দাগি-রক্ষায় অর্ডিন্যান্স কেন, ব্যাখ্যা চান প্রণব
দোষী সাব্যস্ত সাংসদ, বিধায়কদের আইনসভার সদস্যপদ খারিজের সম্ভাবনা রুখতে দু’দিন আগে তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স এনেছিল মনমোহন সিংহ সরকার। কিন্তু তা নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিরোধ-বিতর্কের জেরে অর্ডিন্যান্সে সই করার আগে কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ঘরোয়া সফরের জন্য রাষ্ট্রপতি দিল্লির বাইরে ছিলেন। বিকেলে দিল্লিতে ফিরেই তিনি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠান। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মেয়াদে যে ঘটনার বিশেষ নজির এ যাবৎ নেই।
তবে সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, কেন্দ্র তার অবস্থান বদলায়নি। তাছাড়া সরকারের তরফেই উদ্যোগী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে অর্ডিন্যান্সের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যা কিনা খুবই সাধারণ ঘটনা।
কিন্তু পরিস্থিতি যে অসাধারণ তা অর্ডিন্যান্স নিয়ে ঘরে-বাইরে বিরোধেই স্পষ্ট। কারণ, প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করছে। এমনকী রাষ্ট্রপতি যাতে অর্ডিন্যান্সে সই না করেন সে জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেখা করে আজ তাঁদের আপত্তির কথা জানান লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি। আবার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন দিগ্বিজয় সিংহ, মিলিন্দ দেওরার মতো রাহুল গাঁধী-ঘনিষ্ঠ কিছু নেতাও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা আজ বলেন, “আইনি জটিলতার বিষয়টি পাশে সরিয়ে রেখেই বলছি, দোষী সাব্যস্ত সাংসদ, বিধায়কদের সদস্যপদ টিকিয়ে রাখার অর্থ গণতন্ত্রকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া।” অন্য দিকে দিগ্বিজয়ের কথায়, “সরকার এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সর্বসম্মতির জন্য অপেক্ষা করলেই পারত।” কংগ্রেস নেতাদের এই বিরোধিতা সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে সর্বোচ্চ আদালত একটি রায়ে জানিয়েছিল, ২ বছরের বেশি সাজা হলে দোষী সাংসদ, বিধায়করা আর আইনসভার সদস্য থাকতে পারবেন না। নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ, বিধায়করা এত দিন উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তাঁদের আইনসভার সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতেন। কিন্তু, জুলাই মাসের রায়ে সেই পথ বন্ধ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক শিবিরে। প্রায় সব ক’টি দলের চাপে সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি রিভিউ পিটিশনও দাখিল করেছিল। কিন্তু তাও আদালত খারিজ করে দেয়। আবার সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে রুখতে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন প্রস্তাব এনে সংসদে বিল পেশ করেছিল সরকার। কিন্তু রাজ্যসভায় বিলটি পেশ হলে সেটিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এখন বিপদ হল লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে পশুখাদ্য মামলায় ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতের রায় দেওয়ার কথা। আবার কংগ্রেস সাংসদ রশিদ মাসুদকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে। ১ অক্টোবর সাজা ঘোষণার কথা। কংগ্রেস সূত্রে খবর, মূলত এই দু’জনের সদস্যপদ বাঁচাতেই সরকার তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স এনেছে। কেন্দ্রের আনা অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, দোষী সাংসদ-বিধায়করা সদস্য থাকতে পারবেন। তবে আইনসভায় ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। পাবেন না বেতনও।
সরকার তথা কংগ্রেসের এই সঙ্কট দেখেই এখন অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা শুরু করেছে বিজেপি। তারাও কিন্তু গোড়ায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পক্ষে ছিল না। অনেকের মতে, এখন আম-আদমির মনোভাব বুঝে বিজেপি উচ্চ নৈতিক অবস্থান নিতে চাইছে। তারা বোঝাতে চাইছে, দাগিদের বাঁচাতে কংগ্রেস মরিয়া। এখনই কোনও মামলায় বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হতে পারে এমন কোনও বিজেপি নেতা নেই।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির বক্তব্য, “সর্বোচ্চ আদালতের রায়ই শেষ কথা। নৈতিক প্রশ্ন হল, সুপ্রিম কোর্ট যদি আইনের কোনও ধারাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়, তার পরেও কি সংসদের সেই আইনটি নিয়ে গোঁ ধরা উচিত।” তাঁর বক্তব্য,“দোষী সাব্যস্ত আইনসভার সদস্য যদি আইন প্রণয়নের শরিক হন তাহলেই বা কেমন দেখাবে?”
অনেকের মতে, বিজেপির এই কৌশল আঁচ করেই রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের কিছু নেতা অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করছেন। দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, সরকারকে রাজনৈতিক চাপে এই পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। কিন্তু তা নিয়ে কংগ্রেসের সবাই যে খুশি তা নয়। অবশ্য কংগ্রেস মুখপাত্র রাজ বব্বর আজ জানান, সরকার কোনও অনৈতিক কাজ করেনি। কারণ, সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, তার নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। যেমন কোনও ব্যক্তি নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ধরা যাক ইস্তফা দিলেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেলেন। আর এর মাঝে তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে অন্য প্রার্থী জিতে গেলেন। তাহলে ওই নেতার প্রতি অবিচার করা হবে।
তবে এই অবস্থায় মূল প্রশ্নটি হল, রাষ্ট্রপতি কি শেষ পর্যন্ত অর্ডিন্যান্সে সই করবেন? প্রণব-কপিল বৈঠকের পর সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতিকে অর্ডিন্যান্সের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হয়েছে। আশা শীঘ্রই তিনি অর্ডিন্যান্সে সই করে দেবেন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.