|
|
|
|
মিজোরাম |
পুজোর উদ্বোধন করে সঙ্কটে মুখ্যমন্ত্রী |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
কলকাতায় দুর্গাপুজোর উদ্ধোধনে গিয়ে সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা। যিশু বনাম দশভূজার এই টানাপোড়েনে খ্রিস্টান অধ্যুষিত মিজোরামের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত।
২০০৮ সালে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (এমএনএফ) গো-হারান হারিয়ে দেয় কংগ্রেস। ৪০ সদস্যের বিধানসভায় জোরাম থাঙ্গার দল এমএনএফ পায় মাত্র তিনটি হাসন। কংগ্রেস ৩২টি আসন দখল করে। গত ৫ বছরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিরোধী দল বা স্বেচ্ছাসেবী-মানবাধিকার সংগঠনগুলি তেমন বড় কোনও অভিযোগ আনতে পারেনি। পাশাপাশি, কংগ্রেস সরকারের নতুন ভূমিনীতি রাজ্যে জনপ্রিয় হয়েছে, সাফল্যের সঙ্গে কার্যকরও হচ্ছে। রাজ্য সরকার গির্জাকে রাজি করিয়ে কয়েক দশক পরে মদ তৈরির কাজ ফের শুরু করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আর মাস দুয়েক পরে মিজোরাম বিধানসভা নির্বাচন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তেমন জোরালো নির্বাচনী হাতিয়ার না থাকায় এমএনএফ এ বার ধর্মকে টেনে এনেছে প্রাক্-নির্বাচনী লড়াইয়ে। |
|
২০১১ সালে সল্টলেকের একটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে মিজো মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা ও তাঁর স্ত্রী।
এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমেছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট।—ফাইল চিত্র। |
২০১১-এ পুজোর সময় মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা সস্ত্রীক ছুটি কাটাচ্ছিলেন সল্টলেকের মিজোরাম হাউসে। পাশেই আইবি ব্লকের পুজোর উদ্ধোধন করেন তিনি। পাশাপাশি, মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবের আমন্ত্রণে এন্টালি উদয়ন সঙ্ঘের পুজোতেও হাজির হন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, মেঘালয়ের তখনকার রাজ্যপাল রঞ্জিৎ শেখর মুশাহারি। নিয়মমতো পুজারিরা তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর কপালে টিকা এঁকে দেন। পুজো উদ্ধোধনের পর দেবী দুর্গার সামনে নত হওয়া মাথা ও ফোঁটা কাটা কপালের সেই ছবিকে সম্বল করে আইজলে মিছিল, প্রতিবাদসভা, সাংবাদিক সম্মেলন করছে এমএনএফ। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী খ্রিষ্টবিরোধী। তিনি হিন্দুদের মূর্তি পুজোয় অংশ নেন। তিলক লাগান। দশ হাতের দেবীর সামনে নত হন। এমন লোককে খ্রিষ্টরাজ্যের প্রধান রাখা কিছুতেই সম্ভব নয়। গির্জাকেও এই ব্যাপারে পাশে টানতে চাইছেন জোরাম থাঙ্গা। মিজো জনজীবন থেকে রাজনীতি, সবেতেই গির্জার পরোক্ষ এক ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে ‘চার্চ’ বনাম ‘স্টেট’-এর সংঘাত মিজোরামে পরিচিত ঘটনা। এই সুযোগ নিয়েই জোরাম থাঙ্গা বলছেন, “সবাই জানে কপালে তিলক কাটা হিন্দু ধর্মাচরণের অঙ্গ। এ জন্য হিন্দুরা লাল থানহাওলার সমালোচনা করেননি, মুখ্যমন্ত্রীও ক্ষমা চাননি। বোঝাই যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ও হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে অশুভ আঁতাত রয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যের যাযকরাও মধ্যপ্রদেশে গিয়ে কপালে লাল টিকা লাগিয়ে এসেছেন। কিন্তু সিনোডের কার্যনির্বাহী সচিব, রেভারেন্ড লালজুইথঙ্গা জানান, ‘মূল ভূখণ্ডে’ গিয়ে তাঁরা কখনওই কপালে লাল টিকা লাগাননি। ব্যাপটিস্ট চার্চ অফ মিজোরামও কংগ্রেসের এই অভিযোগে ক্ষুব্ধ। এমএনএফ-এর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কেবল কলকাতায় নয়, ২০০৯ সালে দিল্লির মিজোরাম হাউসের উদ্ধোধন ও ২০১০ সালে তুলিভাল সেতুর উদ্ধোধনেও হিন্দু আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্ধোধনের ছবি নিয়ে আইজলে বিরাট মিছিলও বের করে তারা।
মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা এই বক্তব্য ও বিরোধিতাকে পাত্তা দিতে নারাজ। বলেন, “এ সব ধর্মীয় বিষয়কে আঁকড়ে ধরে জনপ্রিয়তা কাড়ার চেষ্টা আসলে এমএনএফের রাজনৈতিক দৈনতাকেই প্রকট করেছে। আমার পুজোয় যাওয়া, তিলক কাটা নিয়ে ওদের সাফাই দেব না। আমি একনিষ্ঠ খ্রিস্টান। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সেখানে এমন ধর্মকেন্দ্রীক নোংরামো দিয়ে বাজিমাৎ করা যাবে না।” |
|
|
|
|
|