‘মসিহা’র উপরেই ক্ষুব্ধ মুসলিমরা, উদ্বিগ্ন সপা
প্রশ্নের মুখে এত দিনের সযত্ন লালিত ভাবমূর্তি। রাজ্যে প্রধান বিরোধী মায়াবতী নন, কেন্দ্রের সিবিআই-ও নয়, মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে ‘মৌলানা’ মুলায়মকে।
আর তার জেরেই টলমল হতে শুরু করেছে মুলায়ম সিংহ যাদবের দীর্ঘ দিনের সংখ্যালঘু সমর্থনের ভিত। শরীরী ভাষায় তা প্রকাশ না করলেও লোকসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুরা যে ভাবে তাঁর এবং তাঁর দলের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাচ্ছেন, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন মুলায়ম। পাশাপাশি, বারবার বলা সত্ত্বেও রাজ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ সংখ্যালঘু নেতা আজম খান আগরায় দলের দু’দিনের কর্মসমিতির বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ায় অন্য ইঙ্গিত পাচ্ছেন অনেকে। মুলায়ম প্রকাশ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ না দেখালেও দলের অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি সপা-প্রধানের কাছে চিন্তার। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা দলের বড় অংশের।
অথচ মুলায়মের বিরোধীদের আগাগোড়া অভিযোগ, ‘সংখ্যালঘু তোষণে’ জুড়ি মেলা ভার এই যাদব নেতার। উত্তরপ্রদেশে মুলায়মকে মুসলিম সমাজের কাছে কার্যত ‘মসিহা’ হিসেবে তুলে ধরেই এতদিন প্রচার চালিয়েছে তাঁর দল। যার জন্য বিরোধীরা অনেকে তাঁকে ‘মৌলানা মুলায়ম’ বলে কটাক্ষও করেন। কিন্তু মুজফ্ফরনগরের গোষ্ঠী সংঘর্ষে ৪০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুতে সেই ভিত অনেকটাই নড়ে গিয়েছে। চলতি সংঘর্ষের জন্য মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ সিংহ প্রশাসনের তরফে বিজেপিকে দায়ী করা হলেও গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছে একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন। জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, জামাতে ইসলামি হিন্দের মতো সপা ঘনিষ্ঠ একাধিক সংগঠন সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পরে যৌথ ভাবে অখিলেশ প্রশাসনের ইস্তফা দাবি করে জানিয়েছে, বিরোধীরা রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবেই। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্ব হল আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। যে কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ অখিলেশ সরকার।
মুসলিম সংগঠনগুলির অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সপা পরিকল্পিত ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করছে। তাদের অভিযোগ, ২৭ অগস্ট সংঘর্ষ যখন শুরু হয়, তখনই প্রশাসন শক্ত হাতে তা দমন করলে বিষয়টি এত দূর গড়াতই না। তখন প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতে হিতে বিপরীত হয়! তা ছাড়া সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় দু’সম্প্রদায়কেই কেন মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হল, তা নিয়ে শুধু কংগ্রেস বা রাষ্ট্রীয় লোক দলের অজিত সিংহ নন, প্রশ্ন তুলেছেন সংখ্যালঘু নেতৃত্বও। প্রশ্ন উঠেছে, সেনা নামানোর আগে পর্যন্ত পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও। এমনকী সংঘর্ষের জন্য প্রায় ৭০০ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হলেও মাত্র তিন জনকে গ্রেফতার করা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মুসলিম সংগঠনগুলির বিক্ষোভে অশনি সঙ্কেত দেখতে শুরু করেছেন সপা নেতৃত্ব। মূলত যাদব ও মুসলিম সমীকরণে ভর করেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্তত ৫০টি আসনে জয়ের অঙ্ক ছিল মুলায়মের। কিন্তু মুজফ্ফরনগরের ঘটনার জেরে মুসলিমরা যে ভাবে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, তাতে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন, পরিস্থিতির বদল না হলে, মুসলিম মন ফিরে না পেলে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া কঠিন মুলায়মের পক্ষে। সপা নেতৃত্বের একাংশও মনে করছেন, মুজফ্ফরনগরের ঘটনা আসলে ধাক্কা দিয়েছে ব্যক্তি মুলায়মের ভাবমূর্তিতে।
মুজফ্ফরনগরই প্রথম নয়। অখিলেশ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত দেড় বছরে অন্ত পঞ্চাশটি গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। লাগাতার এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা যে সংখ্যালঘুরা ভাল চোখে দেখছেন না, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ সবের পাশাপাশি মুলায়মের রক্তচাপ বাড়িয়েছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির মুসলিম মুখ আজম খান। গত দু’দিন ধরে আগরায় দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন আজম। দলের তরফে তাঁকে চাপ দেওয়া হলেও সূত্রের খবর, মুজফ্ফরপুরের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতেই তিনি ওই বৈঠক বয়কট করেছেন। আজমের ক্ষোভ প্রশমনে আজ মুখ খুলতে বাধ্য হন খোদ মুলায়ম। সাংবাদিকদের বলেন, “আজম আমার ওপর রাগ করে থাকতেই পারে না।” কিন্তু যে ভাবে আজম খান মুজফ্ফরনগরের ঘটনার পরে পাশ থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে ঘনিষ্ঠ মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুলায়মও।
অখিলেশ জমানায় উত্তরপ্রদেশে একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজবাদী পার্টির মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরার ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজ্য-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, দুষ্কৃতীদের হাতে সংখ্যালঘু সৎ পুলিশ অফিসারের খুন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষাদ্গার করেও বিজেপি নেতা বরুণ গাঁধীর অনায়াস মুক্তি, সন্ত্রাসের ঘটনায় অভিযুক্ত খালেদ মুজাহিদের পুলিশি হেফাজতে রহস্য মৃত্যু এমন একের পর এক ঘটনায় অখিলেশের উপর থেকে আস্থা হারাতে শুরু করেছেন সংখ্যালঘুরা। তা ছাড়া সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নতির বদলে ছাত্র-ছাত্রীদের সাইকেল ও কম্পিউটার দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু হয়েছে দলের মধ্যেই। আগরায় দু’দিনের বৈঠকেও একাধিক মুসলিম বিধায়ক অখিলেশকে এই ধরনের চমকের রাজনীতি ছেড়ে সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়নের উপর জোর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। না হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.