|
|
|
|
আপত্তি চেপে মোদীর প্রশংসায় আডবাণী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও পটনা |
জন্মদিনের এক দিন আগে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর ভাগ্যে উপহার! লালকৃষ্ণ আডবাণীর থেকে প্রকাশ্য তারিফ!
আপাত ভাবে অপ্রত্যাশিত মনে হলেও সঙ্ঘ ও দলের নেতাদের এ জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি এই ক’দিন। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঘোষণার বৈঠক বয়কট করে আডবাণী তাঁর অসন্তোষ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তার পর থেকে সঙ্ঘ নেতৃত্ব লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন যাতে আডবাণী ও মোদীর যুগলবন্দি সুনিশ্চিত করে দলের ঐক্যের ছবি তুলে ধরা যায়। ভোপালে দু’জনের একযোগে সভাও আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত কাল রাতে দু’জনকে এক সাথে দেখা যায় দলের বহিষ্কৃত নেতা রাম জেঠমলানীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। দলের ঐক্যের বার্তা দিতে আডবাণী আজ এগিয়ে গেলেন আরও এক ধাপ। ছত্তীসগঢ়ের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রকাশ্যে প্রশংসা করলেন মোদীর। তারিফ করলেন গুজরাতের উন্নয়নের।
মোদী কী ভাবে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, তার প্রশংসা করতে গিয়ে আডবাণী বলেন, “নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি যাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছে, তিনি গুজরাতে অনেক উন্নয়ন করেছেন।” কিন্তু একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি যে, এই ঘোষণার মাধ্যমে এক বিরাট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোদীকে । |
|
ছত্তীসগঢ়ের সভায়। ছবি: পিটিআই। |
বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা এই তারিফের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, আডবাণীর উপরে প্রবল চাপ রয়েছে সঙ্ঘের, যাতে তিনি মোদীর নাম ঘোষণার বিষয়টি মেনে নেন। তার ফলেই জন্মদিনের আগে একটি বড় পুরস্কারই পেয়ে গেলেন মোদী। কিন্তু তাই বলে দু’জনের মধ্যে তিক্ততা মিটে গিয়েছে, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। ভোটের মুখে বা তার পরে দেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে, এখনই তা বলা সম্ভব নয়। মোদীর নাম ঘোষণার সময় আডবাণীর তাঁর অবস্থানে অনড় থেকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ওই সিদ্ধান্তের শরিক নন। ফলে ভবিষ্যতে যদি মোদীকে ঘিরে কোনও সমস্যা তৈরি হয়, আডবাণীর মতো নেতারা তখন ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেন। শরিক সংগ্রহে মোদী ব্যর্থ হলে ফের আডবাণীর গুরুত্ব ফের বাড়বে। তবে আপাতত বিজেপি-র নেতারা আডবাণীর মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে মোদীর পক্ষে সুর চড়াতে শুরু করেছেন। দিল্লিতে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে মোক্তার আব্বাস নকভি দাবি করে বসেন, “মোদীর নাম ঘোষণায় সব থেকে বেশি খুশি হয়েছেন আডবাণী।” সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির রোল। বিজেপি নেতারা কিন্তু পরে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, এই মন্তব্য সুচিন্তিত। কারণ নকভির মন্তব্য খণ্ডন করা সম্ভব নয় কারও পক্ষে। রাজনাথ সিংহও বলেন, “মোদীকে প্রার্থী করা নিয়ে আডবাণীর কখনও আপত্তি ছিল না। গোড়া থেকেই তিনি মোদীর প্রশংসা করে আসছেন। এখনও করবেন না কেন?” যদিও মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতারাও জানেন, আডবাণীর এই তারিফ নিষ্কণ্টক নয়। সময় ও অনুকূল পরিস্থিতির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ফলে লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করে দিল্লির তখ্ত দখলের কঠিন লড়াইয়ের সঙ্গে এটা একটা বাড়তি চাপ মোদীর উপরে।
সেই চাপ আরও বাড়াতে কী কংগ্রেস, কী নীতীশ সকলেই তৎপর আডবাণীকে উস্কে দিতে। নীতীশ এ দিন ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার মতো বলেন, “আডবাণী এক সময় ছিলেন বিজেপি-র লৌহপুরুষ। এখন বিজেপি তাতে মরচে ধরিয়ে দিয়েছে।” আডবাণীর হতাশাকে বিঁধছে কংগ্রেসও। দিগ্বিজয় সিংহরা ক্রমাগত বলে চলেছেন, “নাগপুরের নির্দেশে মোদীকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাকে একঘরে করে ফেলল।”
দলের মধ্যে বিরোধ আর বিরোধীদের উস্কানি দুইয়ে মিলে এমনিতেই সাঁড়াশি চাপে মোদী শিবির। তার উপর রেওয়ারির সভায় মোদী কাল পাকিস্তানের প্রতি নরম অবস্থান নেওয়ায় দলের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ভাল বার্তা যায়নি। আজ তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের মুখপাত্ররা বিবৃতি দিয়েছেন, পাকিস্তান সম্পর্কে বিজেপি-র অবস্থান আদৌ পরিবর্তন হয়নি। পাক সন্ত্রাসবাদীরা জানে, মোদী ক্ষমতায় এলে এ দেশ থেকে তাদের নিমূর্ল করে দেওয়া হবে। পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।
ভোটে সাফল্যের জন্য যে উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বেশি ভরসা রাখছেন মোদী, কাল সে রাজ্যের প্রার্থীতালিকা ও কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসছে বিজেপি। রাজনাথ সিংহের বাড়িতে এই বৈঠকে থাকবেন মোদী-ঘনিষ্ঠ অমিত শাহ, মুরলীমনোহর জোশী, বরুণ গাঁধীরা। উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে মেরুকরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে মোদী কী ভাবে তার ফসল তুলতে পারবেন, কথা হবে তা নিয়ে।
এনডিএ-র প্রাক্তন শরিক নীতীশ কিন্তু মনে করছেন, মোদীকে প্রাথী করাটাই কাল হলো বিজেপি-র। তাঁর কথায় “বিপদকালে বুদ্ধিনাশ হয়েছে বিজেপি-র।” বিজেপি-র সঙ্গ ত্যাগ করার আগে নীতীশ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আডবানীর নাম বলেছিলেন। আডবাণীও অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে উৎসাহ বাড়িয়েছিলেন নীতীশের দলের। এখন সেই আডবাণীকে বিঁধেই মোদীর বিরুদ্ধে তির ছুড়ছেন নীতীশ।
|
পুরনো খবর: আডবাণীর সঙ্গে দেখা মোদীর, কথা তেমন নয় |
|
|
|
|
|