নিন্দা কোর্টের, শ্রীনি তবু কাঁটার মুকুটেও রাজি
দিত্যপ্রতাপ বর্মাকে গত ক’দিন ধরেই তাঁর বন্ধুরা বলছেন, “বিগ বসের জন্য তুই হলি একেবারে আদর্শ ক্যান্ডিডেট।” বন্ধুদের বিশ্বাস, পরের বার বিগ বস হাউসে যদি আদিত্যকে দেখা যায়, তা হলে তিনি মুহূর্তে হিট হতে বাধ্য। প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সঙ্গে তাঁর ততটাই মিল, যতটা বিস্কুট আর পাঁঠার মাংসে। শ্রীনি ক্রিকেটবিশ্বে বহু বছর ধরে বহু আলোচিত নাম। আদিত্য যতই বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব হোন না কেন, মাত্র ক’দিন আগেও গুগল তাঁর অস্তিত্ব স্বীকার করার কোনও কারণ দেখেনি। আদিত্যর মোট যত শার্ট-প্যান্ট আছে, শ্রীনির শুধু সাফারি স্যুটের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। শোনা যায়, শ্রীনির আছে ছত্রিশটা বিদেশি গাড়ি। আদিত্য সেখানে নিজেই বড়াই করে বলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র আবেদনকারী, যিনি কি না অটোয় করে সর্বোচ্চ বিচারালয়ে নামেন! ইশপের গল্পে এক জন যদি খরগোশ হন, এক জন মার্কামারা কচ্ছপ।
আর ইশপের গল্পের পরিণতি অনুযায়ী কচ্ছপ কোণঠাসা করে ফেলেছে খরগোশকে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক এবং জে এস কেহর-এর সামনে শ্রীনি যেমন অপদস্থ হয়েছেন, তার নমুনা ইতিপূর্ব কোনও বোর্ড প্রেসিডেন্টের ভাগ্যের সঙ্গে যায় না। একটা সময় তো বিচারপতিরা বলে ওঠেন, “জামাই যদি চার্জশিট পেয়ে থাকে, তা হলে শ্বশুর হয়ে উনি ক্ষমতায় থাকবেন কেন?” এর পর শ্রীনির উদ্দেশে বলেন, “আবার এই পদে নির্বাচিত হতে আপনার এত কী উৎসাহ?” আদালতকক্ষে যাঁরা হাজির ছিলেন তাঁদের অনেকের মনে হয়েছে, বিচারপতিরা ঘুরিয়ে বলেছেন যে, কীসের এত আগ্রহ আপনার যে, বোর্ড প্রধান হতেই হবে?
ভারতীয় বোর্ডের সূচনা ১৯২৮-এ। তার পঁচাশি বছরের ইতিহাসে কোনও বোর্ড প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ আদালতের কাছে এ রকম নির্মম সমালোচনা কখনও শোনেননি, যা এ দিন শ্রীনিকে শুনতে হল। বিচারপতিরা পরিষ্কার বলে দেন, “আপনি রোববারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই পারেন। কিন্তু যতক্ষণ না আপনাকে ঘিরে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, তত দিন কোনও ক্ষমতা ভোগ করতে পারবেন না।” অর্থাৎ, কোনও কাগজে সই করতে পারবেন না। কোনও বৈঠকে সরকারি ভাবে যেতে পারবেন না। কোনও সভা চেয়ার করতে পারবেন না। এক কথায় বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে হবে। বিচারপতিরা আরও জানিয়ে দেন, আগামী সোমবার তাঁরা ফের শুনানি শুনবেন। বিচারপতিদের বলা কথায় বারবার পরিষ্কার হয় যে, আদালত-বিরোধী কোনও কাজ নির্বাচনে হলে ফের সেটা বাতিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকছে। অর্থাৎ রোববার যদি বা শ্রীনি নির্বাচিত হন, সোমবার আদালতকক্ষে সেটা ধুয়েমুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতেই পারে।
রাত্তিরে চেন্নাইয়ে ফোন করে অবশ্য শোনা গেল, ডিভিশন বেঞ্চের কঠিন সব পর্যবেক্ষণে আমল দিচ্ছে না শ্রীনির বোর্ড। বড় ব্যাটসম্যানরা যেমন গায়ে বল লাগলে বোলারকে মনস্তাত্ত্বিক সুবিধে দেবেন না বলে চোটের জায়গায় হাত দেন না, শ্রীনি যেন অবিকল সেই ভঙ্গি ধার করেছেন। রাত্তিরে এক পাশে জগমোহন ডালমিয়া, এক পাশে অনুরাগ ঠাকুর-কে (একান্ত জেটলি-অনুগামী) নিয়ে মৌজ করে পাইপ খেতে খেতে শ্রীনি
সদস্যদের বলেছেন, “ব্যাপারটা ফুল কন্ট্রোলে আছে। আদালত আজকে হরিশ সালভের কথা শুনে নানান পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। পরের দিন তো আমার কৌঁসুলির কথা শুনবে। তখন আবার পুরো ব্যাপারটা ঘুরে যাবে।” শ্রীনির এমন নট-নড়নচড়ন হাবভাব দেখে তাঁর অনুগামীরাই অনেকে আশ্চর্য হয়ে যান। শ্রীনি তখন বলছেন, “পূর্বাঞ্চলকে সব দিয়ে দাও। সব কমিটি-টমিটি দাও।” উপস্থিত সিএবি কর্তারা তখন ভাবতে থাকেন যাক, সচিনের দু’শোতম তা হলে ইডেনেই আসছে। এই সময় অবাক হয়ে যাওয়া কেউ কেউ শ্রীনিকে থামিয়ে বলেই ফেলেন, “স্যার কিন্তু আদালত তো আপনাকে কাজ করতে দেবে না।” শ্রীনি তখন বলেন, “কোনও সমস্যা নেই। আমার টেকনিক্যাল অসুবিধেটা সোমবারই দূর হয়ে যেতে পারে। আর যদি না-ও হয়, আমার প্রেসিডেন্ট হতে কোনও অসুবিধে নেই। এটা কী রকম জানো তো? আমি মনে করো প্রধানমন্ত্রী। আমাকে আদালত বলেছে, কিছু দিন পর্যন্ত আপনি নিজে কিছু দেখবেন না। তো আমার তো কাজ দেখাশোনার জন্য মন্ত্রিসভা আছে। তারাই দেখবে।” ইঙ্গিত কি জগমোহন ডালমিয়া? আবার অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট? এঁরা অবাক হয়ে ভাবতে থাকেন।
আসলে শ্রীনির পরিষ্কার মনোভাব হল, চেয়ারে বসতেই হবে। কাঁটার মুকুটই সই, মুকুট তো! দাক্ষিণাত্যের এক ক্রিকেট কর্তা রাত্তিরে বললেন, “সুপ্রিম কোর্ট তো সরাসরি বারণ করেনি। কাজেই উনিই প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। তা ছাড়া ওঁর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই।”
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টে। প্রত্যাহার করা যাবে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। শ্রীনি-বিরোধী কেউ দাঁড়াবেন, এখনও খোঁজ নেই। যদিও ভোটারদের দলে টানার আপ্রাণ চেষ্টা গভীর রাত অবধি চলছে। শ্রীনির সবচেয়ে বড় শক্তি হল, দাক্ষিণাত্য থেকে ছ’জনের মধ্যে দু’জনকে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করতে হবে। সেই দ্বিতীয় জনের খোঁজ এখনও শশাঙ্ক মনোহর গোষ্ঠীর কাছে নেই।
কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্স ঘিরে রাহুল গাঁধীর মহাবিতর্কিত বিবৃতি আর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নয়া নীতি জাতীয় পর্যায়ে এই দু’টো ঘটনা এ দিন এমন বিস্ফোরণ তুলে দিয়েছে যে, আদালতকক্ষে শ্রীনি-হেনস্থা যেন কিছুটা চাপাই পড়ে গেল। যদিও অনেকের মনে হচ্ছে গোটা উইকএন্ড জুড়ে নাটক চলবে। এমনকী সোমবারও। রায় বেরোনোর পরপর শোনা যাচ্ছিল দক্ষিণাঞ্চল থেকে শিবলাল যাদব প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাঁড়াতে পারেন। শিবলাল অবশ্য জানিয়ে দেন, তাঁদের নেতা শ্রীনিই। এমনকী অনিল কুম্বলেও শ্রীনিকেই নেতা মেনেছেন।
প্রশ্ন হল, শ্রীনি যদি সত্যিই তৃতীয় বার মনোনয়ন চান, আদালত সেটাকে কী ভাবে নেবে? বিরোধী-গোষ্ঠীর কেউ কেউ বলছেন, “আজকের পরেও ও যদি দাঁড়াতে চায়, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে চরম হেনস্থা ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে।” তাঁদের ধারণা, এমনকী নির্বাচন বাতিলও হয়ে যেতে পারে। সেটাই সবচেয়ে ভাল হবে। শ্রীনি একেবারে মুছে যাবেন।
যাঁরা এতটা নিশ্চিত নন, তাঁরাও আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট থাকতে চাওয়ার জন্য শ্রীনির মরণপণ মনোভাব দেখে। যাঁরা দেখছেন, শ্রীনি চক্ষুলজ্জার তো কোনও পরোয়াই করছেন না। উল্টে যে কোনও স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দিচ্ছেন আদালতকক্ষে।
প্রথমে তিনি বলেছিলেন, “গুরুনাথ মইয়াপ্পন নিছকই এক জন ক্রিকেটভক্ত।” সেটা ছিল শ্রীনি ওয়ান।
শ্রীনি টু বললেন, “গুরুনাথ কোথায় কী করেছে আমি জানি না।”
শ্রীনি থ্রি প্রেস বিবৃতি দিলেন, “আমি তো কোনও অপরাধ করিনি। আমি নির্বাচনে দাঁড়াব না কেন?”
শ্রীনি ফোর আবির্ভূত হলেন ক’দিনের মধ্যেই। বললেন, “গুরুনাথকে ভাল করে চিনি না।”
শ্রীনি ফাইভ হাজির হয়েছিলেন শুক্রবারের আদালতে। যখন গুরুনাথ ঘিরে বিচারপতিদের কঠিন মন্তব্যের জবাবে শ্রীনিবাসনের কৌঁসুলি ফলি নরিম্যান বলে ওঠেন, “স্যার, উনি জানতেনই না যে ওঁর মেয়ে গুরুনাথের সঙ্গে প্রেম করছে।” বিচারপতিরা তখন বলে ওঠেন, “কী বলছেন?” নরিম্যান বলেন, “ইয়েস স্যার। খানিকটা ওঁর অমতেই গুরুনাথের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাই গুরুনাথকে কী করে ভাল লাগল, এর উত্তর ওঁর মেয়েই দিতে পারবে।” আদালত জুড়ে তখন হাসির রোল ওঠে।
রাতে আদিত্য বর্মা বলছিলেন, “বিহার অনুমোদন পাবে কি না জানি না। তবে জামাই নিয়ে শ্রীনির যা হেনস্থা আজ দেখলাম, তাতে নিজের এত দিনকার দুঃখ খানিকটা ভুলে গিয়েছি!”

• আপনি রবিবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই পারেন। কিন্তু যতক্ষণ না আপনাকে
ঘিরে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, তত দিন কোনও ক্ষমতা ভোগ করতে পারবেন না।
• জামাই যদি চার্জশিট পেয়ে থাকে, তা হলে শ্বশুর হয়ে উনি ক্ষমতায় থাকবেন কেন?
• আবার এই পদে নির্বাচিত হতে আপনার এত কী উৎসাহ?
সুপ্রিম কোর্ট




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.