|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা |
মিলছে না ঠিকাদার, রাস্তা তৈরির কাজ নিয়ে সংশয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে সব থেকে আগে প্রয়োজন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই সূত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা। কিন্তু কাজ হচ্ছে কোথায়? দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও অনুমোদন হওয়া রাস্তার মাত্র এক তৃতীয়াংশের সবে টেন্ডার হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে ঠিকাদারই মিলছে না। পরপর তিন বার দরপত্র আহ্বান করার পরেও এই ঘটনা ঘটায় প্রশাসনিক কর্তাদের মাথায় হাত। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার হাল এমনই। তাই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
গত ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় রাস্তা তৈরি হয়েছে ১০১৫.৬৯ কিলোমিটার। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে একেবারে এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার ১৫১০ কিলোমিটার রাস্তা (২৭৯টি রাস্তা) তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। তারপর থেকেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরপর তিন বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তাতে মাত্র ৫১৫.৩৮ কিলোমিটার রাস্তা (৭৯টি রাস্তা) করার জন্য দরপত্রে অংশ নেন ঠিকাদারেরা। বাকি কাজ নেওয়ার ব্যাপারে ঠিকাদারদের রাজি করানো যায়নি। যদিও চলতি বছরে ফের আরও ১৯টি রাস্তার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কী হয় সেটাই দেখার। |
|
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কেশপুরের পঞ্চমী থেকে বিশ্বনাথপুর পর্যন্ত রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র। |
ঠিকাদারেরা কাজের বরাত নিচ্ছেন না কেন? ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি সমস্যা হল, জমি, মাটি ও বালি। রাস্তা তৈরির কাজে জমি প্রয়োজন হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয় না। আবার সাধারণ কৃষক সহজে চাষযোগ্য জমি দিতে রাজি হন না। তাঁদের বুঝিয়ে জমি নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। এক্ষেত্রেও দু’একজন জমি দিতে রাজি হন না। অনেকে আবার আদালতেও যান। আবার জমি দিলেও জমির পাশ থেকে মাটি তুলতে দিতে সবাই রাজি হন না। এই প্রকল্পে জমির পাশ থেকেই মাটি তুলে রাস্তা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। দূর থেকে মাটি নিয়ে আসতে হলে খরচ বাড়বে। আবার চাষিদেরও বক্তব্য, রাস্তার জন্য জমি থেকে মাটি তুললে সেখানে গর্ত হয়ে যাবে, ফলে চাষ করা যাবে না। আর তৃতীয় সমস্যা হল বালি। এ ক্ষেত্রে যেখানে ৪০০-৪৫০ টাকায় ১০০ সিএফটি বালি ঠিকাদার নিজেই কিনতে পারেন, সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা সিন্ডিকেট বানিয়ে সেই বালিই ৬০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করান। এক ঠিকাদারের কথায়, “এই সব ঝামেলা নিয়ে কে কাজ করতে চায় বলুন তো। এর বাইরেও অনেক সমস্যা রয়েছে।”
এর বাইরের সমস্যাগুলি ঠিক কী? এই প্রকল্পে রাস্তা তৈরি করতে হলে ৫ বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে ঠিকাদারের। তাঁদের দাবি, বিটুমেনের রাস্তা সাধারণত তিন বছরের পরেই ভাঙতে শুরু করে। এছাড়াও এলাকার মাটির উপর নির্ভর করে রাস্তা কতদিন টিকবে। রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ শতাংশ অর্থ কেটে বাকি টাকা ঠিকাদারদের দেয় প্রশাসন। রাস্তা সংস্কার না করলে সেই টাকা মিলবে না। ঠিকাদারদের মতে, বরাদ্দ না বাড়ালে সমস্যা হচ্ছে। কেননা কোনও জমিদাতা আদালতে গেলে তা মেটাতে প্রায় এক-দুই বছর লেগে যায়। সেই ঝামেলা মিটিয়ে রাস্তা করলে তবেই মিলবে রাস্তা তৈরির চূড়ান্ত শংসাপত্র। অর্থাৎ যতদিন ঝামেলা চলছে ততদিন রাস্তা সংস্কারের দায় থাকবে ঠিকাদারের উপর। আবার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রাস্তা তৈরি শেষ করার চূড়ান্ত শংসাপত্র মেলার দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের দায়িত্ব থাকবে ঠিকাদারের উপর। সে ক্ষেত্রে একটু ত্রুটি থাকলেই সমস্যা হয়। এক ঠিকাদারের কথায়, “কে এত ঝামেলা নিয়ে রাস্তা তৈরি করতে যাবে। প্রশাসন খুব চাপাচাপি করায় কিছু কাজ নিতে বাধ্য হয়েছি। না হলে ওই প্রকল্পে এক কিলোমিটার রাস্তার কাজেরও ইচ্ছে নেই।” তাই সব মিলিয়ে ঠিকাদারেরা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরি করতে রাজি হচ্ছেন না।
ঠিকাদারদের অনীহার কারণেই অনেক রাস্তার কাজ পড়ে রয়েছে। যেমন, কেশপুর ব্লকের মহারাজপুর থেকে রানিয়র পর্যন্ত রাস্তার মাঝে ১৭০ ফুট রাস্তা করা যায়নি। কারণ, জমির মালিক আদালতে গিয়েছেন। সবংয়ের বাদলপুর থেকে ভিষিণ্ডিপুরের রাস্তায় বাদলপুরের কাছে একজন জমি না ছাড়ায় কালভার্ট হয়নি। ফলে রাস্তা করেও সুফল মেলেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যত দিন যাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় প্রকল্পের খরচও বাড়বে। তখন সঙ্কট বাড়বে।
|
পুরনো খবর: প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন |
|
|
|
|
|