ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত কিশোর সাদ্দাম হুসেনের চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ল দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বুধবার ওই তদন্ত কমিটি গঠন করে সাদ্দাম ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক। প্রথমত কী ধরনের ডেঙ্গিতে সাদ্দাম আক্রান্ত হয়েছিল, শারীরিক অবস্থা কী রকম ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া চিকিৎসা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। সে ব্যাপারেও তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার রাতে প্রধাননগরের এক নার্সিংহোমে মারা যায় গাঁধীনগরের ১৬ বছরের সাদ্দাম। তাঁর চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন পরিবারের সদস্যরা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, “তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রই জানিয়েছে, সাদ্দাম সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের। অনেকে তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েইছে। এখনও অনেক ওয়ার্ডে মশা মারার তেল স্প্রের করা হয়নি। সচেতনতার কাজে গাফিলতি আছে বলে অভিযোগ। |
ডেঙ্গি রোধে ব্যথর্তায় পুরসভায় বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সিপিএম এবং তৃণমূল। বুধবার বিস্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে তিনশো ছুঁই ছুঁই করছে। তার মধ্যে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় এবং শিলিগুড়ি মহকুমার অন্যান্য অংশ মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৬০ জন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে স্প্রে করার কাজে নামবে স্বেচ্ছাসেবী দল। ডেঙ্গির বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের বিশেষ দল এসে পৌঁছেছে শিলিগুড়িতে। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে মশা এবং লার্ভা সংগ্রহ করছেন। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার ভুমিকা নিয়ে এ দিন বিক্ষোভ দেখালেন সিপিএম এর ৪ নম্বর অঞ্চল কমিটির সদস্যরা। সেই সঙ্গে এদিন পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান ৭ নম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরাও। এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও পুরসভার তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি রীতা পাল বলেন, “ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এলাকায় মশার তেল বা ধোঁয়া কিছুই দেওয়া হয় নি।” এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে এ দিন মেয়রকে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “আমরা সব জায়গাতেই তেল ব্লিচিং দিয়েছি। তবে কোন ওয়ার্ডে যদি না দেওয়া হয়ে থাকে সেটা দেখব।”
পাশাপাশি এলাকায় জঞ্জাল পরিষ্কার, ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য যে তেল ও ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হয়েছে তা সহ ওয়ার্ডে সমান ভাবে বন্টন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সিপিএম এর ৪ নম্বর অঞ্চল কমিটির সদস্যরা। এ দিন ১০ দফা দাবি জানিয়ে পুর কমিশনারকে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। কমিটির সম্পাদক অসিত চক্রবর্তী বলেন, “সব সময়ই বাম পরিচালিত ওয়ার্ড গুলি বঞ্চিত। ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত ব্লিচিং মশা মারার তেল আমরা পাই নি।” তবে এ দিন স্টেডিয়াম এলাকায় থাকা বিভিন্ন গাছের ডাল কাটা হয়েছে। এলাকায় থাকা বিভিন্ন অফিসের ক্যাম্পাসের গাছ গুলিও কাটা হয়েছে বলে জানান মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। |
শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি-হানা |
পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের যা করা উচিত |
• মশার লার্ভানাশক তেল ছড়ানো • সচেতনতা প্রচার।
• ফুলের, টবে ফেলে দেওয়া নারকেলের খোলা-সহ কোথাও জল জমে না থাকা
• নির্মাণ কাজের জায়গায় কোথাও যাতে জল জমে না থাকে
• ভিন রাজ্য থেকে যে সমস্ত গাড়ি আসছে সেগুলি স্প্রে করে শহরে ঢোকানো উচিত
• বিভিন্ন এলাকা শিবির করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ। • চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। |
কী চাইছেন বাসিন্দারা |
• মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হোক। • ডেঙ্গি নিয়ে দলাদলি বন্ধ হোক।
• নেতাদের একাংশের মধ্যে ব্লিচিং ছড়ানোর প্রতিযোগিতা আর নয়।
• পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যশিবির • রোজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা হোক।
• দলমত নির্বিশেষে ডেঙ্গি রোখার কাজ করা হোক। |
রোগ নিয়ন্ত্রণে যা করা হচ্ছে |
• মশার লার্ভা মারার তেল দিন কয়েক আগে থেকে স্প্রে করা শুরু হয়েছে।
• দায়সারা ভাবে এলাকায় সচেতনতা শিবির, প্রচার চালানো হচ্ছে।
• নেতাদের একাংশ অনুগামীদের নিয়ে, দলীয় পতাকা টাঙিয়ে ব্লিচিং পাউডার ছড়াচ্ছেন।
• কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম, পরস্পরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। |
|