|
|
|
|
|
পুলিশ ভ্যানে জন্ম হল নতুন অতিথির
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি |
|
এত দিন চোর-ডাকাত-অপরাধীদের ঘাড় ধরে টেনে বার করত শক্ত হয়ে যাওয়া হাতগুলো। বুধবার মাঝরাতে সেই কড়া পরা হাতগুলো যেন আচমকাই কমনীয়, কেমন যেন মায়া জড়ানো।
পুলিশের লাঠি সরিয়ে রেখে এক জন দৌড়লেন গরম জলের খোঁজ করতে। তো আর এক জন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ছেঁড়া কাপড়ের জোগাড়ে। তাঁদের তখন শিরে সংক্রান্তি। না, এই ছোটাছুটি কোনও দাগি আসামির জন্য নয়। তাঁদের পুলিশ ভ্যানে যে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক তরুণী। ধরপাকড় করা শক্ত হাতগুলোই শেষে পৃথিবীর আলো দেখাল এক ফুটফুটে মেয়েকে। মেয়েকে দেখেই যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখটায় হাসি ফুটল নিমেষে।
উত্তর দিল্লির আমন বিহারে বাবা-মা ও স্ত্রী সূর্যমুখীকে নিয়ে ছোট সংসার প্রদীপের। গত বুধবার রাতে হঠাৎই সূর্যমুখীর প্রসব বেদনা শুরু হয়। মাঝরাতে কোনও রকমে গাড়ি জোগাড় করে রওনা হন হাসপাতালে। এক কিলোমিটার পথ পেরোতে না পেরোতেই বিপত্তি। এক মাত্র সম্বল গাড়িটা বিগড়ে যায় রাস্তাতেই।
“গাড়ির পিছনের দিকে বসে তখন চিৎকার করছে সূর্যমুখী। উপায় না দেখে আমিই নেমে পড়ি রাস্তায়। পাগলের মতো এ ধার-ও ধার ছোটাছুটি করে একটাও গাড়ি থামাতে পারলাম না,” বললেন প্রদীপ। তাঁর কথায়, চিন্তায়-আশঙ্কায় তখন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে। ওই অবস্থাতেই পেরিয়ে গেল পনেরো মিনিট। ঘড়ির কাঁটা প্রায় সাড়ে তিনটে ছুঁইছুঁই।
রাতের কিরারি-মুবারকপুর রাস্তায় সে সময় টহল দিচ্ছিল পুলিশের একটা গাড়ি। এক যুবককে উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়োদৌড়ি করতে দেখে গাড়ি থামায় তারা। প্রদীপের কাছে সব শুনে দৌড়ে আসেন হেড কনস্টেবল লক্ষ্মণ, কনস্টেবল হরিশ ও আমনদীপ। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য যে স্ট্রেচার রাখা থাকে গাড়িতে, টেনে নামান সেটাই।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো সময় পাওয়া যাবে কি না, বুঝতে পারছিলেন না কেউই। শেষ পর্যন্ত গরম জলের ব্যবস্থা করেন আমনদীপ। পুলিশের গাড়ি তত ক্ষণে ছোটখাটো আঁতুড় ঘরের চেহারা নিয়েছে। বউমার প্রসবে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন সূর্যমুখীর শাশুড়ি। আর হাতে হাতে এটা-ওটা জুগিয়ে পুরো সময়টা
তাঁকে সাহায্য করলেন হরিশ, আমনদীপ, লক্ষ্মণরা।
দশ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। তার পরেই একটা কচি গলার কান্নার আওয়াজ ভেসে এল ভেতর থেকে। ওই অবস্থাতেই মা-মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হল গাড়ি। ওই এলাকার সব চেয়ে কাছে সঞ্জয় গাঁধী হাসপাতাল। সেখানেই ভর্তি করা হয় সূর্যমুখী ও তাঁর মেয়েকে। হাসছে-খেলছে, দিব্যি আছে একরত্তি।
কান পাতলেই যখন চার দিকে খালি পুলিশের সমালোচনা, তার মাঝেই এই অসামান্য নজির গড়লেন রাজধানীর এই তিন কনস্টেবল। সেই কাজেরই স্বীকৃতি মিলল এ দিন। দিল্লির পুলিশ কমিশনার আজ আমনদীপ, লক্ষ্মণ ও হরিশের হাতে তুলে দিলেন ‘অসাধারণ কার্য পুরস্কার’। সেই সঙ্গে দশ হাজার টাকাও পেলেন প্রত্যেকে। স্ত্রী-সন্তানের মুখে হাসি ফুটলেও চিন্তা যাচ্ছে না প্রদীপের। বললেন, “ও-ই তো প্রথম যে পুলিশের ভ্যানে হল। এ বার একটা যুৎসই নাম খুঁজতে হয় যে।” |
|
|
|
|
|