যাঁরা নির্বাচক তাঁরাই পুরস্কারের জন্য নিজেদের নাম লিখেছেন তালিকায়! অভিনব এবং হাস্যকর এই ঘটনা ঘটেছে রাজ্য ক্রীড়া দফতরের সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানের তালিকায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ অক্টোবর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এঁদের হাতেই তুলে দেবেন ‘খেল সম্মান’, ‘বাংলার গৌরব’-এর মতো নানা পুরস্কার। স্মারক ও লক্ষ লক্ষ টাকা।
এ বছরই প্রথম বাংলার ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য কোচ, প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড়দের নানা পুরস্কার দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কাদের তা দেওয়া হবে তা ঠিক করতে নয় জনের একটি কমিটি গড়া হয়। চেয়ারম্যান ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। বৃহস্পতিবার মদনবাবু মহাকরণে যে তালিকা প্রকাশ করেন তাতে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচক কমিটিরই পাঁচ জন--গৌতম সরকার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদেশ বসু, সোমা বিশ্বাস, দিব্যেন্দু বড়ুয়া বিভিন্ন খেতাব পাচ্ছেন! কমিটির সদস্য আখতার আলির ছেলে জিশান আলিও আছেন তালিকায়। সব মিলিয়ে তালিকা বিশাল এবং বিতর্কিত। ক্রীড়াক্ষেত্রে সারা জীবনের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জীবনকৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও লিয়েন্ডার পেজ। এই দু’জনকে নিয়ে মোট ৬০ জন মঞ্চে সম্মানিত হবেন ওই দিন। এঁদের বেশির ভাগই ফুটবলার। যাঁদের অনেককেই দেখা যায় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে অথবা মহাকরণে মন্ত্রীর ঘরে বসে থাকতে।
এ দিন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র ক্রীড়াবিদদের নাম ঘোষণার পাশাপাশি জানান, এ বার ২৩০০-র বেশি নতুন ক্লাবকে দু’লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। ৩০০০ ক্লাব এক লক্ষ টাকা করে পাবে। জঙ্গলমহলের ৪৫০০ ক্লাবকে আগেই ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। মদনবাবু বলেন, ক্রীড়া সম্মান এবং ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া বাবদ ৬৫ কোটি টাকা খরচ হবে। এই অঙ্কটা বাড়তেও পারে। জীবনকৃতি, খেল সম্মান, ক্রীড়াগুরু ও বাংলার গৌরব এই চারটি বিভাগে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজকে দেওয়া হবে মহাগুরু সম্মান। মরণোত্তর পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে কৃশানু দে ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের হাতে।
সম্মান প্রাপকদের তালিকায় এশিয়াডের জোড়া সোনাজয়ী জ্যোতির্ময়ী সিকদারের নাম নেই কেন? ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, “উনি অনেক বড় খেলোয়াড়। অনেক সম্মান পেয়েছেন।” বিতর্কের ভয়ে সরকারি ভাবে ছাপানো কোনও তালিকা সাংবাদিকদের হাতে দেওয়া হয়নি। ক্রীড়ামন্ত্রী মুখে যে নাম বলেন তাতে মহাগুরু সম্মান পাচ্ছেন অমল দত্ত, নইমুদ্দিন, সাবির আলি, সুভাষ ভৌমিক, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব রায়, জিশান আলি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, কুন্তল রায়, মনোরঞ্জন পোড়েলরা। বাংলার গৌরব সম্মান পাচ্ছেন— কেশব দত্ত, সুধীর কর্মকার, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সমরেশ চৌধুরী, গৌতম সরকার, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, অলোক মুখোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, কম্পটন দত্ত, মানস ভট্টাচার্য, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদেশ বসু, রমা সরকার, বিকাশ পাঁজি, দিব্যেন্দু বড়ুয়া, সোমা বিশ্বাস, উৎপল চট্টোপাধ্যায়, ঝুলন গোস্বামী ও শান্তি মল্লিক। খেল সম্মান পাচ্ছেন— ঋদ্ধিমান সাহা, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ তিওয়ারি, মেহতাব হোসেন, সুব্রত পাল, রহিম নবি, পৌলমী ঘটক, মৌমা দাস, আশা রায়, রহমতুল্লা মোল্লা, ভরত ছেত্রী, দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়, মেরি অ্যান গোমস, আলি কামার, শানু দেবনাথ, টুম্পা দেবনাথ-সহ অনেকে।
|