কখনও নেতা
হাতে শিবরাজ মুখে মোদী
ড় নেতারা তখনও কেউ আসেননি।
আকাশে পাক খেয়ে মঞ্চের পিছনে ধুলো উড়োচ্ছে একের পর এক হেলিকপ্টার।
লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অনন্ত কুমার এবং অবশ্যই নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির প্রায় গোটা সংসদীয় বোর্ডটিই। রেকর্ডের খোঁজে হাজির গিনেস বুকের কর্তারা তখন ভিড় মাপছেন। এক, দুই, তিন, চার...। শেষ পর্যন্ত কত, তা তাঁরা খোলশা করেননি। তবে বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, মাথা গুনতি সাত লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে!
আর ভিড়?
তারা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে কখন নামবেন তাঁদের তারকা? তারকা তো সকলেই। তা হলে অপেক্ষা কার জন্য? মানুষ নিজেই বুঝিয়ে দিল সেটা। হাতে তাদের মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কাট আউট। আর মুখে? মোদী-মোদী-মোদী।
এই ভিড় শিবরাজেরই আনা। পাক্কা এক বছরের প্রস্তুতি। সব থেকে বড় রাজনৈতিক কর্মিসভা। বিধানসভা ভোটের আগে গোটা বিজেপি নেতৃত্বকে হাজির করিয়ে যাতে তিনিই সেরা হয়ে উঠতে পারেন। মোদী যাতে তাঁর সাজানো বাগান কেড়ে না নেন, তার চেষ্টাও নেহাৎ কম ছিল না। বিজেপির যে নেতারা তেমন মোদী-পন্থী নন, তাঁরাও মুখিয়ে ছিলেন শিবরাজের এই সাফল্য নিজের চোখে দেখতে। মঞ্চে মোদীর পাশে বসে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগও করতে।
বিজেপিতে ঐক্যের ছবিটি দেখানোর যে চিত্রনাট্য সঙ্ঘ রচনা করেছে, আজ ছিল তার প্রকাশ্য রূপায়ণের পালা। এক মঞ্চে আডবাণী ও মোদী। মোদীর নাম ঘোষণার পর এই প্রথম কোনও প্রকাশ্য সভায় দু’জনের আত্মপ্রকাশ। চিত্রনাট্য মেনেই ঘোষণা হল, আডবাণী ফুলের স্তবক দিয়ে আশীর্বাদ করবেন মোদী ও শিবরাজকে। চাইবেন, শিবরাজ ফের মুখ্যমন্ত্রী হোন। আর মোদী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আড়ষ্টতা এখানেও। মোদীকেই প্রথম ফুলের স্তবক দিলেন আডবাণী। কিন্তু অনেকটা দূর থেকে। আর শিবরাজকে দিতেই তিনি পা ছুঁয়ে ফেললেন আডবাণীর। তাঁকে তখন প্রায় জড়িয়ে ধরলেন আডবাণী। তা দেখে মোদীও পা ছুঁলেন আডবাণীর। কিন্তু আডবাণীর দিক থেকে সেই উষ্ণতা চোখে পড়ল না।

তখনও দূরত্ব। সভার শুরুতে আডবাণীকে প্রণাম মোদীর। ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদীর নমো-বার্তা
• আমাদের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি নেই কংগ্রেসের।
তাই ওরা সিবিআইকে নামাচ্ছে।
• মহাত্মা গাঁধীর ইচ্ছা পূরণ করার অর্থ হল কংগ্রেস ও তার স্বজনপোষণ,
দুর্নীতি আর কুকীর্তিগুলি থেকে দেশকে মুক্ত করা।
• অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলির প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। অটল-আডবাণীর
সরকারের বিরুদ্ধে একটি রাজ্যও বঞ্চনার অভিযোগ তুলত না।
• বক্তৃতার জোরে আমরা নির্বাচনে জিতব না। জিতব আমাদের কাজের ভিত্তিতে।
বক্তৃতাতেও একই ছবি। জোশী, জেটলি, বেঙ্কাইয়া সকলেই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী ও শিবরাজকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথা বললেন। কিন্তু সুষমা স্বরাজ শুধু শিবরাজের তারিফ করে ক্ষান্ত হলেন। আর আডবাণী? মোদীর সাফল্যের কথা ছুঁয়ে গেলেন ঠিকই, কিন্তু সেটাই বললেন যা তিনি আগেও বলেছেন ছত্তীসগঢ়ে। বরং অনেক বেশি ঝুঁকে ছিলেন শিবরাজের দিকেই। কিন্তু আডবাণী হোন বা জোশী— কারও বক্তৃতায় মন ছিল না বিশাল জনতার। মিনিটে মিনিটে জনতার থেকে শুধু একটাই ধ্বনি: মোদী-মোদী।
শিবরাজ আগেই আঁচ পেয়েছিলেন। তাই মোদীর তেমন পোস্টার লাগাননি শহরে। আজ মঞ্চে মধ্যমণি হয়ে নিজে বসে থাকলেও মোদীকে বসিয়েছিলেন অনেকটা পাশে। তাঁর বাঁ পাশে সুষমা, জেটলি, অনন্ত কুমাররা। আর ডান পাশে আডবাণী, রাজনাথ, তার পরে মোদী। এর মধ্যে উত্তেজিত জনতা বারবার মোদীকে চাইতে শুরু করেছে। তাই দফায় দফায় মাইকে দিতে হচ্ছে অনুশাসনের পাঠ। তাতে মিনিটখানেক চুপ। তার পরে ফের শুরু।
এ সব হতে পারে ভেবেই মোদীর বক্তৃতা একেবারে শেষে রেখেছিলেন শিবরাজ। ভয়টা হল, মোদীর বক্তৃতা শেষ হলে যদি উঠে চলে যায় মানুষ! আর শুরুটা করা হয় আডবাণীকে দিয়ে। শিবরাজ নিজে বললেন মোদীর ঠিক আগে। তাতেও পরিস্থিতি বদলাল না। তাঁর কথাও বেশি শুনতে আগ্রহী নয় জনতা।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বললেন, “এত দিন যাঁরা নিজেদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রেখেছিলেন, তাঁদের এ বারে চোখ খুলে যাওয়া দরকার। আজ সেই সব নেতাই এক মঞ্চে। আর ভিড়ও মোদীর আনা নয়। কিন্তু সকলেই দেখে নিলেন জনতা আসলে কাকে চায়।”
আর মোদী? যাবতীয় আড়ষ্টতা কাটিয়ে ঐক্য রক্ষার ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকেই। প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মোদী। বক্তৃতায় এল সে সব কথাই। একই সঙ্গে বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে করলেন শিবরাজের তারিফ।
এর আগে অবশ্য উমা ভারতী জানিয়েছেন, আডবাণী (তাঁকে দাদা বলেন উমা) সম্পর্কে কী ভাবেন মোদী (তাঁকে ডাকেন মোটা ভাই বলে, গুজরাতিতে যার অর্থ বড় ভাই)। বললেন, একান্ত আলাপচারিতায় মোদী এক বার তাঁকে বলেছিলেন কিছু নেতা হয়, যাঁদের দূর থেকে ভাল লাগে। কাছেই গেলেই ভ্রম ভাঙে। কিন্তু আডবাণীর যত কাছে যাওয়া যায়, ততই তাঁকে ভাল লাগে। নিজের ঘনিষ্ঠ উমার মুখ থেকে এ কথা শুনে হাসি ফুটল আডবাণীর মুখে।
এর পরে বক্তৃতা শেষ করে মোদী ফের গেলেন আডবাণীর পা ছুঁতে। আডবাণীও চাপড়ে দিলেন তাঁর পিঠ। আর সব কিছু দেখেশুনে সাধুবাদ জানালেন সুষমাও।
ঐক্য কি তবে এল, শেষ পর্যন্ত? বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, “শুরু তো বটে!”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.