খুনের মামলায় অধীরের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
ফের খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়লেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দু’দিন পরে ১৫ মে বহরমপুরে কামাল শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়। সেই ঘটনার দু’বছর চার মাস পরে গত বুধবার পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। তাতেই রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুর নাম রয়েছে। চার্জশিটে মন্ত্রীকে ‘পলাতক’ বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।
অধীরবাবু সহ মোট ১০ জনের নাম রয়েছে ওই চার্জশিটে। আরও এক অভিযুক্ত লোচন বাগদি ওরফে হাজরাও ‘পলাতক’। বাকি ৮ জন জেল হেফাজতে। তার মধ্যে চার জন জামিন পেলেও অন্য মামলায় জেলেই রয়েছেন। সকলের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ১২০বি (ষড়যন্ত্র), ৩৪ (এক সঙ্গে অনেকে মিলে অপরাধমূলক কাজে জড়ানো) ধারায় অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বেআইনি অস্ত্র রাখা ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগও। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার চার্জশিট জমা দেওয়ার সঙ্গে ‘পলাতক’ অধীরবাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন বিচারক মঞ্জুর করেছেন মুর্শিদাবাদের সিজেএম অলি বিশ্বাস। যদি ১৫ দিনের মধ্যে অধীরবাবু আত্মসমর্পণ না করেন, তা হলে পুলিশ তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করার আবেদন করতে পারে।
অধীরবাবু এ দিন দিল্লিতে বলেন, “আমি বিন্দুমাত্র বিস্মিত বা বিচলিত নই। বরং জানতাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এ ধরনের কিছু ঘটাবে। অতীতে সিপিএম জমানার মতোই তৃণমূলও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ। নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে যে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে, তা রাজ্যের মানুষ জানেন।” মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। এই সময়ের মধ্যে বারবার অধীরবাবু বহরমপুরে এসেছিলেন। তবু কেন তাঁকে ‘পলাতক’ বলা হল, সে প্রসঙ্গেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তাঁর কথায়, “এটা সম্পূর্ণই আদালতের বিষয়। কোনও মন্তব্য করব না।”

খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
তার প্রতিবাদে শুক্রবার বহরমপুরে কংগ্রেস কর্মীদের মিছিল। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
কামাল শেখ এক সময়ে কংগ্রেস কর্মী ছিলেন। পরে সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। সুব্রতবাবু বলেন, “কামাল ওই ভোটে দলের হয়ে খুবই পরিশ্রম করেছিলেন। তাঁর খুনের কথা শুনে সে দিন আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই।” অধীরবাবুর দাবি, তৃণমূল কোনও ভাবেই মুর্শিদাবাদে তল পাচ্ছে না বলেই পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাঁকে সমস্যায় ফেলতে চাইছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আমরা চিটফান্ড কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী তা মানেননি। উল্টে এখন কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা সাজিয়ে বিপাকে ফেলতে চাইছেন।” তিনি জানিয়েছেন, অধীরবাবুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আজ, শনিবার রাজ্যের সমস্ত থানায় বিক্ষোভ দেখাবে প্রদেশ কংগ্রেস। যুব কংগ্রেস আজ কলকাতায় কংগ্রেস দফতর বিধানভবন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টি বিচারাধীন। শুধু বলব, আইন আইনের পথে চলবে।”
কামাল খুনের দিন সন্ধ্যায় অধীরবাবু জানিয়েছিলেন, কামালের পুরো পরিবারের সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, এই ঘটনায় তিনি হতবাক। কামালকে খুন করা হয় তাঁর কিশোরী কন্যা করিশ্মা জামানের সামনেই। তিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে খাগড়া বাজারে সেই দিন কেনাকেটা করতে গিয়েছিলেন কামাল। করিশ্মাকে নিজের মোটরবাইকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শহরের গোরাবাজার জমিদারি এলাকায় বাড়ি ফিরছিলেন। মোহনের মোড়ে পৌঁছতেই দুষ্কৃতীরা জনবহূল রাস্তাতেই কামালকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি সকেট বোমা ছুড়তে থাকে। রেজাউল করিমের মূর্তির ঠিক সামনে মোটরবাইক থেকে পড়ে যান তিনি। তারপরে ছুটে পালানোর চেষ্টা করেও পারেননি। দুষ্কৃতীরা তখন খুব কাছ থেকে তাঁকে ছ’টি গুলি করে। করিশ্মাও বোমা ও গুলিতে গুরুতর জখম হয়। নওয়াজ শরিফ নামে এক কিশোরেরও পায়ে গুলি লাগে। পুলিশ এই ঘটনায় তারপরে মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কারও অবশ্য সে ভাবে কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
অধীরবাবু ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর রেল প্রতিমন্ত্রী হন। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক বার খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে সে সব মামলায় তিনি বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.