ডেঙ্গিতে আরও চার জনের মৃত্যু
সোমবার রাত থেকে বুধবার বিকেলের মধ্যে শিলিগুড়ি শহরের ৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গি আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছে গোটা শহর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল ও নানা নার্সিংহোম মিলিয়ে আরও অন্তত ২০০ জন চিকিৎসাধীন। তবে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁয়েছে। তাঁদের রক্তপরীক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিলিগুড়ি দশরথপল্লির লক্ষ্মী কলোনির বাসিন্দা উজ্জ্বল অধিকারী (২০) ডেঙ্গিতে মারা যান। বুধবার সকালে মারা যান বিকাশকুমার ঝা (২১) নামে জলপাইমোড় লাগোয়া এসএফরোডের এক বাসিন্দা। তিনি শিলিগুড়ি কমার্স কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। প্রথমে শিলিগুড়ি হাসপাতালে এবং পরে তাঁকে সেবক রোডের দুই মাইলের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। এ দিন বিকালে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে মারা যান ডেঙ্গিতে আক্রান্ত সীমা সাহা (৪৩)। তিনি পরেশনগর এলাকার বাসিন্দা।
গত সোমবার সন্ধ্যায় উত্তরায়ণ উপনগরীর একটি নার্সিংহোমে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন দিলবাহাদুর রাই (৮৮) নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি শালুগাড়া বাজার এলাকায়।
অগস্টের শেষ সপ্তাহে শিলিগুড়িতে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয়। এখনও পর্যন্ত শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬ জন। মৃতদের পরিবারের লোকদের সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে যেমন অভিযোগ রয়েছে, তেমনই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ডেঙ্গিতে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আমি মর্মাহত। দলাদলি নয়, সকলে মিলে ডেঙ্গি রুখতে এগোতে হবে।” সরকারি সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে জরুরি বৈঠক হবে।
ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লেও তা রোখা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলতে থাকায় শহরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। কারণ, কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা অভিযোগ করেছে, স্বাস্থ্য দফতর ও রাজ্য সরকারের কাছে থেকে সব সাহায্য মিলছে না। আবার রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে এ বছর রাজ্য সরকারের তরফে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ঠেকাতে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুরসভাগুলিকে সে জন্য আলাদা টাকা দিয়ে সচেতনতা প্রচার করতে বলা হয়েছিল।” তাঁর অভিযোগ, “শিলিগুড়িতে সেই কাজ একেবারেই হয়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর সমস্ত ব্যবস্থাই নিচ্ছে।” এ দিন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি তাতে সমালোচনা নয়,
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সকলকে সাহায্য করতে হবে। তবে স্বাস্থ্য দফতরের আরও সাহায্য দরকার।”
উদ্বিগ্ন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “এক মাস ধরে শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। মন্ত্রী-মেয়র কী করছেন? রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হচ্ছে না কেন? সমন্বয় কমিটি গড়ে কেন একযোগে কাজ করা হচ্ছে না?”
মৃতদের পরিবারের তরফেও বিস্তর অভিযোগ। বিকাশের বাবা বিনোদবাবু পেশায় পাহারাদারের কাজ করেন। তিনি জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথমে বিকাশকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে না দেখে পরের দিন বর্ধমান রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। পরে অন্য একটি নার্সিংহোমেও ভর্তি করানো হয়। বিকাশকে ১২ ইউনিট প্লেটলেট দিয়েও বাঁচানো যায়নি।
উজ্জ্বলের মা সাবিত্রীদেবীর অভিযোগ, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ছেলে জ্বরে আক্রান্ত। পরের দিন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়নি। শনিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রবিবার ছুটির দিন থাকায় সেখানে রক্ত পরীক্ষা করেনি। এমনকী সোমবার স্বাস্থ্য কর্মীদের বললেও তারা করতে চাননি। শেষে মঙ্গলবার ২০০ টাকা দিলে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। সোমবার নাক, মুখ দিয়ে রক্তও বার হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতে তাকে আইসিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস জানিয়েছেন, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই উজ্জ্বল মারা গিয়েছেন।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী গৌতমবাবুর বক্তব্য, “পরিস্থিতি সামলাতে আমরা আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে আসব এই হাসপাতালে।”
দিলবাহাদুরবাবুকে গত সোমবার মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করান পরিবারের লোকেরা। তাঁরা নাতি মনি রাই জানান, গত শুক্রবার থেকেই দিলবাহাদুরবাবু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। সেই রিপোর্ট তাঁরা রবিবার জানতে পারেন। তাতে এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবানু পাওয়া যায়। এরপর একটি নার্সিংহোমে যোগাযোগ করলেও সেখানে রোগীকে ভর্তি করাতে কর্তৃপক্ষ রাজি হননি বলে অভিযোগ। সোমবার মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সীমাদেবীকে মঙ্গলবার সকালে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর রক্তে এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যই বলছে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গির সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিয়েছে। গত অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত শিলিগুড়ি পুর এলাকা, মহকুমার অন্যান্য অংশ এবং লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৯০০ জন। তার মধ্যে পুরসভার সংযোজিত এলাকার ৪২-৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে, লাগোয়া ডেমডেমা বস্তিতে, মাটিগাড়া বাজার, প্রমোদনগর এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। সংযোজিত এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৩০০ জন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.