|
|
|
|
আডবাণীরা ব্রাত্যই, মোদীর নাম ঘোষণার পথে বিজেপি
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং সুষমা স্বরাজের আপত্তি উপেক্ষা করেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণা করতে চলেছে সঙ্ঘ পরিবার।
প্রথাগত ভাবে এই ঘোষণা করবে বিজেপি-র সংসদীয় বোর্ড। যার বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামিকাল বিকেলে। দিল্লিতে থাকতে বলা হয়েছে বোর্ডের সব সদস্যকে। সরসঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত মনে করছেন, আগামিকালই মোদীর নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়া ভাল। কেননা যত দেরি হবে, ততই ঘোলা হবে জল।
মোদীর নাম চূড়ান্ত করার পিছনে কারণ মূলত দু’টি।
প্রথমত, এই মুহূর্তে তিনি দলের জনপ্রিয়তম নেতা। বিজেপি নেতা-কর্মীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁকেই চাইছেন। দলের নিচুতলায় মোদীর জনপ্রিয়তা কতটা, সেটা সম্প্রতি ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থানের সভাতেই বোঝা গিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সঙ্ঘ পরিবারকে মোদী জানিয়েছেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে হিন্দুত্বের কর্মসূচিকে তিনি বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেবেন। আরএসএস চাইছে— রামমন্দির নির্মাণ, সংবিধানের ৩৭০ ধারা (জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা) বিলোপ ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এই তিনটি সাবেক বিষয়কে বিজেপি ফের সামনে নিয়ে আসুক। সেই সঙ্গে গো-হত্যা নিবারণের বিষয়টিকেও কর্মসূচিতে আনা হোক। সম্প্রতি ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, মতাদর্শগত এই সব বিষয়কে তিনি প্রচারে অগ্রাধিকার দেবেন।
তবে মোদী নিজে এবং দলে তাঁর অন্যতম সমর্থক অরুণ জেটলি মনে করেন, ১৯৯১ সালের হিন্দুত্ব এবং আজকের হিন্দুত্বের মধ্যে ফারাক বিস্তর। এখন মনমোহন সিংহের সরকারের দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বের অভাব এবং সন্ত্রাস দমনে কড়া মনোভাব নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রচার চালাতে হবে। তাঁরা চান, শক্তিশালী রাষ্ট্র, শক্তিশালী জাতি, শক্তিশালী নেতা এই হোক বিজেপি-র ভোট প্রচারের মূল স্লোগান।
সঙ্ঘ পরিবার মোদীর নামে সিলমোহর দিলেও বিজেপি সংসদীয় বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য কিন্তু তাঁর পক্ষে নন। আডবাণী-সুষমা তো বটেই, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অনন্ত কুমার, মুরলীমনোহর জোশী, নিতিন গডকড়ীও প্রাথমিক ভাবে মোদীকে নিঃশর্ত সমর্থনের পক্ষপাতী ছিলেন না। সে জন্য গত কয়েক দিনে এই সব নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করে সঙ্ঘের ফরমান জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। গত কাল আডবাণীর বাড়িতে গিয়েও আধ ঘণ্টা কথা বলেছেন তিনি। আডবাণী অবশ্য রাজনাথকে জানিয়েছেন, তিনি মোদীর বিপক্ষেই মত দেবেন। কারণ তিনি মনে করেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে বিজেপি দু’শো আসন পাবে না। এবং তখন এনডিএ-র পক্ষে নতুন শরিক পাওয়া কঠিন হবে। নীতীশ কুমার থেকে শুরু করে নবীন পট্টনায়ক বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই মোদীর সঙ্গে নিজেদের জড়াবেন না। আডবাণী রাজনাথকে বলেছেন, দল চাইলে তাঁর মত উপেক্ষা করেই মোদীর নাম ঘোষণা করে দিক।
কিন্তু আগামিকাল সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক হলে কী করবেন আডবাণী? তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এখনও পর্যন্ত বৈঠকে হাজির থাকার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তিনি। আডবাণীর কৌশল হলো, বৈঠকে থেকে আপত্তি নথিভুক্ত করা। তাতে যদি শেষ পর্যন্ত একা হয়ে যান, তা হলেও গোয়ার দলীয় কর্মসমিতির বৈঠকের মতো গরহাজির থাকার কৌশলের পুনরাবৃত্তি করবেন না। কাল দিল্লির বাইরে থাকার কথা থাকলেও সুষমা শেষ পর্যন্ত বোর্ডের বৈঠকে থাকবেন বলেই খবর।
এই অবস্থায় আজ গভীর রাত পর্যন্ত সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি নেতৃত্ব চেষ্টা করছে সংসদীয় বোর্ডের বাকি সদস্যদের মোদীর পক্ষে এনে আডবাণী-সুষমাকে একঘরে করে ফেলতে। বিক্ষুব্ধ কণ্ঠগুলি এক এক করে আয়ত্তে আনছেন রাজনাথ। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান আপত্তি জানিয়েও সঙ্ঘের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেছেন।
মোদীর নাম ঘোষণার শর্ত হিসেবে গত কাল সুষমারা যে দাবি তুলেছিলেন, তা-ও আজ খারিজ করে দিয়েছে দল। বিজেপি-র দুই নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং নলিন কোহলি বলেন, “আমরা চাই, মোদী মুখ্যমন্ত্রী থেকেই এই দায়িত্বভার গ্রহণ করুন। কেননা গোটা দেশ জুড়ে প্রচারের সময় তাঁর সরকারি নিরাপত্তা থাকাটাও জরুরি।” বস্তুত আডবাণীদের আপত্তিকে যে দল আর গ্রাহ্য করছে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে রাজনাথ এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, “(মোদীর নাম ঘোষণা নিয়ে) দলে কেউ অখুশি নন, কেউ কোনও শর্তও দেননি।”
সংসদীয় বোর্ডের বাইরেও মোদীর পক্ষে মুখ খোলার পর্ব শুরু হয়েছে। বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী গত কাল টুইট করেছিলেন, ‘আডবাণীজি মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ’। আজ তিনি বলেন, “আজ আমি যা, তা আডবাণীজির জন্যই। তিনি আমাদের সব চেয়ে বড় নেতা। কিন্তু বিজেপি-র সর্বস্তরের কর্মীরা কী চাইছেন, সেটা বুঝতে পারছেন না তিনি।”
আডবাণী শিবিরও অবশ্য বসে নেই। আডবাণীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুধীন্দ্র কুলকার্নি আজ মোদীর নাম না-করেই টুইট করেছেন, ‘সামাজিক মেরুকরণের নেতা দলেই মেরুকরণ করে ফেলেছেন। তাঁর পক্ষে কি কেন্দ্রে স্থায়ী, কার্যকরী একটা সরকার মসৃণ ভাবে চালানো সম্ভব? কথাটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।’
ফলে রাজনাথ যা-ই বলুন, শেষ পর্যন্ত মোদীর নাম ঘোষণা হলেও এই প্রশ্নে দল যে দ্বিধাবিভক্ত, সেটা চাপা থাকছে না। বলা যেতে পারে, দিল্লিতে এখন গোয়ার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গোয়াতে আডবাণী ও সুষমার আপত্তি সত্ত্বেও মোদীকে প্রচার সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীও ঘোষণা করা হতে চলেছে।
|
পুরনো খবর: সুষমাদের নয়া শর্তে জট বাড়ল মোদীকে ঘিরে |
|
|
|
|
|