আশ্বিনের কড়া রোদে রাস্তায় রোদচশমা স্বাভাবিক। কিন্তু বাসে, পাতাল রেলে, বাতানুকূল শপিং মলেও যে রোদচশমার ভিড়। এমনকী বাড়িতেও অনেকের চোখে রোদচশমা! ছায়ার ভিতরেও চোখে রোদচশমা কেন?
আসলে ওঁদের রোদচশমা খোলার উপায় নেই। সেটা খুলে ফেললেই যে ওঁদের রক্তচক্ষুর সামনে পড়ে পালাই-পালাই অবস্থা হবে বাকিদের!
কনজাংটিভাইটিসের আক্রমণে পুজোর আগে সত্যিই ত্রাহি ত্রাহি রব। এক বার আক্রমণ করলে সপ্তাহখানেকের আগে কমছে না। আর যে-ক’দিন থাকছে, সেই সময়টায় শুধু চোখ লাল বা চোখ দিয়ে জল পড়াই নয়, মাথা এবং চোখে প্রবল যন্ত্রণাও হচ্ছে। চোখের লাল ভাব কাটার পরেও সেই যন্ত্রণার জের থেকে যাচ্ছে আরও কয়েকটা দিন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রে এর জেরে কর্নিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কনজাংটিভাইটিস কী?
চোখের ‘কনজাংটিভা’ অর্থাৎ বাইরের দিকের স্তর এবং চোখের পাতা ফুলে ওঠা ও প্রদাহকেই বলে কনজাংটিভাইটিস। চিকিৎসকদের বড় অংশই মনে করছেন, তাপমাত্রার যে-ওঠাপড়ার জেরে চার দিকে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে, কনজাংটিভাইটিস বাড়ার অন্যতম কারণ সেটাই। তবে এ বারের কনজাংটিভাইটিস চেহারায় ও চরিত্রে অনেকটাই জটিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কনজাংটিভাইটিসের ধরনধারণও বদলে যাচ্ছে। |
সেই বদলটা কেমন?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে কনজাংটিভাইটিসে চোখ লাল হওয়া এবং ফুলে থাকার সঙ্গে সঙ্গে পিচুটিও হয়। কিন্তু ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসে অনেক সময়েই সেটা হচ্ছে না। অনেকেরই আবার হেমারেজিক কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে। চার-পাঁচ দিনের মাথায় চোখ থেকে বেরিয়ে আসছে রক্তরস। তাতে ভয় এবং বিভ্রান্তি দু’টোই বাড়ছে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, রোগের ফিরে আসা। চক্ষুচিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখছি, মাস ছয়েকের মধ্যে রোগটা একই লোকের চোখে ফিরে আসছে। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে রোগ সেরে গিয়েছে মনে হলেও ভাইরাসটা শরীরের কোথাও থেকে যাচ্ছে। যখনই কোনও কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে, সেই সময়েই ফের হানা দিচ্ছে ওই ভাইরাস।”
এর মোকাবিলার উপায় কী?
চিকিৎসকদের মতে, নিজে থেকেই কনজাংটিভাইটিস হলে সেরে যাবে, এমন ধারণার দিনও আর নেই। শৌভিকবাবু বলেন, “ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে ওঠায় পুরনো ওষুধ আর কাজ করছে না। বহু ক্ষেত্রে ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। তাই গোড়াতেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর ভুলেও চোখে জলের ঝাপটা দেবেন না। এতে ভাইরাল সংক্রমণ সরাসরি কর্নিয়ায় পৌঁছে ঘা সৃষ্টি করতে পারে।”
রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজির চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্ত বলেন, “শীত আর গরমের মাঝামাঝি সময়টায় কনজাংটিভাইটিস বাড়ে। এ বারেও তা-ই হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখছি, কর্নিয়ায় দাগের মতো পড়ছে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তির কিছুটা সমস্যা হয়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না-করলে কর্নিয়ার স্থায়ী ক্ষতিরও আশঙ্কা রয়েছে।”
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্তও জানান, এ বারের কনজাংটিভাইটিসে অনেক ক্ষেত্রেই কর্নিয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাই গোড়া থেকেই সাবধান হওয়া ভাল। তাঁর পরামর্শ, “শুরুতেই ডাক্তারের কাছে যান। চোখের চিকিৎসা করান। অনেক ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিসের পরে ‘ড্রাই আই’-এর সমস্যা হচ্ছে। অর্থাৎ চোখ ভারী লাগছে। মনে হচ্ছে, চোখে যেন কিছু পড়েছে। এই সব সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসা দরকার।”
অর্থাৎ চোখ লাল হলে ‘দু’দিন বাদে এমনিই সেরে যাবে’ মনে করে সমস্যাটাকে উপেক্ষা করার দিন শেষ। ডাক্তারদের মতে, এ ক্ষেত্রে ‘সব ভাল, যার শুরু ভাল’ অর্থাৎ শুরু থেকেই চিকিৎসা করানোই ভাল। |