ব্রিটেনগামী বিমানটিতে তখন ঠাসা যাত্রী। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, কতটা বিপজ্জনক ভাবে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা।
তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব যাঁদের হাতে, ককপিটে থাকা সেই পাইলট এবং সহকারী পাইলট দু’জনেই সেই সময় প্রবল ঘুমে আচ্ছন্ন! সামান্য সময় নয়, টানা পাঁচ ঘণ্টা! এই দীর্ঘ সময় বিমান উড়ে চলেছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত মাসে। ব্রিটেনের একটি বিমানসংস্থার এ-৩৩০ এয়ারবাসে। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে মাত্রই গত রাতে। তবে কোন বিমানসংস্থার বিমানে ঘটনাটি ঘটেছে, তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউই।
দেশের অসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিএএ) জানিয়েছেন, ৩২৫ আসনের বিমানটি ১৩ অগস্ট ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই ঘটনাটি ঘটে। পাইলট এবং সহ-পাইলট নিজেরাই ঠিক করেছিলেন, বিমানকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় চালু রেখে দু’জনে অল্প কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নেবেন। প্রথমে পাইলট, পরে সহকারী পাইলট। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তেমনটা আর হয়নি।
পাইলটরাই জানিয়েছেন, তাঁরা এতটাই ক্লান্ত ছিলেন যে, ককপিটে দু’জনে এক সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন! এবং দু’জনের কেউই সেটা বুঝতে পারেননি। বেশ কিছু ক্ষণ পরে এক জনের ঘুম ভাঙে। তিনি তখনও বুঝতে পারেননি তাঁরা কত ক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন। সিএএ-র কাছে পরে দুই চালকই নিজেদের ভুল স্বীকার করে গোটা ঘটনাটি জানিয়ে দেন বলে দাবি। সিএএ বিমানসংস্থার নাম প্রকাশ করতে নারাজ। তারা বলছে, বিমানকর্মীদের উৎসাহ দিতেই এই প্রয়াস। জানাজানি হওয়ার ভয় না থাকলে কোনও ভুল হলে পরবর্তী কালেও যাতে বিমানকর্মীরা নিজেরাই তা স্বীকার করে নেন, তাই এই ব্যবস্থা।
সিএএ-র এক মুখপাত্র বলছেন, “এই ঘটনায় ওই বিমানচালকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলে খুব আশ্চর্য হব। বরং যে বিমানসংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা তাদের চালকদের দিয়ে কত ঘণ্টা করে বিমান চালায়, সেটা দেখা দরকার।” মুখপাত্রের কথায়, “এই ক্ষেত্রে দু’জন চালক ওড়ার আগে এত কম সময় ঘুমিয়েছিলেন কেন, জানি না।”
বিমানচালকদের একটি সংগঠনের অভিযোগ, পাইলটদের বেশি সময় কাজ করতে বাধ্য করানোয় তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন এই কথা জানিয়ে সিএএ-কে তারা বারবার সতর্ক করেছে। কিন্তু সিএএ তাতে কান দেয়নি। ওই সংগঠনের তৈরি করা একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্তত ৪৫ শতাংশ পাইলট অতিরিক্ত ক্লান্ত অবস্থাতেও বিমান ওড়াতে বাধ্য হন। পাইলটের মধ্যে ২০ শতাংশ স্বীকার করেছেন, ক্লান্তির জন্য সপ্তাহে অন্তত দু’বার কাজের সঙ্গে আপস করতে হয় তাঁদের। |