দলকে স্বস্তি দিয়ে মোদীর পাশে আডবাণী
ক’দিন আগেই সহকর্মী হিসেবে প্রশংসা করে নিজের মনোভাব বদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এ বার একদা শিষ্য নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে নিজের মনোভাব জানিয়ে দিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। এবং একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দিলেন, মোদী প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা তিনি করবেন না। বিজেপির লৌহপুরুষ বলে পরিচিত এই প্রবীণ নেতা আজ আনন্দবাজারকে বলেন, “দল নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করেছে। দলের প্রবীণ নেতা হিসেবে আমি তা সমর্থন করি। নরেন্দ্র-র সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত বিরোধ নেই।”
আগামিকাল, বুধবার ভোপালে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে সামিল হতে একই মঞ্চে অবতীর্ণ হতে চলেছেন মোদী এবং আডবাণী। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পরে এই প্রথম তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়াবেন আডবাণী। মোদী-প্রশ্নে তাঁর তুমুল আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। এ হল সঙ্ঘের উদ্যোগে এক ঐক্য প্রচেষ্টা। মোদী-প্রশ্নে আডবাণীর মনোভাবের কথা মাথায় রেখে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত ইতিমধ্যেই মোদী এবং অরুণ জেটলিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, এই প্রবীণ নেতাকে দলীয় কার্যকলাপে সামিল করা হোক।
আডবাণী এ দিন বলেন, “নরেন্দ্র যে যোগ্য ব্যক্তি, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। গুজরাতের প্রশাসক হিসেবে তিনি সফল হয়েছেন এবং দলের সফল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বারবার আমি তাঁর প্রশংসাই করেছি। নাম ঘোষণা করার সময় নিয়ে দলের মধ্যে বিভিন্ন মত থাকতেই পারে। দলীয় বিষয়ে আমার কিছু নিজস্ব মতও থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক দলে সব সময় মতামত নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার পর সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কোনও প্রশ্ন ওঠে না।” প্রবীণ নেতার আরও বক্তব্য, “সংবাদমাধ্যম যা বলে বলুক, আমি কোনও দিনই বিক্ষুব্ধ নেতা হব না।”
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরের দিনই রাম জেঠমলানীর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন মোদী। ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন আডবাণীও। কিন্তু সে দিন মোদী ও আডবাণীকে বিশেষ কথা বলতে দেখা যায়নি। দুই নেতার মাঝখানে বসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জেঠমলানী।
মোদী কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরেই আডবাণীর বাড়ি গিয়েছিলেন। এবং শুধু আডবাণী নন, তাঁর পুত্র জয়ন্ত এবং কন্যা প্রতিভাও সে দিন মোদীকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ গল্পগুজবও করেছিলেন। তার পরে কাল দু’জনের ফের দেখা হচ্ছে জনসভায় এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্যটির নাম মধ্যপ্রদেশ। যার মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান আডবাণী-শিবিরের বলেই পরিচিত। মাস দু’য়েক পরে তাঁর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। আডবাণীর মতো তিনিও মোদীকে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন দলীয় বৈঠকে। আডবাণীকে সঙ্ঘ পরিবারের তরফে দু’টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হল, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর এনডিএ-র চেয়ারম্যান করা হবে তাঁকে। এখনও এই পদে রয়েছেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। ফলে সনিয়া গাঁধী যেমন ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন, আডবাণীকেও সে ভাবে এনডিএ-র প্রধান কাণ্ডারীর মর্যাদা দেওয়া হবে। ক’দিন আগেও জেডিইউ নেতা শরদ যাদব ছিলেন এনডিএ-র আহ্বায়ক। জেডিইউ অবশ্য এখন আর এনডিএ জোটে নেই। এই অবস্থায় লোকসভা ভোটের পরে এনডিএ-র পুরো কমিটিকেই নতুন করে সাজানো হবে।
সঙ্ঘের দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হল, প্রণববাবুর পর পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে আডবাণীর নাম আগাম ঘোষণা করবে বিজেপি। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, “ঈশ্বরের আশীর্বাদে ওর শরীর আমাদের চেয়েও ভাল। তাই তিনি এই দায়িত্ব নিশ্চয়ই নিতে পারবেন।” যদিও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির জোটসঙ্গী অকালি নেতা সুখবীর সিংহ বাদলের ইচ্ছা অন্য। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তাঁর বাবা প্রকাশ সিংহ বাদলকে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী করতে আগ্রহী।
বিজেপি সূত্র বলছে, রাজ্যওয়াড়ি এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কোনও জনসভায় মোদী গেলে অন্য কোনও নেতার উপস্থিতি প্রয়োজনই হচ্ছে না। ক’দিন আগে ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংহ এবং জয়পুরে বসুন্ধরা রাজের জনসভায় সেটা টের পাওয়া গিয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে মোদী সভা করবেন। তবে সেই সভায় আডবাণী-সুষমা স্বরাজরা হাজির থাকবেন না। যদিও এ সব নিয়ে আর আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাকে সঙ্ঘ চটাতে চায় না। তার একটা বড় কারণ হল, নীতীশ কুমার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়কের মতো একদা সঙ্গীদের এনডিএ-তে ফেরানোর জন্য আডবাণীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তা ছাড়া, মোদী-প্রশ্নে আডবাণীকে সামনে রেখে বিজেপিতে ফাটল ধরাতে মরিয়া কংগ্রেস। তা যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আডবাণীর সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি বলে মনে করেন সঙ্ঘ নেতারা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.