|
|
|
|
মুজফ্ফরনগরে হাজির দিল্লি দরবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদবের পরে আজ খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সঙ্গে সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। লখনউয়ের তখতের পরে এ বার যেন দিল্লি দরবার এসে দাঁড়াল গোষ্ঠী সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মজফ্ফরপুরের দোরগোড়ায়।
ইউপিএ শীর্ষ নেতৃত্বের সফরের দিনেই মুজফ্ফরনগরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা প্রশাসন। দশ দিন পরে আজ সন্ধ্যা সাতটা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে কার্ফু। সেনাও সরানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক কৌশল রাজ শর্মা। খুলেছে সব স্কুলও।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে এসে কাল কালো পতাকা দেখতে হয়েছিল অখিলেশকে। আজ সনিয়াদের সফর ঘিরে তেমন কিছু দেখা যায়নি। বাঁশিকালান, বাওয়ালি, খাঞ্জপুরার মতো এলাকায় যান তাঁরা। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ছেড়ে মানুষের কাছে যান সনিয়া ও রাহুল। বলেন, “আমরা আপনাদের বেদনার শরিক হতে এসেছি।” ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন ফের স্বাভাবিক করতে রাজ্য সরকার যা সাহায্য চাইবে, কেন্দ্র তা দিতে প্রস্তুত, আশ্বাস দিয়েছেন মনমোহন। |
|
মুজফ্ফরনগরের বারওয়ালায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া এবং রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
|
সনিয়াদের সফরকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলীয় মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “এ ভাবে ক্ষত মোছা যাবে না। এটা ধর্মনিরপেক্ষ পর্যটন ছাড়া কিছু নয়।” আর উত্তরপ্রদেশের বিরোধী নেত্রী মায়াবতী বলেন, রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি না-করলে কংগ্রেসের সফর নাটকের চেয়ে বেশি কিছু নয়। আক্রমণ শানিয়েছে সমাজবাদী পার্টিও। নেতা আজম খান বলেন, “ভোট কাছেই। তাই মুজফ্ফরনগরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাল করেছেন। তবে ফৈজাবাদ, মথুুরা ও বরেলীতেও সংঘর্ষ হয়েছিল। তিনি সেখানে গেলে ভাল হতো।”
কেন সনিয়া-মনমোহনদের এই মুজফ্ফরনগর সফর, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে কিছু ব্যাখ্যা। অনেকের মতে, লোকসভা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে কংগ্রেস। গত বার এ রাজ্য ২২ জন সাংসদ দিয়েছিল কংগ্রেসকে। তা ধরে রাখা, এবং সম্ভব হলে আরও বাড়ানো সনিয়াদের সামনে চ্যালেঞ্জ। কিন্তু মুজফ্ফরনগরের গোষ্ঠী সংঘর্ষের রাজনৈতিক পরিণামই এখন তাঁদের মাথাব্যথা। কংগ্রেসে একাংশ বলছেন, মুজফ্ফরনগর উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে তীব্র মেরুকরণ ডেকে আনতে পারে। সেই হাওয়া ছড়াতে শুরু করেছে বলে নানা সূত্রে খবরও পেয়েছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে বিজেপি ও সপা-র লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নেহরুর বহুত্ববাদের পথে চলা কংগ্রেসের পক্ষে কোনও গোষ্ঠীর দিকে পুরো ঝুঁকে পড়া কঠিন। ফলে আদতে ক্ষতি তাদেরই হবে। আর তা সামলাতে রাজ্যে এলেন সনিয়ারা।
কিন্তু কংগ্রেসের অন্য অংশের মতে, গোষ্ঠী সংঘর্ষ সামালতে অখিলেশের ব্যর্থতা সপা-র চিরাচরিত ভোট ব্যাঙ্ককেও বিমুখ করে তুলেছে। আজ মনমোহন-সনিয়ার কাছে রাজ্যের নামে নালিশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বলেছেন, সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করলেও তাঁরা গ্রামে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে তদন্তেরও দাবি করেছেন তাঁরা। এখন সনিয়া-মনমোহনের সফর ক্ষতি সামলানো নয়, উল্টে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ককে পুষ্ট করতে পারে বলেই ওই নেতাদের দাবি। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই স্বাভাবিক হচ্ছে মুজফ্ফরনগর। জেলাশাসক জানান, কার্ফু উঠলেও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হবে। দু’টি গ্রামের কিছু মানুষ উদ্বাস্তু শিবির থেকে ঘরে ফিরেছেন। তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানান জেলার বরিষ্ঠ পুলিশ সুপার (এসএসপি) প্রবীণ কুমার। দু’এক দিনের মধ্যেই বড় মাথাদের ধরা হবে বলে দাবি তাঁর।
অখিলেশের জন্য ভাল খবর আজম খানের সমর্থন ফিরে পাওয়া। গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে অখিলেশ সরকারের উপরে আজম এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে, গত দু’দিন দলীয় বৈঠকেও আসেননি। আজ তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলি চায় না উত্তরপ্রদেশে সপা-র নেতৃত্বে শান্তিতে সরকার চলুক।” সংঘর্ষের জন্য অখিলেশ বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন, এই মন্তব্যে আজম সেটাকে সিলমোহর দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
|
পুরনো খবর: মুজফ্ফরনগরে কালো পতাকা অখিলেশকে, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা |
|
|
|
|
|