কামদুনির মাকে সাহস দিলেন নির্ভয়ার মা
দুই বিধ্বস্ত মা।
কয়েক মাসের ব্যবধানে দু’জনেরই মেয়ে গণধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছেন। নির্ভয়া মামলার সাজা ঘোষণা হতে চব্বিশ ঘণ্টাও বাকি নেই। আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই কামদুনি মামলারও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দুই মা-ই চাইছেন, খুনিদের ফাঁসি হোক। নির্ভয়া মামলায় সাজা ঘোষণার আগের সন্ধ্যায় এই দুই মায়ের মধ্যে কথা বলানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। সময়ের এবং ভবিতব্যের পাকচক্রে জীবন যাঁদের এক বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটে। নির্ভয়ার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হল। দৃঢ়, নিভাঁজ গলা। উত্তরপ্রদেশীয় হিন্দিতে বললেন, “শুধু ধর্ষণ নয়, যে নৃশংস ভাবে আমার মেয়ে খুন হয়েছে, তাতে শুধু আমি নই সকলেই দোষীদের চরম শাস্তি চান।”
কামদুনির ঘটনার কথা জানেন? গত ন’মাস ধরে যে ঝড় যাচ্ছে, তাতে খুব বেশি টিভি দেখা বা কাগজ পড়া হয়ে ওঠে না। কামদুনির নির্ভয়ার কথা আগে শোনেননি দিল্লির নির্ভয়ার মা।
এ বার শুনলেন। খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞাসা করলেন। নির্ভয়ার মতো কামদুনির মেয়েটিও বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে, তাঁরও দুই ভাই রয়েছে শুনে একটু চুপ রইলেন। তার পর বললেন, “ যে ভাবে সারা দেশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই ঋণ কোনও দিন শোধ হবে না। আমার মতো আর যাঁরা ভয়াবহ বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়েছেন বা দাঁড়াবেন, তাঁদের পাশে থাকব। আমি কামদুনির মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলব।” তাঁকে জানানো হল, সংবাদপত্র দফতর থেকে গাড়িতে কামদুনি পৌঁছতে ঘণ্টা দেড়েকের একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তার পর টেলিফোনে দু’জনকে কথা বলানো যাবে।
সন্ধ্যা তখন প্রায় ৬টা। কামদুনির নিহত ছাত্রীর বাড়িতে মাটির দাওয়ায় প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসে রয়েছেন বাবা-মা। সুটিয়ায় বরুণ বিশ্বাসের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় গিয়েছেন ছাত্রীর ভাইরা। বাবা-র সদ্য চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে। মা-ও বেশ অসুস্থ। দু’জনেই জানালেন, দিল্লির নির্ভয়া সম্পর্কে জানেন এবং আদালতের রায় শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। মৃতার মায়ের কথায়, “আমার মন বলছে, ওর যা রায় হবে আমার মেয়েরও তাই হবে। মনেপ্রাণে চাইছি ফাঁসি হোক। বিচারকদেরও তো ছেলেমেয়ে আছে। তাঁরা কি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বোঝেন না?”
নির্ভয়ার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান? “চাই। কিন্তু উনি কি বলবেন? আমি তো হিন্দি জানি না।”
নির্ভয়ার মাকে ফোন করা হল। টেলিফোন স্পিকার মোডে নিয়ে গিয়ে দু’জনকেই জানানো হল তাঁদের হিন্দি ও বাংলা কথার অনুবাদ করে দেবেন প্রতিবেদক।
কামদুনির ছাত্রীর মা: দিদি নমস্কার। আপনার মেয়ের কথা আমরা শুনেছি। আমরা গোটা কামদুনি কাল রায় শুনতে টিভির সামনে বসব। আমি চাই ওদের সবার ফাঁসি হোক। দিদি আমার মেয়েটাকেও মেরে ফেলল। পা দু’টো চিরে দিয়েছিল। মেয়েটা আমার সঙ্গে সন্ধ্যাবাতি দিত। আমি আর বাতি জ্বালাতে পারি না।
নির্ভয়ার মা: হিম্মত হারবেন না বহেনজি। লড়াই চালিয়ে যান। ঠিক ন্যায় মিলবে। আমি ঠিক করেছি, কাল কী রায় হয় দেখব। যদি ফাঁসি না হয়, সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যাব। আপনার মনের কী অবস্থা, সেটা বোধহয় আমি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। এক মাস হল মহাবীর এনক্লেভের বাড়ি ছেড়ে আমরা দ্বারকায় সেক্টর ১৯-এর বাড়িতে এসেছি। আগের বাড়িটার সর্বত্র ছড়ানো মেয়ের স্মৃতি আমাকে গিলতে আসছিল। এখানে এসেও স্বস্তি নেই। ছেলেরা কলেজে চলে যায়, স্বামী অফিসে যান। প্রতিটা মুহূর্ত মেয়ের স্মৃতি আমাকে কুরে-কুরে খায়।
কামদুনির ছাত্রীর মা: আমাকে অনেকে বলেন, ‘তোমার দুঃখ আমি বুঝছি।’ কিন্তু আমি জানি ওরা কিচ্ছু বুঝছে না। সামনে পুজো। মেয়েটা প্রতিবার একটার জায়গায় দু’টো নতুন জামার জন্য বায়না করত। বন্ধুদের সঙ্গে ফুচকা-আইসক্রিম খাওয়ার টাকা চাইত। এ বারে পুজো কী ভাবে কাটাব, ভাবতে পারছি না।
নির্ভয়ার মা: মেয়ের বয়সী অনেকে দেখা করতে আসে। তারা বলে, ‘আন্টি আমাদের আপনার মেয়েই ভাবুন।’ যতক্ষণ ওরা থাকে, মনে হয় সত্যি আমার মেয়ে সঙ্গে আছে। কিন্তু একটা সময় ওরা চলে যায়। ফের সব খালি।
কামদুনির ছাত্রীর মা: আপনারা অনেক দ্রুত রায় পর্যন্ত পৌঁছেছেন। আমাদের চার্জশিট দিতেই তিন মাস পার হল। জানি না কবে ন্যায় পাব।
নির্ভয়ার মা: বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রাখুন। আমার বিশ্বাস দেরিতে হলেও আমি-আপনি ন্যায় পাব।
কামদুনির ছাত্রীর মা: আপনারা সরকারকে পাশে পেয়েছিলেন। পুলিশও অনেক সাহায্য করেছে।
নির্ভয়ার মা: হ্যাঁ। কিন্তু আমরা কখনও নিজের মুখে সরকার বা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইনি। আমাদের বাড়িতে অনেক বড় নেতা-মন্ত্রী দেখা করতে এসেছেন। কাউকে এক বারের জন্যও বলিনি। আপনার কাছেও অনুরোধ, সরকার বা পুলিশের কাছে কাকুতি-মিনতি করবেন না। বিষয়টা ওঁদের বিবেকের উপর ছাড়ুন।
কামদুনির ছাত্রীর মা: রাজ্য সরকারের উপর এখনও আমাদের আস্থা আছে। দেখা যাক। কালকের জন্য আমি মনেপ্রাণে চাই অপরাধীদের ফাঁসি। এটা না হলে কোনও মেয়ে আর নিরাপদ থাকবে না।
নির্ভয়ার মা: আপনার কোনও প্রয়োজন হলে বলবেন। আপনার পাশে আছি। দিল্লি এলে দেখা করবেন।
কামদুনির ছাত্রীর মা: আমি অসুস্থ। কে আর দিল্লি নিয়ে যাবে। তবে যাওয়ার ইচ্ছা রইল। কাল আমরা সবাই টিভি দেখব।

পুরনো খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.