|
|
|
|
কখনও প্রশাসক |
ভর্তুকির রুটি না সম্মানের রুজি, প্রশ্নবিদ্ধ সনিয়া
প্রেমাংশু চৌধুরী • গাঁধীনগর |
দেশের তরুণরা ভিক্ষার অন্নে পেট চালাতে চায় না। রোজগার করে সসম্মানে বাঁচতে চায়। এক কথায় নস্যাৎ সনিয়া গাঁধীর তুরুপের তাস খাদ্য সুরক্ষা আইন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ দিল্লিতে বসে নিজের কাজ করলে, গোটা দেশকে গুজরাতে ডেকে এনে দেখাতে হত না, কী ভাবে বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে হয়। আর রাহুল গাঁধী? কটাক্ষ এ বারে ইঙ্গিতে লম্বা ঝুলের কুর্তা পরে ধোঁয়া ছোটানো বক্তৃতা করলেই দেশ চলে না। দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, ইনি প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে নেমেছেন, না কি প্রধানমন্ত্রী সেজে মহড়া দিচ্ছেন!
দিল্লিতে সব রাজ্যের প্রতিনিধির সম্মেলন ডেকে ইউপিএ-সরকার নীতি নির্ধারণ করে। রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের ঠিক করে দেওয়া নীতি মেনে চলতে বলেন। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে সেই কাজটাই শুরু করে দিলেন মোদী। ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ নিয়ে জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে নিজের রাজধানীতে ডেকে আনলেন দেশের বাকি সব রাজ্যকে। ঝাড়া ৫২ মিনিট ধরে বোঝালেন ছ’হাজার প্রতিনিধিকে— কী ভাবে গুজরাত ঝাঁক ঝাঁক তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির বন্দোবস্ত করছে। অন্য রাজ্যগুলিরও সেই মডেলই অনুসরণ করা উচিত। আর দিল্লি? কালো চামড়ার ব্যান্ডের ঘড়ি পরা বাঁ হাতের মুঠো শক্ত হয়, “দিল্লিকেও বাধ্য করব আমার নীতি মেনে চলতে।”
তিনি শেষ পর্যন্ত দিল্লির গদিতে পৌঁছতে পারবেন কি না, সেটা পরের প্রশ্ন। কিন্তু আজ গাঁধীনগরের মহাত্মা মন্দিরের সম্মেলন কক্ষ থেকে নতুন বিতর্ক তুলে দিলেন মোদী। সনিয়ার আমআদমির উন্নয়নের মডেলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তাঁর প্রশ্ন— কীসে দেশের হিত? ভর্তুকি দেওয়া খাদ্যের বন্দোবস্ত করায়, না কি পাকাপাকি রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করা? গরিব মানুষের মুখে সস্তায় খাবার তুলে দিয়ে সনিয়া-রাহুল লোকসভা ভোটে নামতে চাইছেন। সেখানে মোদীর বিকল্প নীতি— শিল্প সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী বেকারদের প্রশিক্ষণ দাও। কারণ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় বেকাররা চাকরি পাচ্ছেন না। শিল্প সংস্থাগুলিও দক্ষ লোক পাচ্ছে না। সরকারের দায়িত্ব সেই সেতুবন্ধনটি করে দেওয়া। |
বুধবার গাঁধীনগরের জাতীয় সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই। |
মোদীর দাবি, গুজরাতে সেই কাজ তিনি সেরে ফেলেছেন। প্রথম সারির ২৪টি শিল্প সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সরকার প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। গুজরাতের অর্থনৈতিক মডেল ভাল না খারাপ, তা নিয়ে তাত্ত্বিক লড়াইয়ে এক কথায় দাঁড়ি টেনে দিয়ে মোদী বলেন, “আপনার রাজ্যে দক্ষ কর্মী থাকলে শিল্পপতিরা জঙ্গলে গিয়েও কারখানা বানাবে। দেশি-বিদেশি লগ্নি আসবে। টাকার পতন রুখতে নাকানি-চোবানি খেতে হবে না দিল্লিকে।”
কংগ্রেস মুখপাত্র পি সি চাকো বললেন, “ইউপিএ-সরকার তো এ সব আগেই করেছে। জাতীয় জীবিকা মিশন রূপায়ণ হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প তো কর্মসংস্থানের জন্যই। তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরশন।” কিন্তু মোদীর যুক্তি, কাগজে-কলমেই এ সব হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। চাকোর যুক্তি, আগে পেট ভরুক, তার পর তো কাজের চিন্তা। আর গুজরাতের মডেলটাই যে শ্রেষ্ঠ, তা কে বলল? মোদীর জবাব, “প্রধানমন্ত্রী নিজেই ২০১১-’১২ সালে গুজরাতকে এ জন্য শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। আর এখন ইউপিএ-সরকার তো দাঁড়ি-কমা-সহ আমাদের নীতি মেনে চলছেন।”
রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে পিছনে ফেলতে তরুণ ভোটারদের সঙ্গে সেতুবন্ধনের চেষ্টায় গাঁধীনগরের চেনা ময়দানে অন্তত সফল মোদী। তিনি সম্মেলন কক্ষে ঢুকছেন। হাততালি ও প্রবল উল্লাস। সৌজন্যে আইটিআই-তে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছেলেরা। মোদীর কথা শুনতে অধীর জনতা তাঁর আগের বক্তা, বিশ্ব ব্যাঙ্কের কর্তা জন ব্লমকুইস্টকে মাঝ পথেই হাততালি দিয়ে থামিয়ে দেয়। তার মধ্যেই তিনি বললেন, “বেকার সমস্যা ভারতের মতো জনবহুল দেশে চিরাচরিত সমস্যা। কিন্তু তা নিরসনে গুজরাতের ভূমিকা বেশ ভাল।” গাঁধীনগরে দাঁড়িয়েও তিনি যে গোটা দেশের মানুষকেই বার্তা দিচ্ছেন, তা বোঝাতে মোদী বক্তৃতা শুরু করেন ‘মেরে প্যারে ভারতবাসীয়োঁ’ বলে। বক্তৃতার মাঝে বারবার চিৎকার-হাততালি-উল্লাসের শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। টেবিল চাপড়ে মোদী বলেন, “আমার পরিশ্রম বিফলে যাবে না!” এমন গর্জন ওঠে যে এটা সরকারি সম্মেলন না বিজেপির জনসভা, সেটাই গুলিয়ে যায়।
গুজরাত যেমন মোদীর রাজ্য, তেমনই মোহনদাস গাঁধীরও। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী সৌরভ পটেলের কথায়, “গাঁধীজি বলেছিলেন সত্যমেব জয়তে। মোদী বলছেন, শ্রমএব জয়তে!” |
|
|
|
|
|