ভারসাম্যের সরু সুতোয় হাঁটাই অগ্নিপরীক্ষা
টলবিহারী বাজপেয়ী যখন উদার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল, লালকৃষ্ণ আডবাণী তখন দলের কট্টরপন্থী মুখ। আবার আডবাণী যখন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলেন, তখন কট্টরপন্থী মুখ নরেন্দ্র মোদী। এ বারে ‘নমো’ নিজেই প্রার্থী। এবং বিজেপি-র একটা বড় অংশের বক্তব্য, তিনি একই অঙ্গে দুই রূপ, টু-ইন-ওয়ান।
আর সেই দু’টো রূপের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই ২০১৪-র ভোটের আগে মোদীর সব থেকে বড় পরীক্ষা।
তাঁকে যদি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করা হতো, যদি শুধু প্রচার কমিটির প্রধানই থাকতেন তিনি, তাতে একটা সুবিধা থাকত মোদীর। বিজেপি আসন্ন লোকসভা ভোটে ভাল ফল না করলে তিনি বলতে পারতেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়নি বলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি দল। কিন্তু যখন আডবাণীর মতো বর্ষীয়ান নেতাকেও উপেক্ষা করে সঙ্ঘ পরিবার কার্যত হুইপ দিয়ে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করিয়ে দিল, তখন কিন্তু মোদীর চ্যালেঞ্জটাও এক ধাক্কায় বেড়ে গেল অনেকখানি।
দেশের বিভিন্ন এলাকার দিকে নজর দিলে এটা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রথমত হিন্দিবলয়। বিজেপির মূল শক্তি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল। এখানে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি ক্ষমতায়। দুই রাজ্যে প্রবল প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ার মুখে পড়তে হবে মোদীর দলকে। আবার রাজস্থান-হিমাচলের মতো রাজ্যগুলিতে বিজেপি তার সেরা ফল করেছে। সে ফল আরও ভাল করা খুব সহজ নয়। তাই মোদীর আপাতত লক্ষ্য হবে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার, যেখানে যথাক্রমে ৮০ এবং ৪০টি লোকসভা আসন রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের প্রচারে জন্য অমিত শাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু এলাকায় উত্তেজনা শুরু হয়েছে। আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এমনকী বিজেপি-র একাংশও মনে করছে, এর পরে যদি ওই রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের সুযোগ তৈরি হয়, তা হলে তার ফায়দা নেবে বিজেপি।
দ্বিতীয়ত, জাঠ এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের সম্পর্কে চিড় ধরেছে এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠেরা বিজেপির দিকে আসছে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু এখানেও বড় পরীক্ষা মোদীর। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার কলঙ্ক কিন্তু এখনও তাঁর ভাবমূর্তির সঙ্গে লেগে আছে। এর ফলে গোটা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শহুরে মানুষের মন তিনি কতটা জয় করতে পারবেন, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
মোদীকে তাই একটা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হবে। রামমন্দির, ৩৭০ ধারা, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থেকে শুরু করে গো-হত্যার মতো বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরতে চায় সঙ্ঘ। তারাই মোদীকে প্রার্থী করেছে। তাই ভোটের মুখে সঙ্ঘকে তৃপ্ত রাখাটা মোদীর গুরু দায়িত্ব। একই সঙ্গে কিন্তু এত দিন ধরে গুজরাতে বৃদ্ধির মডেল বা ‘ভাইব্র্যান্ট’ গুজরাতকে সামনে রেখে শিল্পমহলের মন জয় করা মোদীকে উন্নয়নের দিকটিতেও জোর দিতে হবে। নিজের সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি অটুট রাখতে হবে তাঁকে। দেশি শিল্পপতিরা তাঁর প্রতি আস্থাশীল। এ বারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমী দেশগুলির মন জয় করাটাও হবে মোদীর লক্ষ্য। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্যের কাজটা কিন্তু সহজ নয়।
ভারতীয় রাজনীতির এই ট্র্যাপিজের খেলা, চতুর নেতা নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে খেলবেন, সেটাও এখন দেখার। মোদী চাইবেন জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টির সঙ্গে হিন্দুত্বকে যুক্ত করতে। কিন্তু রামমন্দিরের বিষয়টিকে কি জোর করে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইবেন তিনি? তাঁর ঘনিষ্ঠমহল থেকে এখনও তেমন ইঙ্গিত নেই।
এ সবের মধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত, এমনকী উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিশানায় আনতে পারেন মোদী। এই সব অঞ্চলে বিজেপি এখনও সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি। দক্ষিণে একমাত্র রাজ্য কর্নাটক, যেখানে একক প্রচেষ্টায় ক্ষমতায় এসেছিল তারা। কিন্তু দলীয় কোন্দলে ইয়েদুরাপ্পাকে বহিষ্কারের পরে সেই সবেধন নীলমণিও হাতছাড়া হয়েছে। বাকি অঞ্চলে এনডিএ গঠনের সময় থেকে শরিকদের উপরেই ভরসা রেখেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারে নীতীশ কুমার, ওড়িশায় নবীন পট্টনায়ক ছিলেন তাদের সঙ্গী।
এখন প্রশ্ন, জোরের জায়গা নয়, এমন সব রাজ্যে কতটা আসন বাড়াতে পারবেন মোদী? তা যদি না
পারেন, তা হলে এনডিএ-র সম্প্রসারণ ছাড়া বিজেপির পক্ষে ক্ষমতা দখল করা কঠিন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সে ক্ষেত্রে তামিলনাড়ুর জয়ললিতা হয়তো তাঁর সঙ্গে আসবেন। নবীন পট্টনায়ককে সঙ্গে নেওয়ারও প্রবল চেষ্টা শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু শতকরা ৩০ ভাগ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা বিহারের নীতীশ কুমার আবার এনডিএ-তে ফিরবেন, এমন আশার আলো এখনই দেখছেন না বিজেপির বহু শীর্ষ নেতা।
শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং তার ফলে শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের স্লোগান দিয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতার তাস খেলে মোদী এই বৈতরণী পার হতে চাইবেন, শরিকদের আলিঙ্গনের চেষ্টা করবেন। এতগুলি বাধা পেরিয়ে এই ক্ষমতার দৌড়ে তিনি সফল হবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত রইল ভবিষ্যতের গর্ভে।

মোদী-নামা
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ জন্ম গুজরাতের মেহসানা জেলায়। বাবা দামোদরদাসের সঙ্গে স্টেশনে চা বিক্রি করতেন নিজেও
১৯৬৭ পরিবারের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ছেদ
১৯৭১ আনুষ্ঠানিক ভাবে আরএসএসে যোগদান
১৯৭৫

জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গাঁধী সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার। গ্রেফতারি এড়াতে ছদ্মবেশ

১৯৮৭-৮৮ গুজরাত বিজেপি-র সাংগঠনিক সম্পাদক
১৯৯০ আডবাণীর রথযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
২০০১ কেশুভাই পটেলকে সরিয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী
২০০২ গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে আজও বহু অভিযোগ। ওই বছরই বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়
২০০২-১০ গুজরাত থেকে ক্রমে জাতীয় রাজনীতিতে
২০১১-১৩ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে দলেই টানাপোড়েন। শেষ পর্যন্ত জিত


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.