জঙ্গি-নিরাপত্তা বাহিনী সংঘর্ষে নাইরোবির ওয়েস্টগেট শপিং মলের একটি অংশ এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। মৃতের সংখ্যা ৭২। আশঙ্কা, শতাধিক দেহ এখনও ওই স্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছে। কিন্তু সব পেরিয়ে এ মুহূর্তে প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধিক পরস্পর-বিরোধী দাবিদাওয়া এবং তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা। যা এতটাই জোরালো যে শনিবারের জঙ্গিহানার প্রায় পাঁচ দিন পরও এখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না, মলটি জঙ্গিমুক্ত কি না।
বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওয়েস্টগেট শপিং মলে এখনও এক জঙ্গি রয়েছে। কিন্তু কেনিয়া সরকারের দাবি, মল সম্পূর্ণ জঙ্গিমুক্ত। দ্বিতীয়ত, শনিবারের হামলার চক্রী আল-সাহবাব গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও জানিয়েছিল, ওয়েস্টগেট শপিং মল ধ্বংসের পিছনে রয়েছে কেনিয়ার সেনা ও পুলিশ। কিন্তু কেনিয়া সরকার দাবি করেছে, সংঘর্ষের সময়ে তিন তলার একাংশ ভেঙে দোতলায় পড়ে, সেটি আবার ভেঙে পড়ে একতলায়। এই ধসের চাপে প্রাণ হারান আট জন। নিহত হয় এক-দু’জন জঙ্গিও। এই পুরো ঘটনায় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই বলেই জানানো হয়েছে। কিন্তু বাড়ির এই অংশটি কেন ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। |
জঙ্গি-সেনা সংঘর্ষে বিধ্বস্ত ওয়েস্টগেট মলের একাংশ। নাইরোবিতে বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স। |
প্রশ্ন উঠছে মৃতের সংখ্যা নিয়েও। এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৭২টি দেহ। কিন্তু একাংশের আশঙ্কা, মাটির তলায় চাপা পড়ে রয়েছে, আরও বহু দেহ। সরকারের মুখপাত্র মানোয়া এসিপিসু জানান, মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকা দেহগুলি ধরেই মৃতের সংখ্যা মিলেছে। অতএব ভবিষ্যতে তা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কেনিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জোসেফ ওলে লেঙ্কুর দাবি, মৃতের আসল সংখ্যা জানতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। আমেরিকা, ইজরায়েল, ব্রিটেন, জার্মানি এবং ইন্টারপোল তদন্তের কাজে সাহায্য করছে। কেনিয়ার অনুরোধে এই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত মার্কিন নাগরিক সামান্থা লিউথওয়েইটের নামে ‘রেড নোটিস’ জারি করেছে ইন্টারপোল।
এই প্রেক্ষিতে আমেরিকার ধারণা, পশ্চিমী দুনিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকেই জঙ্গি নিয়োগ করেছিল আল-সাহবাব। সেনার একাংশের দাবি, এই হামলার প্রস্তুতিও চলেছিল বহু দিন ধরেই। জঙ্গিদের হাতে ওয়েস্টগেটের ‘ব্লু প্রিন্ট’ ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে টানা লড়াই চালানোর মতো রসদও আগে থেকেই তারা সেখানে মজুত করে রেখেছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
সরকারের গা-ছাড়া ভাব স্পষ্ট ইতিমধ্যেই। বৃহস্পতিবারও সোমালিয়া-সীমান্তের একটি পোস্টে হামলা চালায় আল-সাহবাব গোষ্ঠী। তাতে মারা গিয়েছেন দু’জন অফিসারও। গত কালই আল-সাহবাবের তরফে দাবি করা হয়েছিল, সোমালিয়া থেকে সেনা না সরালে কেনিয়ায় রক্তপাত চলবেই। তার পরেও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের কোনও প্রচেষ্টা নজরে পড়েনি কারওরই।
|