ওরা এ কাজ করেছে! স্তম্ভিত রবিদাস ক্যাম্প
ই যে তালা বন্ধ বাড়িটা, ওটাতেই থাকত রাম সিংহ আর তার ভাই মুকেশ। শেষের দিকে অক্ষয় ঠাকুরও থাকতে শুরু করেছিল।
দক্ষিণ দিল্লির আর কে পুরমের রবিদাস ক্যাম্প। বস্তির এক কোণে কানাগলির একেবারে শেষে দু’কামরার ছোট্ট বাড়ি। সবুজ রঙের দরজার বাইরে তালা ঝুলছে। বস্তির প্রধান বিহারী লাল শ্রীবাস সে দিকে আঙুল তুলে বললেন, “এই একটা বাড়ি গোটা বস্তির মুখে চুনকালি লেপে দিল!” ওই বাড়িতে যাওয়ার পথেই সরু গলির মধ্যে পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মার বাড়ি। তাদের পরিবারও বস্তিতেই থাকেন।
গোটা বস্তিতে ১৭০টি বাড়ি। গায়ে গায়ে লাগানো। গলি দিয়ে পাশাপাশি দু’জন হাঁটতে অসুবিধা হয়। সব মিলিয়ে হাজার দেড়েক বাসিন্দা। সকলেই সকলকে এক ডাকে চেনেন। ১৬ ডিসেম্বরের দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনার পর থেকে ন’মাস কাটতে চলেছে। কিন্তু এখনও রবিদাস ক্যাম্পের বাসিন্দা, বিশেষ করে মহিলারা একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি। এত দিনের চেনা মুখগুলো কী ভাবে এত নৃশংস হয়ে গেল?
নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও খুনের মামলার বিচার চলাকালীনই জেলে রাম সিংহের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ১৭ বছরের নাবালক অপরাধীর সাজা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। বাকি চার জন— মুকেশ সিংহ, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত এবং অক্ষয় ঠাকুর দোষী সাব্যস্ত। সাকেতের ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে শুক্রবার বেলা আড়াইটেয় তাদের সাজা ঘোষণা। তার ২৪ ঘণ্টা আগে রবিদাস ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মনে একটাই প্রশ্ন, চার জনেরই কি ফাঁসি হবে?
গত ন’মাস এই বস্তির বাসিন্দাদের লজ্জা আর অস্বস্তির সীমা নেই। পাশের বাড়ির ছেলেদের কীর্তিকলাপে শিউরে উঠেছেন। বস্তির ছেলেদের ফাঁসির দাবিতে কী ভাবে দিল্লি রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছে, সাক্ষী হয়েছেন তার।

রাম সিংহের ঠিকানা, বস্তি রবিদাস ক্যাম্প। —নিজস্ব চিত্র
বস্তিতে ঢোকার মুখেই খাটিয়ায় বসে প্যায়ারে লাল। ঠিক যেখানে ১৬ ডিসেম্বর দিনভর অভিশপ্ত সাদা বাসটি ছিল। প্যায়ারে লাল বলছিলেন, “সারা দিন এখানেই বাসটা দাঁড় করানো ছিল। বাচ্চারা বাসের চারপাশে লুকোচুরি খেলছিল। রাত্রিবেলা ওরা বাস নিয়ে হইহই করতে করতে বেরিয়ে পড়ল। পবন ও বিনয়ও বাসে উঠল।” প্যায়্যারে লালের স্ত্রী সোমবতী ফোটোগ্রাফার, টিভি ক্যামেরা দেখলেই ঘোমটায় মুখ আড়াল করেন। “আত্মীয়-স্বজনরা টিভিতে-কাগজে ছবি দেখলে কী ভাববে! এমনিতেই বস্তির বদনাম হয়েছে। ছেলেমেয়েরা সর্বোদয় স্কুলে পড়তে যায়। লজ্জায় বাড়ির ঠিকানা বলে না।” উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কলেজে পড়ে। কিন্তু টিভি ক্যামেরা বা ফোটোগ্রাফার দেখলেই তাঁরা এখন মুখ ঘুরিয়ে নেন। পরিচয়ও দিতে চান না। কোনও দিন ভেবেছিলেন, পাড়ার ছেলেরা এমন করবে? সোমবতী বলেন, “যে ভাবে মেয়েটার উপর অত্যাচার চালিয়েছে, খুন করেছে, প্রথম বার শুনে বিশ্বাসই করতে পারিনি। শিউরে উঠেছিলাম।” দেখে মনে হয়েছিল, এরা এই ধরনের অপরাধ করতে পারে? সোমবতীর জবাব, “রাম সিংহের স্বভাব-চরিত্র ভাল না। মুকেশটাও ওই রকম। নেশা করে গণ্ডগোল পাকাতো। কিন্তু বিনয়, পবনকে দেখে কখনওই ভাবিনি। বিনয় তো জিমে চাকরির টাকা দিয়েই পড়াশোনার খরচ চালাত। মিশুকে ছেলে। দেখলেই বলত, নমস্তে চাচি। রক্তদান শিবিরে যেত। পুজোআচ্চা করত। পবনও খারাপ ছিল না। কুসঙ্গে পড়ে গেল। যা করেছে, ওদের ক্ষমা করা যায় না।”
২০ বছরের বিনয়ের বাবা হরিরাম শর্মা দিল্লি বিমানবন্দরে সাফাইকর্মী। যে ছেলে নিজের খরচায় ইগনু থেকে বিকম পড়ে, সে কী করে খুন-ধর্ষণ করে? প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু তার পরে ছেলে নিজের মুখেই দোষ স্বীকার করেছে। বড় ছেলের ঘরে ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছেন হরিরাম। স্ত্রী, দুই কিশোরী মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়েই শুক্রবারের সাজা ঘোষণার জন্য দমবন্ধ অপেক্ষায় তিনি। পবনের বাবা-মা হীরালাল ও ইন্দিরা ফলের রস বেচে সংসার চালান। পবনও দোকানের কাজে সাহায্য করত। ১৬ ডিসেম্বর দোকান খোলেননি ইন্দিরা। এখন আফশোস, খুললে পবন তো সেখানেই থাকত। ১৯ বছরের পবনের তিন ছোট বোন। তার এক জন ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গিয়েছে। বস্তির প্রধান বিহারী লাল বলেন, “মেয়েটা এমনিতেই রুগ্ণ ছিল। তার মধ্যে দাদার এই কাণ্ড। ও বোধহয় দুঃখেই মরে গেল!”
রাম ও মুকেশ সিংহের পরিবারের জন্য কারওরই কোনও সহানুভূতি নেই। প্রথমে স্ত্রী-কে নিয়ে অন্য জায়গায় থাকলেও চার বছর আগে বস্তিতে ফিরে আসে রাম। প্রতিবেশীরা বলছিলেন, রোজই নেশা করত সে। পাড়ার লোকের সঙ্গে ঝগড়াও। রামের আর এক ভাই সুরেশ বিরক্ত হয়ে অন্যত্র চলে যায়। গত বছর দীপাবলির সময় বাবা-মাও ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রাজস্থানে চলে যান। তার পরেই বাসের হেল্পার অক্ষয় ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করে। ১৭ বছরের যে নাবালক অপরাধী বাস ধোয়ার কাজ করত, সে-ও জোটে। তার পর প্রতি রাতেই ওই বাড়িতে নেশা-মারামারি-হইহল্লা চলত।
কানাগলির শেষে ওই এক চিলতে বাড়ি যে গণধর্ষণ-খুনের অপরাধীদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে, তা কোনওদিনই ভাবতে পারেনি রবিদাস ক্যাম্প।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.