|
|
|
|
মোদীকে ছাপিয়ে যাওয়ার অঙ্ক কষছেন শিবরাজ |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • ভোপাল |
তখনও প্রচার কমিটির প্রধানও হননি। তবু নরেন্দ্র মোদী কোনও সভাতে আসছেন মানে তিনিই তারকা।
আর এখন তো তিনি বিজেপির ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তবু বুধবারের ভোপালে মোদী পা রাখলেও নিজেকেই মধ্যমণি করে রাখতে চান মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।
দু’মাসের মাথায় রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষণা না করার জন্য মোহন ভাগবত, লালকৃষ্ণ আডবাণীদের বলেছিলেন শিবরাজ। তাঁর আশঙ্কা, গত বারের বিধানসভা ভোটেও যে সংখ্যালঘু ভোট তিনি পেয়েছেন, মোদীর নাম ঘোষণা হলে তা বানচাল হয়ে যাবে। এমনিতেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে ময়দানে নামিয়ে শিবরাজ-বিরোধী হাওয়ার ফায়দা তুলতে চাইছে কংগ্রেস। তার উপর তাঁর কাছে নতুন বিপত্তির নাম মোদী।
সে কারণেই বাড়তি সতর্ক শিবরাজ। আর তার সাক্ষী গোটা শহর। আগামিকাল ভোপালে শিবরাজ যে জনসভার আয়োজন করেছেন তাতে মোদী, আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, উমা ভারতী-সহ বিজেপির শীর্ষ সারির এক ঝাঁক নেতা-নেত্রী আমন্ত্রিত। দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণার পর এই প্রথম কোনও মঞ্চে একত্রিত হবেন বিজেপির মোদী-পন্থী এবং মোদী-বিরোধীরা। কিন্তু রাস্তা জুড়ে পোস্টারে বড় বড় ছবি শুধু শিবরাজেরই। কোথাও অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে, কোথাও সুষমা, কোথাও আবার রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। এ সবের মধ্যে মোদীর ছবি যে নেই, তা নয়। তবে বেশির ভাগই ছোট আকারের। সভাস্থলের দু’পাশে অবশ্য দলের বাকি নেতাদের পাশাপাশি মোদীরও কাটআউট রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে শহরের ছবি জানিয়ে দিচ্ছে, শিবরাজ কোনও ভাবেই নিজের রাজ্যে মোদীকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চান না। এবং আগামিকাল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে মরিয়া তিনি। |
|
সভাস্থলে পাশাপাশি শিবরাজ ও মোদীর কাট আউট। ছবি: পিটিআই। |
মোদী-শিবরাজ এই ছায়াযুদ্ধ অবশ্য নতুন নয়। তা ছাড়া এখন শিয়রে ভোট। সংখ্যালঘু-বিরোধী তকমা ঘোচাতে মোদী যখন নিজের রাজ্যে ‘সদ্ভাবনা মিশন’ করেছিলেন, তখন এক মুসলিমের দেওয়া টুপি না পরার ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল। পরে শিবরাজ মুসলমানদের হাত থেকে নেওয়া টুপি পরে মোদীকে যেন পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন। আগামিকালের সভাতেও লাখখানেক মুসলমান সমর্থককে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। যদিও সেই সভার আগে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ একটি বোরখা কেনার বিল দেখিয়ে অভিযোগ করেছেন, শিবরাজ সংখ্যালঘু প্রীতি দেখাতে বোরখা ও টুপি পড়িয়ে ভিড় বাড়াবেন!
শিবরাজ অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মোদী এলে মেরুকরণের আশঙ্কা তো রয়েইছে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। শিবরাজ-ঘনিষ্ঠ নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় আজ বলেন, “আগামিকালের সভা শিবরাজ সিংহকে তৃতীয় বারের মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য। নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার সভা নয়।” তিনি আরও বললেন, “প্রথমে লাখ পাঁচেক কর্মী-সমর্থককে এই সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণার পর সেটি সাত লক্ষও ছাড়িয়ে যেতে পারে!” বিজেপির এক শীর্ষ নেতা রসিকতা করে বললেন, “কাল এক অভিনব সভা হতে চলেছে। যেখানে বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী থাকছেন। অতীতে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী আডবাণীও থাকছেন! আবার এই আডবাণী-সুষমারা যাঁর পিছনে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার জন্য ভোপাল যাচ্ছেন, সেই শিবরাজ সিংহ চৌহানকেও মোদীর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশে তৃতীয় বার জিতে শিবরাজ চাইবেন মোদীর সমকক্ষ হয়ে উঠতে। রাজনীতির মোড় কখন কোন দিকে ঘোরে, তা অনিশ্চিত। কাল তো বটেই, ভবিষ্যতেও কে কাকে টেক্কা দেবেন, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|