সন্ত্রাসের ছায়াতেও কথা
শরিফ-বৈঠক বাতিলে নারাজ মনমোহন
পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হলেই কাশ্মীরে হামলা চালায় পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সমর্থনপুষ্ট জঙ্গিরা। কারণ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চায় না, দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে আলাপ-আলোচনা চলুক। এ বারও তার অন্যথা হল না। কিন্তু আইএসআই-এর কৌশল সফল হতে দিতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কাশ্মীরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেও পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিস্থাপনের সূত্র সন্ধানের পাশাপাশি শরিফকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনের ব্যাপারেও কড়া বার্তা দেবেন মনমোহন।
কাশ্মীরের ঘটনা জানার পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, “শান্তির বাতাবরণ নষ্ট করতে এটা আরও একটা প্ররোচনামূলক এবং নৃশংস ঘটনা। সীমান্তপার থেকে সমর্থনপুষ্ট এমন সন্ত্রাস কড়া হাতে মোকাবিলা করার ব্যাপারে নয়াদিল্লি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বার করার যে চেষ্টা চলছে, এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাজ তা ভেস্তে দিতে পারবে না।”
কূটনৈতিক কর্তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই বিবৃতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এক দিকে তিনি যেমন সন্ত্রাস দমনে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কথা বোঝাতে চেয়েছেন, তেমনই এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, শরিফের সঙ্গে আসন্ন বৈঠক নিয়ে তাঁর কোনও রাজনৈতিক দোলাচল নেই। বিজেপি শরিফের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছে।
বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি মৃতদেহ সামনে রেখে পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন না।’ শরিফের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এত তাড়াহুড়ো কেন, প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তিরুচিরাপল্লিতে নরেন্দ্র মোদীও কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি দুর্বল বলে অভিযোগ করে বলেছেন, “জঙ্গি হানায় যখন দিনেরাতে মানুষ মরছে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলার দরকার কী?”
প্রধানমন্ত্রী কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড়। মিশরের শর্ম-অল-শেখে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার যে দরজা তিনি খুলেছিলেন, তা তিনি কোনও অবস্থাতেই বন্ধ করতে চান না। মনমোহনের যুক্তি, পাকিস্তানের রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র সফল হতে দিলে ভারতের কোনও লাভ হবে না। যে যুক্তির পিছনে আজ দৃঢ় ভাবেই দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।
মনমোহন সিংহ, প্রধানমন্ত্রী
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই আমেরিকার মাটিতেই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে লাহৌর বাসযাত্রার নীল নকশা তৈরি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে বাজপেয়ী-শরিফ যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে উন্মোচিত হয়েছিল ভারত-পাক মৈত্রীর নতুন দিগন্ত।
তার পর পনেরো বছরে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক যেন তেল-মাখা বাঁশ বেয়ে বাঁদরের ওঠানামা। তবে এ বার শরিফ আগেভাগেই তাঁর বিদেশমন্ত্রীর মাধ্যমে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি এ দফায় অনেক বেশি সতর্ক। তিনি চাইছেন, পাক সেনাবাহিনীকে চাপের মধ্যে রাখতে। আর সেটা সম্ভব হলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা হয়তো সহজ হবে।
শরিফকে বিশ্বাস করেছেন মনমোহন। সেই কারণেই জম্মুর আজকের ঘটনাকে চাপ কাটাতে পাক সেনাবাহিনীর কৌশল হিসেবেই দেখছে নয়াদিল্লি। যদিও প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে সরাসরি পাক সেনাকে দায়ী করেননি। শুধু সীমান্ত পারের মদতের কথা বলেছেন। কারণ, এর আগে এ ধরনের আক্রমণের জন্য পাক সেনাবাহিনীকে দায়ী করার পরে তারা তা অস্বীকার করেছিল।
তবে শরিফের উপরে আস্থা রাখলেও মনমোহন একই সঙ্গে সতর্ক। কারণ, সামনেই লোকসভা ভোট। যার দিকে তাকিয়ে পাকিস্তানে সক্রিয় জঙ্গি ঘাঁটিগুলি নির্মূল করার কড়া বার্তা তিনি দেবেন পাক প্রধানমন্ত্রীকে। দাবি জানাবেন, মুম্বই সন্ত্রাসের যথাযথ তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার ফাঁকে মনমোহন-শরিফের বৈঠকের দিকে এখন সবার নজর পড়লেও এই বৈঠক ঘিরে খুব বড় কোনও প্রত্যাশা কিন্তু কোনও পক্ষেরই নেই। গোড়ায় তো ভাবা হয়েছিল, পুরোদস্তুর বৈঠক না-করে খুচরো আলাপ (পরিভাষায় যাকে বলে ‘সাইড লাইন টক’ বা ‘পুল সাইড টক’) সেরে একসঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ দেওয়া হবে সাংবাদিকদের। পরে যখন দেখা গেল সে রকম কিছু করা যাচ্ছে না, অথচ মনমোহন-শরিফ মুখোমুখি সাক্ষাতের ব্যাপারে দু’পক্ষই আগ্রহী, তখন আলাদা বৈঠকের ব্যবস্থা হল। রবিবার সেই বৈঠক হবে।
কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে কাশ্মীর সূত্র নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনায় মোটেই আগ্রহী নয় কংগ্রেস। এটা ঠিক যে ’৯৮ সালে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শান্তির পায়রা উড়িয়ে লোকসভা ভোট ছ’মাস এগিয়ে এনেছিলেন বাজপেয়ী। কিন্তু কংগ্রেস মনে করে, বিজেপি পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গেলে তাদের ভোটব্যাঙ্কে কোনও সমস্যা হয় না। অথচ কংগ্রেস যদি জোর গলায় পাক সন্ত্রাসবাদের নিন্দা না-করে শুধু শান্তির কথা বলে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ উঠতে শুরু করবে।
এই সত্যটা পাকিস্তানও জানে। আর এ বারের ভোটে কংগ্রেস যে প্রবল প্রতিকূলতার মুখোমুখি, সেটাও তাদের জানা। অতএব আগামী বছর লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর আগে দু’দেশের মধ্যে কাজের কথা বিশেষ কিছু হবে না। তা সত্ত্বেও যে বৈঠকটা হচ্ছে তার আরও একটা কারণ, আমেরিকার আগ্রহ। ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়বে মার্কিন সেনা। তার আগে তালিবানের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাক সেনা এবং আইএসআই-এর উপর বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল পেন্টাগন। কিন্তু ভারতের আশঙ্কা, আমেরিকা হাত গুটিয়ে নেওয়ার পরে আফগানিস্তান তালিবানের কব্জায় চলে যেতে পারে। হোয়াইট হাউস চাইছে এ নিয়ে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে যেন কোনও সংঘাত না-বাধে। ২৯ তারিখের বৈঠকের ব্যাপারে তাই মার্কিন কর্তারা খুশি।

এই সংক্রান্ত অন্য খবর...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.