নিউ টাউন
গেটে সুরক্ষার বহর, তবু দিনেদুপুরেই ডাকাতি আবাসনে
কেই বলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার মাস আগেই পাল্টানো হয়েছিল নিরাপত্তা সংস্থা। তাতে লাভ তো হলই না, উল্টে খেসারত দিতে হল আবাসিকদেরই। শুক্রবার ভরদুপুরে এক দল দুষ্কৃতী আবাসনের বারো তলার একটি ফ্ল্যাটে নিজেদের ক্যুরিয়র সার্ভিসের কর্মীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে অনায়াসেই চম্পট দিল। কেউ টেরই পেল না। এই ঘটনায় যথারীতি প্রশ্নের মুখে নতুন নিরাপত্তা সংস্থা তথা আবাসনের বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ টাউনের এক অভিজাত আবাসনে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। আবাসনটি জুড়ে সব সময়েই ২৪ জন নিরাপত্তারক্ষীর নজরদারি। এলাকাটিও যথেষ্ট জনবহুল। কাছেই নিউ টাউন কমিশনারেটের এসিপি-র অফিস ও নিউ টাউন বাসস্ট্যান্ড। রয়েছে ট্রাফিক পুলিশও। তা সত্ত্বেও শুক্রবার নিউ টাউনের ইস্টার্ন হাই কমপ্লেক্সের একটি ফ্ল্যাটে ক্যুরিয়র সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয়ে ঢুকে গৃহকর্ত্রীর হাত-মুখ বেঁধে দশ ভরি গয়না, নগদ কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে পালাল তিন দুষ্কৃতী ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধাননগর কমিশনারেট তৈরির পরে পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশকর্তারা দাবি করেন। তবুও চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি আটকানো যাচ্ছে না।
পুলিশ জানায়, আবাসনের চার নম্বর টাওয়ারের ১২ তলায় স্ত্রী কেকা ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত বাগচী। এ দিন দুপুরে ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন কেকাদেবী। তিনি পুলিশকে জানান, দুপুর ১টা নাগাদ ক্যুরিয়র সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয়ে এক ব্যক্তি বেল বাজালে তিনি দরজা খোলেন। হঠাৎ সে কেকাদেবীর মুখ চেপে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ভিতরে নিয়ে যায়। ঢুকে পড়ে আরও দু’জন। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। কেকাদেবীর মুখ-হাত বেঁধে আধ ঘণ্টার মধ্যে আলমারি থেকে ২০ হাজার টাকা, দশ ভরি গয়না, কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। পরে কেকাদেবী কোনও ভাবে বাঁধন খুলে স্বামীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন।
বাসিন্দারা জানান, ওই আবাসনে ৯টি টাওয়ার। পাঁচ শতাধিক ফ্ল্যাটে দু’হাজারেরও বেশি লোকের বাস। আবাসনে মোট চারটি গেট আছে। তার মধ্যে একটি গাড়ি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হয়। বাকি গেটগুলির প্রতিটিতে চার জন করে রক্ষী থাকেন। প্রতি টাওয়ারের নীচে সব সময়েই থাকেন এক জন রক্ষী। আবাসনে ঢুকতে গেলে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর নথিভুক্ত করতে হয়। তবে পুলিশ জেনেছে, ওই দিন ক্যুরিয়র সংস্থার কর্মী বলে কেউ খাতায় নাম নথিভুক্ত করেননি। এমনকী, চার নম্বর টাওয়ারের নিরাপত্তারক্ষীর জানাই নেই, কারা ওই সময়ে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল। ইস্টার্ন হাই অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা জানিয়েছেন, কেন নিরাপত্তাকর্মীরা ওই তিন জনের নাম নথিভুক্ত করেননি, সেই নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে। গেটের মুখে সিসিটিভি বসানো হবে। এক আবাসিক অতুল দাস বলেন, “আমরা প্রবল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সবাই কাজে বেরিয়ে যাই। বহু সময়েই বয়স্ক বা মহিলারা একা থাকেন। কী ভরসায় তাঁদের বাড়িতে রেখে বেরোব?”
বিধাননগরের এসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি থাকে। দিনেও থাকে টহলদারি। লাগাতার অপরাধীদের ধরার কাজ চলছে। তবে এত রক্ষী থাকতেও কী ভাবে দুষ্কৃতীরা ঢুকল, খতিয়ে দেখছি। নিরাপত্তারক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি।” সন্তোষবাবু জানান, ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগেই ওই ফ্ল্যাটের পরিচারিকা সেখান থেকে কাজ করে বেরিয়েছিলেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ আরও জেনেছে, আবাসনের মূল গেট বাদে অন্যগুলির উচ্চতা বেশি নয়। সেগুলিতে তালা থাকে। তবে গেটগুলিতে সব সময়ে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না। তা ছাড়া, আবাসনে কাজ চলার জন্য মিস্ত্রি থেকে শুরু করে অনেকে ঢোকেন। সবার নাম-ঠিকানা সব সময়ে লেখা হয় না। সন্তোষবাবু বলেন, “যারা এসেছিল, তাদের উচ্চতা, বয়স ও গায়ের রং কেমন ছিল জানতে পেরেছি। আরও বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। আশা করি, দুষ্কৃতীরা খুব দ্রুত ধরা পড়বে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.