলে যোগাযোগ শুরু করেছিলাম। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থাকার সময়েই বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে অনুমোদন করেছিলেন। তবে বায়ুসেনার একাংশের সহযোগিতা সে সময়ে মেলেনি। এখন রাত্রে বিমান পরিষেবা চালু হওয়ায় ব্যবসায়ী, বাসিন্দা সকলেই উপকৃত হবেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.