|
|
|
|
কার্ফু শিথিল, ছেলের পাশে মুলায়ম
সংবাদ সংস্থা • লখনউ |
পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় মুজফ্ফরনগর জেলার তিনটি এলাকায় কার্ফু শিথিল করল উত্তরপ্রদেশ সরকার। মুজফ্ফরনগর ও অন্যান্য এলাকায় গোষ্ঠী সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮ জনে। উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদবের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বাবা মুলায়ম।
মুজফ্ফরনগরের জেলাশাসক কৌশল রাজ শর্মা জানিয়েছেন, নতুন করে কোনও হিংসা হয়নি। তাই আজ দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত কোতোয়ালি, সিভিল লাইনস ও নয়ি মন্ডি এলাকায় কার্ফু শিথিল করা হয়েছিল। সেই সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পেরেছেন বাসিন্দারা। দুধ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছে প্রশাসনও।
তবে এখনও সতর্ক প্রশাসন। মুজফ্ফরনগরে মোতায়েন রয়েছে সেনা, আধাসেনা ও পুলিশ। উত্তেজনাপ্রবণ অন্য জেলাগুলিতেও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েক বার গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে বরেলীতে। জেলাশাসক অভিষেক প্রকাশ জানিয়েছেন, বরেলীতে চলাফেরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে পুলিশের ৪৫টি ‘কুইক রিয়্যাকশন টিম’ ও প্রভিন্সিয়াল আমর্ড কনস্টেব্যুলারির দু’টি কোম্পানিকে। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহমতগঞ্জ, কুলহাদাপীর, কালিবারি, শাহডানা, কুতুবখানা ও মঠ কি চৌকির মতো এলাকার উপরে কড়া নজর রাখা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে গোয়েন্দাদের। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব কমল সাক্সেনা। |
বাইরে চলছে কার্ফু। দরজা খুলে সেই দৃশ্যের সাক্ষী
মুজফ্ফরনগরের মা-মেয়ে। ছবি: পিটিআই |
প্রশাসন যা-ই বলুক, আতঙ্ক কাটছে না মানুষের। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়েও জনতার হামলার স্মৃতি ভুলছেন না তাঁরা। মুজফ্ফরনগরের হাসপাতালে শুয়ে মুনাবর, অনুবেশ বালিয়ানরা জানিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। খুৎবা গ্রামের বাসিন্দা মুনাবর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁর পরিবারকে। তখনই তাঁদের উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। রড, লাঠির আঘাতে আহত মুনাবর, তাঁর স্ত্রী ও আট মাসের সন্তান এখন হাসপাতালে ভর্তি। আর কোনও দিন গ্রামে ফিরতে পারবেন কি না তাও জানা নেই তাঁর।
সারা রাত মাঠে লুকিয়ে থেকে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বেঁচেছেন অনুবেশ বলিয়ান। লাঠি, তলোয়ার নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয়েছিল জনতা। পর দিন সকালে সেনাবাহিনী তাঁকে উদ্ধার করে।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে মূলত কাস্তে, রড, লাঠির মতোই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান মুজফ্ফরনগর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ব্যবহার হয়েছে দেশি আগ্নেয়াস্ত্রও।
আজ গোষ্ঠী সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। গুরুতর আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি জানতে আজ মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদবকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন অখিলেশ। তিনি জানান, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আছে। উত্তরপ্রদেশে যারা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তাদের ছেড়ে কথা বলা হবে না।
তবে গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছেন অখিলেশ। সরকারের অপদার্থতার জন্যই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি করেছে মায়াবতীর বিএসপি। এমনকী, স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ অখিলেশের মন্ত্রিসভার সদস্য আজম খান ও শাহিদ মনজুর। কংগ্রেসের মতে, উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি এখন ২০০২ সালের গুজরাতের মতো। সংঘর্ষ নিয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আজ ইলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি আর্জিও জমা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার যথেষ্ট সতর্ক ছিল। নিরাপত্তাবাহিনীও কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। তাই দু’দিনেই হিংসা থামানো গিয়েছে।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়া ও ঘটনার সময়ে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মুজফ্ফরনগর যাওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগে বিজেপি ও কংগ্রেসের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি বিধায়ক হুকুম সিংহ, সুরেশ রানা, ভার্তেণ্ডু, সঙ্গীত সোম ও প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ হরেন্দ্র মালিক। তবে সঙ্গীত সোমের বিরুদ্ধে অভিযোগই সব চেয়ে গুরুতর। ভুয়ো ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে তিনি বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গীতকে গ্রেফতার করার জন্য দল পাঠিয়েছিল তারা। গ্রামে লুকিয়ে পড়ায় তাঁর নাগাল পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে, বিজেপি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগের তির অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে অখিলেশ সরকার।
|
পুরনো খবর: সংঘর্ষের রিপোর্ট চায় দিল্লি, মৃত বেড়ে ৩১ |
|
|
|
|
|