মোদীধ্বনি-মুখর রাজস্থান, অঙ্ক সহজ সঙ্ঘের
চোয়াল শক্ত। মুখ না খুলে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে রইলেন মিনিট খানেক। ভাবলেন কাজ হবে। কিন্তু কোথায় কী!
বাধ্য হয়েই মাইকটা টেনে নিলেন তিনি। নরেন্দ্র মোদী। “এ বার বন্ধ করুন প্লিজ।...আমি বক্তৃতা দেব, না স্লোগান শুনব?...প্লিজ.. আপনারা কি জানেন, এ ভাবে কত লোকসান হচ্ছে?... সত্যি আপনাদের ভালোবাসায় হৃদয় ভরে গিয়েছে।... এ বার থামুন।”
কিন্তু জনতা শুনলে তো!
জয়পুরের ‘আমরুন্দন-কা-বাগ’-এর পাশাপাশি দু’টি মাঠে কম করে লাখ দুয়েক লোক। ভিড়ের মধ্যে থেকে মুহূর্মুহূ উঠছে ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি। সামনে থেকে মোদীকে দেখার জন্য উন্মত্ত জনতার ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি। ভিড়ের চাপে উধাও ব্যারিকেড। চাপের ঠেলায় মহিলাদের অনেকে অজ্ঞানই হয়ে পড়লেন। হাল সামলাতে গিয়ে নাজেহাল পুলিশ। যাঁকে নিয়ে এই উন্মাদনা, তিনি হাতজোড় করে রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করছেন। কিন্তু তাতেও পরোয়া নেই জনতার।
রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী নেত্রী বসুন্ধরা রাজের সাড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটার যাত্রার শেষ দিন ছিল আজ। এপ্রিলের গোড়ায় যে দিন যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে দিনও বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের সামনে এ ভাবেই ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি তুলেছিল জনতা। তখন জনতার দাবি ছিল একটাই মোদীকে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করুক দল। পাঁচ মাস পরে বসুন্ধরার যাত্রা শেষের দিনে সেই রাজনাথের সঙ্গে হাজির মোদীও। আর তা দেখে জনতার আবেগ আর উচ্ছ্বাস আজ আরও বেশি।

রাজস্থানের সভায় নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহ এবং বসুন্ধরা রাজে। ছবি: পিটিআই
কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপির সভাগুলিতে মোদীকে ঘিরে এই উন্মাদনা নজর এড়ায়নি সঙ্ঘ ও বিজেপির। আর তাতেই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার অঙ্ক অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে সঙ্ঘের কাছে। যার জোরে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদের মতো শীর্ষ নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও সঙ্ঘ তো বটেই, বিজেপির বড় অংশও এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা করে দিতে চান। ১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক। বিজেপির অন্দরের খবর, ওই দিনই মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হতে পারে। বিজেপির ও সঙ্ঘের লক্ষ্য, মোদীকে ঘিরে জনতার এই উন্মাদনাকে দ্রুত কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করা। সে কারণে পিতৃপক্ষ শুরুর আগেই এ কাজ সেরে ফেলতে চান তাঁরা।
এ দিন বসুন্ধরার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর থেকেই ‘মোদী-মোদী’ রব শুরু হয়েছিল। রাজনাথ বক্তব্য শুরু করার আগে তা রীতিমতো গর্জনে পরিণত হল। তখন মাইকের সামনে গিয়ে জনতাকে কিছুটা শান্ত করেছিলেন মোদী। কিন্তু রাজনাথের বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর থেকে সেই যে স্লোগান শুরু হল, স্বয়ং মোদীর অনুরোধেও তা থামল না! ক’দিন আগে ছত্তীসগঢ়েও এমন হয়েছিল। আর জনতার এই মনোভাবের কথাই সঙ্ঘ বোঝানোর চেষ্টা করছেন আডবাণীদের।
আরএসএসের যুক্তি, মোদীকে জনতা বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন সভায় তারই প্রতিফলন ঘটছে। ঠিক যেমন ১৯৭১-এ ইন্দিরা গাঁধীর ক্ষেত্রে হয়েছিল। পরে ১৯৭৭ সালে অবশ্য ইন্দিরাকে ঘিরে সেই উন্মাদনা ফিকে হয়ে যায়। মোদীর ক্ষেত্রে কী হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি বিচার করলে জনতার ‘নায়ক’ মোদীই। জনতা যখন তাদের নেতা বেছে নিয়েছে, তখন তাতে সিলমোহর না লাগানোই অপরাধ।
আরএসএসের মুখপাত্র রাম মাধব প্রকাশ্যেই বলেছেন, “সকলের কাছেই বিশেষ পরিবর্তন স্পষ্ট। জনতা যা চাইছে, তা অনুসরণের কথা বিজেপিকে বলেছি।” আজকের সভায় রাজনাথ থেকে বসুন্ধরা সকলেই আকারে-ইঙ্গিতে মোদীকে ‘ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে তুলে ধরলেন।
কিন্তু এত কিছুর পরেও বিজেপির অন্দরে মোদী-প্রশ্নে মতপার্থক্য চলছে। দলের ঘনিষ্ঠ মহলে আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা এখনও প্রশ্ন তুলছেন, মোদীর নাম এখনই ঘোষণা করলে কি বিজেপি একার ক্ষমতায় দুশো আসন নিয়ে আসবে? কিছু সভায় মোদী-মোদী রব উঠলেই কি বিরোধী ভোট বিজেপির বাক্সে আসবে? সব থেকে বড় কথা, ঘোষণা ছাড়াই মানুষ মোদীকে বেছে নিয়েছেন। তড়িঘড়ি ঘোষণা করে ভবিষ্যতে এনডিএ সম্প্রসারণের সম্ভাবনায় ধাক্কা দিয়ে লাভ কী?
দলের মোদী-বিরোধী নেতাদের মতে, আজই রাজনাথ জয়পুরের সভায় ঘোষণা করেছেন, মোদীর বদনামের চেষ্টা করছে কংগ্রেস। যুবকদের কাছে রাজনাথের আবেদন, প্রয়োজনে যুব সম্প্রদায় যেন মোদীর পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোদীকেও আশ্বস্ত করে রাজনাথ বলেন, “মনে করবেন না, আপনি একা। গোটা দল, গোটা দেশ আপনার পাশে রয়েছে।” আডবাণীদের আপত্তি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত যদি নাম ঘোষণা হয়েও যায়, মোদী জানেন, তাঁর সামনে পথটি আদৌ মসৃণ নয়। যে কোনও মূল্যে দুশোর বেশি আসন জেতার কাজটিও তাঁকেই করতে হবে। আর শুধু উচ্ছ্বাস যে তার জন্য যথেষ্ট নয়, তা-ও তিনি ভালোই জানেন। তাই সভায় জনতার হইচই কিছুটা থামলে মোদী বলেন, “গোটা দেশে কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া বইছে। কিন্তু খুব জোরে ঝড় দিলেও কি সাইকেলের টিউবে হাওয়া ভরা যায়? পাম্প দিয়েই হাওয়া ভরতে হয়। তাই সকলকে বুথ স্তরে কাজ করতে হবে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.