|
|
|
|
কোনও অঙ্ক মেলেনি, শুধু উদ্বেগই প্রাপ্তি শিবরাজের |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • ভোপাল |
ভাঁজ পড়েছে শিবরাজের কপালে।
ভেবেছিলেন রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে নিজের উঠোনে বিজেপির সব বড় বড় নেতাকে এনে সেরার সেরা হয়ে উঠবেন। একই সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীকেও কয়েক কদম পিছনে ফেলে দেবেন। কিন্তু শিবরাজ সিংহ চৌহানের কোনও অঙ্কই যে মিলল না! যেমন সভায় রেকর্ড জমায়েত হলেও সেই ভিড়ই মোদী-মোদী আওয়াজ তুলে এক সময় শিবরাজেরই বক্তৃতা থামিয়ে দিল! এখানেই শেষ নয়। সভায় দাঁড়িয়ে উমা ভারতীর গোঁসা এবং মোদীর ব্যাপারে লালকৃষ্ণ আডবাণী-সুষমা স্বরাজদের নির্লিপ্ত আচরণ জনতার সামনে বিজেপির অন্তর্কলহকে আরও প্রকট করে দিল। পাশাপাশি শিবরাজের কাছে বড় চিন্তার হয়ে দাঁড়াল কংগ্রেস। বিজেপির শিবিরের এই ছন্নছাড়া ছবিটাকেই মূলধন করে মধ্যপ্রদেশে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজছেন রাজ্যে ছত্রভঙ্গ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সব মিলিয়ে বুধবারের মহা-সভার শেষে শিবরাজের হাতে পেনসিল ছাড়া কিছুই দেখছেন না বিজেপি নেতারা। তাঁদের উদ্বেগের কারণও সেটাই।
মহা-সভা শেষে বুধবার রাত থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে। শিবরাজ সিংহের ঘনিষ্ঠ নেতারা ময়নাতদন্তে নেমে দেখছেন, বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা কারও নজর এড়ায়নি। প্রথমত, গত কালের সভার আয়োজনের প্রস্তুতি হচ্ছিল এক বছর ধরে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এটি যখন হল, তখন মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। যে কারণে গত কাল খানিকটা বাধ্য হয়েই শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রী ও মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার আবেদন নিয়ে জনতার দরবারে যাওয়ার কৌশল নিতে হয়েছিল রাজ্য নেতৃত্বকে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রী করার তাগিদের থেকে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই দেখতে বেশি উৎসাহী জনতা!
দুই, মোদীকে ঘিরে জনতার এত ব্যাকুলতার মধ্যেও আডবাণী বা সুষমার গলায় মোদী-প্রশংসার অনুপস্থিতি নজর এড়ায়নি কারও। দলের অন্তর্কলহ যে ভাবে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তার সুযোগ নিতে শুরু করে দিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস। যে কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশে এত দিন ছত্রভঙ্গ ছিল, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ ভাবে ময়দানে নেমে পড়েছে। এমনিতেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে সামনে রেখে নতুন উন্মাদনায় ফুটছে কংগ্রেস শিবির। গত দশ বছরে শিবরাজের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন সিন্ধিয়া। তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন দিগ্বিজয় সিংহ, কমল নাথের মতো রাজ্যের শীর্ষ কংগ্রেস নেতারাও। গত ভোটে সংখ্যালঘুদের একটি অংশের ভোট শিবরাজ পেয়েছিলেন। এ বারে তাঁদের অনেকেই কংগ্রেসমুখী। তার মধ্যেই গত কালের সভার অনৈক্যের ছবি শিবরাজের কাছে বড় ধাক্কা।
এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে উমা ভারতীর কাঁটা। সৌজন্য ও ঐক্যের খাতিরে গত কাল শিবরাজের ঘোর বিরোধী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতীকে মঞ্চে ডাকা হয়েছিল। আর প্রথম সুযোগেই শিবরাজের সঙ্গে তাঁর বিরোধের ব্যাপারটি আরও প্রকট করে দিলেন উমা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর আক্ষেপ, “আমাকে মাত্র তিন দিন আগে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে! আমাকে অনেকে বলেছেন, সে কারণে না কি আমার পোস্টার ছাপানোরও সময় হয়নি। তাতে আক্ষেপ নেই। কারণ, আমি মানুষের মনে থাকি।” শিবরাজের আপত্তিতেই বিজেপিতে ফিরলেও নিজের রাজ্য থেকে নয়, উমাকে ভোটে লড়তে হয়েছে পাশের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ থেকে। বুধবারের সভায় যেন তারই পাল্টা দিলেন উমা। শিবরাজের সামনেই তিনি বলেন, “জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য আমাকে মধ্যপ্রদেশের কুর্সি ছাড়তে হয়েছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণী আমাকে ইস্তফা দিতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু আমি দেশের জন্যই গদি ছেড়েছি।”
বিজেপি নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, এত সব ঘটনার ধাক্কায় শিবরাজের সাজানো বাগান তছনছ না হলেও অগোছালো হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। শিবরাজ ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, “রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে এত বড় একটি কর্মিসভা যে কারণে আয়োজন করা হয়েছিল, তা কার্যক্ষেত্রে সফল হল না। গোটা সভা জুড়ে ছেয়ে রইল বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কোন্দলের ছবিই। শিবরাজের ভাবমূর্তি আর উজ্জ্বল হল না। ভোটের আগে আর কতটুকু সময় আছে। তার মধ্যেই জমি ধরে রাখার জন্য এখন আরও বেশি খাটতে হবে সকলকে।”
আজ থেকেই তাই ফের জেলা সফরে বেরিয়ে পড়েছেন শিবরাজ।
|
পুরনো খবর: হাতে শিবরাজ মুখে মোদী |
|
|
|
|
|