অভিমানী আডবাণীকে উপেক্ষা দলের
কটা দল দুই ছবি! একদিকে হতাশা আর বয়কট, অন্য দিকে ঘোষণা আর উচ্ছ্বাস।
নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা নিয়ে আপত্তি ফের স্পষ্ট করে দিয়ে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বয়কটই করলেন অভিমানী লালকৃষ্ণ আডবাণী। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহকে চিঠি লিখে নিজের হতাশা ও অসন্তোষ খোলাখুলি জানিয়েও দিলেন প্রবীণ এই বিজেপি নেতা। আর সেই অভিমান-আপত্তি-হতাশা-বয়কটকে উপেক্ষা করেই আরএসএসের ইশারা মেনে আজ নরেন্দ্র মোদীকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিল বিজেপি।
এই ঘোষণাটা যে হবে, তা এক রকম নির্ধারিতই ছিল। সেই মতো প্রস্তুতিও ছিল। তাই ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা উৎসবে মেতে উঠলেন। বাজি পুড়ল, বিলি হল লাড্ডু, কোথাও কোথাও আবির উড়িয়ে তাসা পার্টিও নামল পথে।
এই সপ্তাহের গোড়ায় দিল্লিতে সঙ্ঘ ও বিজেপির বৈঠকেই সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, পিতৃপক্ষের আগেই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিতে হবে। কিন্তু সঙ্ঘের এই সিদ্ধান্তে সায় দেননি আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, মুরলী মনোহর জোশীর মতো বেশ কয়েক জন প্রথম সারির নেতা। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা নিয়ে দলের অন্তর্কলহ মেটাতে গত দু’দিন ধরে সব পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন রাজনাথ। ভাগবত-ঘনিষ্ঠ সঙ্ঘ নেতা ভাইয়াজি জোশীও এ নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে দিল্লি চলে আসেন। সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে সুষমা ও জোশী শেষ পর্যন্ত মোদীকে মেনে নিতে সম্মত হন। কিন্তু আডবাণী নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। তাতেও অবশ্য মোদীকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করেনি বিজেপি-সঙ্ঘ। প্রধানমন্ত্রী পদে নাম ঘোষণার পরেই মোদী তাঁর প্রাক্তন ‘রাজনৈতিক গুরু’র আশীর্বাদ নিতে আডবাণীর বাড়িতে যান।
শত বিরোধিতাতেও ঠেকানো গেল না মোদীকে। প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী
হিসেবে নাম ঘোষণার পরে সুষমার শুভেচ্ছা। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
মোদীকে যাতে আডবাণী মেনে নেন, তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনাথ-সুষমা-নিতিন গডকড়ীর মতো শীর্ষ নেতারা আজ দফায় দফায় তাঁর বাড়িতে যান। কিন্তু আডবাণী নরম হননি। উল্টে দলের সভাপতিকে চিঠি লিখে আডবাণী প্রশ্ন তুলে বসেন সভাপতি হিসেবে রাজনাথের কর্মপদ্ধতি নিয়েই। চিঠিতে আডবাণী লিখেছেন, “দুপুরে যখন আপনি এসেছিলেন, তখন আমার মনের ব্যথা ও আপনার কর্মপদ্ধতি নিয়ে আমার হতাশা ব্যক্ত করি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজকের বৈঠকে না যাওয়াটাই উচিত হবে।” সঙ্ঘের চাপেই আডবাণীকে ‘একঘরে’ করে দিয়ে রাজনাথ আজ মোদীর নাম ঘোষণার ঝুঁকি নিতে পেরেছেন। এ দিন সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে আডবাণী ছাড়া বাকি সকলেই হাজির ছিলেন। বৈঠক নমো-নমো করে সেরেও ফেলা হয়। তার মধ্যেই আমদাবাদ থেকে উড়ে আসেন মোদী। এই অবস্থায় সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক তড়িঘড়ি শেষ করেই সাংবাদিক বৈঠকে বসে পড়েন বোর্ডের সদস্যরা।
সাংবাদিক বৈঠকে মোদীকে মধ্যমণি করে রাজনাথ ঘোষণা করেন, জনতা ও দলীয় কর্মীদের কথা বিবেচনা করেই নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হল। এর পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদী বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের জন্য পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখব না। কোটি কোটি দেশবাসীর আশীর্বাদও চাই তার জন্য। আমার বিশ্বাস, দেশকে সঙ্কট থেকে বের করে আনতে আমরা সক্ষম হব।”
মোদীর নাম যখন ঘোষণা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় তাঁর পাশে বসে ছিলেন সুষমাও। তিনিও মোদীকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু মোদীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির সদর দফতরে যে উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়ে গেল, তাতে শরিক হলেন না সুষমা। সাংবাদিক বৈঠক শেষে দলের দফতরে তড়িঘড়ি তৈরি করা মঞ্চেও এলেন না বিজেপির এই নেত্রী।
বিজেপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এত দিন ধরে দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা নিয়ে অন্তর্কলহেই ব্যস্ত ছিলেন। অনেকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বকে দিয়ে এত দিন যেটা সম্ভব হচ্ছিল না, আজ সেই কাজটাই করে দিলেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। কংগ্রেসে গাঁধী পরিবারের যে ভূমিকা, বিজেপিতে সেই কাজটাই করতে হয় সঙ্ঘকে।
উচ্ছ্বাস। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণার পরে। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এএফপি-র ছবি।
কিন্তু মোদীর এই অভিষেকে আডবাণীর অনুপস্থিতি যে দলের চলার পথে বড় কাঁটা হয়ে রইল, সেটি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতারা। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এ কথা ঠিক, গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার সময় এই আডবাণীই মোদীকে আড়াল করেছিলেন। তা না হলে অটলবিহারী বাজপেয়ী তো মোদীকে সরাতেই চেয়েছিলেন। মোদীর উত্থানের পিছনেও আডবাণীর অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু আডবাণীরও বোঝা উচিত, এখন তাঁর জমানার অবসান হয়েছে। মানুষ এখন মোদীকে চাইছে।” বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “আডবাণী এই বৈঠকে এলে নিশ্চয়ই ভাল হত। তাঁর না আসাটা হতাশাজনক। কিন্তু দলকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দলের লক্ষ-কোটি কর্মী-সমর্থকের ইচ্ছাকেও মর্যাদা দিতে হয়।” আর স্বল্প সময়ের জন্য চলা সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে আডবাণীর হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সুষমা জানিয়ে দেন, প্রবীণ নেতা আডবাণীকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারলেই ভাল হোত বিজেপির। এমন একটা ঘোষণার সঙ্গে আডবাণীকে যুক্ত করতে না পারাটা দলের নেতাদের ‘ব্যর্থতা’ বলেই চিহ্নিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণার আগে জোটের শরিক শিবসেনা ও অকালি দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন রাজনাথ। মোদী নিজেও ওই শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে ও অকালি নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল দু’জনেই বিজেপির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। বিজেপির এক নেতা বলেন, “মোদীর নামে আপত্তি তোলায় যখন নীতীশ কুমারকে জোট ছেড়ে চলে যেতে দেওয়া হয়েছিল, সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার পথ প্রশস্ত হয়ে গেল। এ বারে লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচন।”

১০টা সুষমার বাড়িতে অনন্ত কুমার
১১টা সুষমার বাড়িতে গডকড়ী
১১টা ৪৫ আডবাণীর কাছে গডকড়ী
বেলা ১টা আডবাণীকে বোঝাতে গেলেন সুষমা, অনন্ত কুমার
বেলা ৩টে আডবাণীর কাছে রাজনাথ
বিকেল ৪টে ৪৫ দিল্লি এলেন নরেন্দ্র মোদী
৫টা ১০ রাজনাথের বাড়িতে মোদী
৫টা ৩০ সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক শুরু
সন্ধ্যা ৬টা মোদীর নাম ঘোষণা
৭টা ৩০ আডবাণীর আশীর্বাদ চাইতে গেলেন মোদী

লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের জন্য পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখব না। দেশবাসীর আশীর্বাদও চাই। আমার বিশ্বাস, দেশকে সঙ্কট থেকে বার করে আনতে সক্ষম হব।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.