একটাই প্রশ্ন জাপানে, মোদী কি পারবেন
কী বলা যায় একে? নিছক কৌতূহল! নাকি এক সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনার আগাম উত্তর খোঁজা?
টোকিওয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ঠিক উল্টো দিকে একটি পাঁচতারা হোটেলের রেস্তোরা। চার ভারতীয় সাংবাদিককে এখানেই প্রাতরাশে ডেকেছিলেন জাপানের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মিনোরু কিউচি। ঘণ্টা দেড়েকের আলোচনায় উঠে আসছিল দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের নানা প্রসঙ্গ। এক চামচ ডেসার্ট মুখে দিয়ে তাঁর শেষ প্রশ্নটা করে ফেললেন কৌতুহলী কিউচি ভারতের সাধারণ নির্বাচনের কী খবর? পর ক্ষণেই পাশে বসা বিদেশ মন্ত্রকের আমলা মাকাতো মাতসুদার দিকে তাকিয়ে কিউচি বললেন, “কী যেন ভদ্রলোকের নাম? কী যেন মোদী?” ধরতাই দিলেন মাতসুদা, “নরেন্দ্র মোদী!” ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে তাঁর প্রধান আগ্রহ এ বার প্রকাশ করলেন কিউচি, “হ্যাঁ নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কেমন সম্ভাবনা? উনিই কি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন?”
ভারতীয় সাংবাদিকরা কী জবাব দিলেন, তা হয়তো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার থেকেও ঢের বেশি তাৎপর্যের নরেন্দ্র ভাই দামোদর ভাই মোদীকে নিয়ে জাপানে অপার আগ্রহটা।
কিউচি-র সঙ্গে বৈঠকের পর দিন কথা হচ্ছিল জাপানের ঝকঝকে তরুণ ডায়েট-সদস্য সুজুকি কিউসুকের সঙ্গে। মোদীকে নিয়ে আগ্রহে কিউচি-র সঙ্গে বিন্দুমাত্র ফারাক ছিল না প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের এই তরুণ সতীর্থেরও। এখানেও শেষ নয়। টোকিও শহরে গত চার দিনে জাপানের স্বনামধন্য সব শিল্প সংস্থার অন্তত তিন ডজন কর্ণধারের সঙ্গে কথাতেও বার বার উঠেছে সেই এক কৌতুহলী প্রশ্ন মোদীর কপালে কি শিকে ছিঁড়বে? তা সে টয়োটার কর্পোরেট প্ল্যানিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার তোশিয়াকি মিনামোতো হোক, বা দাইইচি লাইফের জেনারেল ম্যানেজার মাসাআসু কিতাই কিংবা নোমুরা হোল্ডিংসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তাকেহিকো হিরোতানি। জাপানের সংবাদমাধ্যম তথা এনএইচকে-র সম্পাদক হিরোসি হিরোরও ভারত নিয়ে মূল কৌতূহল এখন সেই এক।
কিন্তু লোকসভা ভোটের এত আগে থেকে মোদীকে ঘিরে জাপানের এত আগ্রহ কীসের?
জাপানের বণিকসভা ‘কিজাই কোহো সেন্টার’-এর সেক্রেটারি জেনারেল হিরোসি নাকায়ামার কথায়, “একটা কারণ হতে পারে যে গুজরাতে জাপানের শিল্প সংস্থার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ইদানিং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত বছর জুলাইয়ে জাপানে আসেন মোদী। সেখানে গুজরাতের সম্ভাবনা তিনি সুনির্দিষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তার পরেই গুজরাত ও মোদী সম্পর্কে জাপানের আগ্রহ বেড়েছে।” নাকায়ামা জানালেন, “এটা ঠিকই রাজকোটে কারখানা পত্তন করতে গিয়ে জমি মালিকদের বাধার সন্মুখীন হতে হয়েছে সুজুকির মালিককে। আবার এটাও ঠিক সার্বিক ভাবে গুজরাতে জাপানের সংস্থাগুলির অভিজ্ঞতা বেশ ভাল। কেন না গুজরাতে তাঁদের আমলাতান্ত্রিক ঢিলেমি পোহাতে হয়নি। সরকার খুবই সহযোগিতা করেছে।”
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশান্ত মহাসাগরের প্রভাবশালী দ্বীপরাষ্ট্র থেকে উড়ে যাওয়া এই খবরে উৎসাহী স্বয়ং মোদীও। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, “শুধু জাপান কেন, যে কোনও বিদেশি লগ্নিকারীর জন্য অনুকূল পরিবেশ রচনায় গুজরাত সরকার তৎপর। সে ক্ষেত্রে তাদের খুঁটিনাটি সুবিধার কথাটুকুও গুজরাত সরকার খেয়াল রাখে। যেমন, জাপানের শিল্পপতিরা গল্ফ খেলতে পছন্দ করেন। সে জন্য গুজরাতের বিভিন্ন জায়গায় নতুন গল্ফ কোর্স তৈরি করছি। আনুসঙ্গিক অন্যসব ব্যবস্থাও আধুনিক করা হচ্ছে।”
অবশ্য টোকিওর ‘সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এর অধ্যাপক ইউকিফুমি তাকেউচি মোদী সম্পর্কে তাঁর দেশের আগ্রহ ব্যাখ্যা করতে চাইলেন অন্য ভাবে। তাঁর কথায়, আগামী দিনে ভারতে জাপান যে বিপুল বিনিয়োগ করতে চাইবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কারণ, ভারতের বিরাট বাজারে অসীম সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে। অথচ বিনিয়োগ করতে গিয়ে জাপানের সংস্থাগুলিকে সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছেন। প্রথমত কেন্দ্রের কর নীতি, জমি অধিগ্রহণ নীতি, বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। পাশাপাশি গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইউপিএ সরকারের নীতি-পঙ্গুত্ব এবং আর্থিক সংস্কারের মন্থর গতিও হতাশা বাড়িয়েছে জাপানের। তার ওপর এক এক রাজ্যে এক এক রকম নিয়মকানুন। ফলে যে সব প্রকল্প একাধিক রাজ্যের মধ্যে বিস্তৃত, সেখানে সমস্যা হচ্ছে সব থেকে বেশি। তার অন্যতম নির্দশন পূর্ব-পশ্চিম ফ্রেট করিডর। টাকার অবমূল্যায়ন নিয়েও জাপানের শিল্পমহল চিন্তিত। এই অধ্যাপকের মতে, জাপানের শিল্প ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব মনে করছেন, ভারতে এমন এক জন নেতার প্রয়োজন, যিনি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে দিক থেকে গুজরাতের দৃষ্টান্তই মোদী সম্পর্কে তাঁদের আশা জাগিয়ে তুলছে।
যদিও জাপানের এই আগ্রহকে আমল দিতে রাজি নন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী, রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, “হয়তো জাপানের শিল্পপতিরা শুধুই শিল্প-বাণিজ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.