ওয়েস্টগেট কাণ্ড
১৩৭ জনকে খুন করেছি, জানাল জঙ্গিরা
ঙ্গিমুক্তির কথা ঘোষণা হয়েছিল মঙ্গলবার রাতেই। তার পর কেটেছে একটা গোটা দিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে চার দিন ধরে চলা গুলিযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির ছবিটা। রক্তে ভেসে যাওয়া ওয়েস্টগেটের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেই সামনে আসছে কিছু প্রশ্নের উত্তর। কিছু উত্তর হয়তো অজানাই থেকে যাবে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হামলার দিন দু’য়েক আগেই ওয়েস্টগেট শপিং মলের একটি দোকানে শক্তিশালী মেশিনগান বসিয়ে রাখে জঙ্গিরা। মলের কোনও কর্মচারীরও সাহায্য মিলেছিল বলেই নিশ্চিত তদন্তকারীরা। এমনকী জঙ্গিরা সঙ্গে করে কিছু পোশাক নিয়ে এসেছিল, যাতে হামলা চালানোর পরে অন্য পোশাক পরে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে পালাতে পারে তারা। অর্থাৎ সব দিক থেকে আটঘাট বেঁধেই হানা দিয়েছিল তারা।
তদন্তের পর আরও জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া বাকিদের খুন করতে চেয়েছিল। পণবন্দি করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। এ-ও জানা গিয়েছে, আল-সাহবাব জঙ্গিগোষ্ঠী শনিবারের ঘটনার দায় স্বীকার করার পর কেনিয়ার প্রশাসনের তরফে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল তাদের সঙ্গে। চেষ্টা করা হয়েছিল, আলোচনার মাধ্যমে সন্ধি প্রস্তাব স্থাপন করার। কিন্তু আলোচনা দূরের কথা, প্রশাসনের সঙ্গে কোনও কথা বলতেই রাজি হয়নি তারা।
তদন্তকারী দলকে আফসোসের মুখে ফেলেছে পাঁচ নিহত জঙ্গি। তারা বেঁচে থাকলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যেত। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে এক মহিলাও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সেই মহিলাই ব্রিটিশ পুলিশের ‘হিটলিস্ট’-এ থাকা কুখ্যাত সামান্থা লেউথওয়েট কি না, তা নিয়ে এখনও মুখ খুলতে রাজি নয় পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ১১ জন জঙ্গির কাছ থেকে সূত্র মিলতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে।
খবরে উদ্বিগ্ন চোখ কেনিয়াবাসীর। বুধবার নাইরোবিতে। ছবি: এএফপি।
কালই জানা গিয়েছিল, হামলাকারী জঙ্গিদের মধ্যে বেশ কিছু মার্কিন তরুণ রয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৮ থেকে ২০-এর মধ্যে। এ দিন আল-সাহবাবের তরফে হামলাকারী জঙ্গিদের নামের লম্বা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কেনিয়া প্রশাসন জানিয়েছে, সেই তালিকায় ৪০-৫০ জন মার্কিন নাগরিক রয়েছে। তথ্যটি প্রকাশ্যে আসার পর মার্কিন প্রশাসনের তরফেও সতর্কতা জারি হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ওই জঙ্গিদের যাতায়াতের খবর রাখা হবে, তারা যাতে দেশে ফিরতে না পারে। সে চেষ্টা করলে বিমানবন্দরেই গ্রেফতার করা হবে তাদের।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত আটটা নাগাদ প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াট্টা ঘোষণা করেন, চার দিন ধরে গুলির লড়াই চালিয়ে ওয়েস্টগেট শপিং মলকে জঙ্গিমুক্ত করা গিয়েছে। সরকারি ভাবে নিহতের সংখ্যা ৬৯ ও আহতের সংখ্যা ২০০ ঘোষিত হলেও, বুধবার বোমানিরোধী পোশাক ও মুখোশ পরে দিনভর উদ্ধার কার্য চালিয়েছে সেনা। আশঙ্কা, যে কোনও সময় জঙ্গিদের রেখে যাওয়া বিস্ফোরক ফাটতে পারে। ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে মিলেছে আরও কিছু মৃতদেহ। বেসরকারি সূত্রের খবর, নিহতের সংখ্যা ১৩০ ছুঁয়েছে। পাঁচতলা মলের আনাচ কানাচ থেকে আরও বেশ কিছু দেহ উদ্ধার হতে পারে বলে আশঙ্কা উদ্ধারকারী দলের। এ দিন ফের আল-সাহবাবের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, “১৩৭ জন পণবন্দিকে খুন করেছি।” কেনিয়া রেড ক্রস সোসাইটি জানিয়েছে, অন্তত ৫০ জন এখনও নিখোঁজ। ফলে জঙ্গিমুক্তির স্বস্তির চেয়ে প্রিয়জনদের হারানোর যন্ত্রণাই বেশি প্রকট ওয়েস্টগেট শপিং মলের আশপাশের এলাকায়। প্রিয়জন হারানোর শোক অবশ্য ছাড়িয়েছে ভৌগোলিক সীমানা। জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০০টি গুজরাতি শিশু শনিবার ওয়েস্টগেটে চলা রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে ২০ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে তিন ভারতীয়ের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে কেনিয়ার ভারতীয় দূতাবাস। আট বছরের পরমশু জৈন ও বছর চল্লিশের শ্রীধর নটরাজনের কথা জানা যায় সোমবারই। মঙ্গলবার সামনে এসেছে নিহত বেঙ্গালুরুর ব্যবসায়ী সুদর্শন বি নাগরাজের (৫০) কথা। শুক্রবারই তাঁর দেহ ভারতে আসার কথা।
মৃত্যুমিছিলের তালিকায় ভারতীয়ের সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা। কেনিয়ায় ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার তন্ময় লাল জানান, ন’জন গুজরাতির খোঁজ পাওয়া যায়নি। শপিং মলটিতে আশিটিরও বেশি দোকান ছিল। ছিল ব্যাঙ্ক, কফিশপ, জিম ইত্যাদিও। যার বেশির ভাগেরই মালিক ছিলেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
চার দিনের বিপুল ক্ষতির হিসেব মিলতে আরও বেশ কয়েক দিন লাগবে। জানা নেই, মৃত্যুমিছিলের তালিকায় আরও কত সংখ্যা যোগ হবে। অপেক্ষা সময়ের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.