ধনঞ্জয়ের নাম করে ফাঁসির আবেদন, রায় কাল
কাল থেকেই চোখ টিভি পর্দায়। নির্ভয়া মামলায় কী সাজা হয়, জানতে উদ্গ্রীব দেশ।
বেলা প্রায় ১১টা। প্রিজন ভ্যানে করে তিহাড় জেল থেকে কড়া নিরাপত্তার বলয়ে চার অপরাধীকে নিয়ে আসা হল সাকেতের ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বাদী-বিবাদী দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনলেন বিচারক যোগেশ খন্না। উঠে এল হেতাল পারেখ মামলার প্রসঙ্গও। শেষে বিচারক জানালেন, আজ নয় ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেলা আড়াইটের পর সাজা ঘোষণা করবেন তিনি।
কেন দোষীদের ফাঁসিই হওয়া উচিত, তার সওয়াল করতে গিয়ে আজ সরকারি আইনজীবী ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের উদাহরণ টেনে আনেন। তিনি বলেন, নির্ভয়া মামলায় অভিযুক্তেরা ধনঞ্জয়ের থেকে কোনও অংশে কম অপরাধ করেনি। ওই অভিযুক্তেরা যে ভাবে নির্ভয়ার উপরে অকথ্য অত্যাচার করেছে, তাতে তাদের ফাঁসি ছাড়া আর অন্য কোনও শাস্তি হতেই পারে না। ১৯৯০ সালে কলকাতায় ভবানীপুরের বাড়িতে ১৪ বছরের কিশোরী হেতাল পারেখকে বাড়িতে একলা পেয়ে খুন ও ধর্ষণ করেছিল নিরাপত্তারক্ষী ধনঞ্জয়। এর পর ২০০৪ সালের ১৪ অগস্ট ভোরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি হয় ধনঞ্জয়ের। সেই মামলার রায়েও তাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন বিচারপতিরা। দিল্লি গণধর্ষণ মামলার রায়েও সে একই কথা বলেছেন বিচারক যোগেশ খন্না।
তবে এ দিন অভিযুক্তদের আইনজীবীর তরফে তাদের একটা শেষ সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। অভিযুক্তের আইনজীবীরা তাঁদের সওয়ালে বলেছেন, অভিযুক্তদের বয়স কম। তাই তাদের সংশোধনের একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। এজলাসে দাঁড়িয়ে চার অপরাধীর মধ্যে থেকেও এক জন চেঁচিয়ে উঠে বলে, “আমি নির্দোষ।” পরে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ও সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে নিজেকে নির্দোষ বলে চেঁচাতে থাকে সে। তবে মুখ ঢাকা থাকায় সে ঠিক কোন জন, তা বোঝা যায়নি।

প্রতিবাদের মুখ। দিল্লিতে আদালতের বাইরে। বুধবার। ছবি: রয়টার্স।
এ দিন পুরো সময়টা আদালতকক্ষের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় নির্ভয়ার মাকে। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারকের উদ্দেশে হাত জোড় করে তিনি বলে ওঠেন, অকথ্য অত্যাচারের পরে যখন নির্ভয়া অপরাধীদের কাছে প্রাণভিক্ষা করেছিল, তখন অপরাধীরা তাঁকে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। তা হলে কোন অধিকারে অপরাধীরা প্রাণভিক্ষা করতে পারে? “সিঙ্গাপুরে মেয়ের মৃত্যুশয্যায় প্রতিজ্ঞা করেছি, অপরাধীরা চরমতম শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাব না,” বলেন তিনি। পরে নির্ভয়ার বাবাও বলছিলেন, “মৃত্যুশয্যায় অত কষ্টের মধ্যেও মেয়ে আমাকে বলেছিল ও অপরাধীদের মৃত্যু চায়। তার শেষ কথাগুলো আমাকে এখনও তাড়া করে বেড়ায়। আমরা ওদের মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না।”
এ দিন আদালত কক্ষে সবার প্রথমে অভিযুক্তদের এক আইনজীবী ভিকে আনন্দ বিচারকের কাছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দের মন্তব্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার আবেদন জানান। গত কাল সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে শিন্দে চার অপরাধীরই ফাঁসি হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। আনন্দের অভিযোগ ছিল, এ ভাবে বিচারকের রায়ের আগে কেউ সাজা নিয়ে বলতে পারেন না। আদালত অবশ্য অভিযুক্তের আইনজীবীর এই আবেদন খারিজ করে দেন। এর পরে দু’পক্ষের বক্তব্য শুনতে চান বিচারক খন্না।
অভিযুক্ত বিনয় শর্মার আইনজীবী এ পি সিংহ আদালতের কাছে আবেদন জানান, তাঁর মক্কেল এক জন ভাল ছাত্র। তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরীক্ষায় বসতে তৈরি হচ্ছিলেন। বিনয় সম্পূর্ণ নির্দোষ বলেও দাবি করেন এপি সিংহ। ১৯ বছরের অভিযুক্ত পবন গুপ্তর আইনজীবী জানান, পবন এই ন’মাস জেলে থাকার সময়ে কোনও খারাপ আচরণ করেনি। তিনি এ কথাও বলেন, “মৃত্যুদণ্ড মানুষের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ। খুনি কখনও তৈরি হয়েই জন্মায় না। পরিস্থিতিই তাকে তৈরি করে।” অভিযুক্ত পক্ষের আর এক আইনজীবী এপি সিংহ আবার মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর কথা উল্লেখ করে বলেন, “ভগবান প্রাণ সৃষ্টি করেছেন। এক মাত্র ভগবানেরই তা নেওয়ার অধিকার আছে।”
গত কাল বিশেষ আদালতের বিচারক যোগেশ খন্না চার অভিযুক্তকে দোষী ঘোষণা করার সময়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, শাস্তি কড়া হতে চলেছে। ধর্ষিতার মেডিক্যাল রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, বছর তেইশের ওই তরুণীর শরীরে এমন ভাবে লোহার রড ঢোকানো হয়েছিল যে ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ বেরিয়ে এসেছিল দেহের বাইরে। রায়ে সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে বিচারক খন্না বলেছিলেন, শুধু আঘাত করার জন্য কেউ এতটা নৃশংস হয় না। গণধর্ষণ ও খুনের পাশাপাশি মুকেশ-বিনয়-অক্ষয় ও পবনকে অপহরণ-ডাকাতি-চক্রান্ত-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার মতো মোট ১৩টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত।
নির্ভয়ার মৃত্যুর পরে ধর্ষণবিরোধী নতুন আইন এসেছে। নয়া আইনে ধর্ষিতার মৃত্যু না হলেও ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। যদিও নির্ভয়া মামলায় চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুরনো আইনেই মামলা হয়েছে। কিন্তু ওই চার অপরাধীর বিরুদ্ধে যে সব দোষ প্রমাণ হয়েছে, তাতে ফাঁসি ছাড়া আর অন্য কোনও সাজাই যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন সরকারি পক্ষের আইনজীবী। বিশেষ সরকারি আইনজীবী দয়ান কৃষ্ণনও একই কথা বলেন। কৃষ্ণনের বক্তব্য, “এদের এমন একটা শাস্তি হোক যা দেখে পরে আর কেউই এমন অপরাধ করতে সাহস পাবে না।”

পুরনো খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.