আমরা-ওরা চলছেই
মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ব্রাত্য বিরোধীরা
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক নিয়ে ফের উঠল ‘আমরা-ওরা’র রাজনীতির অভিযোগ। আজ, বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ডাক পেলেন না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিরোধী সদস্যরা। বৈঠকে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক থেকে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা উপস্থিত থাকবেন। তৃণমূলের ৬৪ জন জেলা পরিষদ সদস্যকেও সভায় উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে। জেলা পরিষদের মোট ৬৭ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩ জনই বিরোধী রয়েছেন। অথচ, ওই তিন বিরোধী সদস্যকে সভায় ডাকা হয়নি। সভায় তাঁদের না ডাকার কারণ সম্পর্কে জেলা পরিষদ কর্তাদের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর শিলদার পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে মহাড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ করলেন সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। বুধবার শিলদা থেকে রিমোট কন্ট্রোলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় বিধায়ককে বাদ দিয়ে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনের সমালোচনা করে মানসবাবু বলেন, “কিন্তু এটা কী হচ্ছে! এটা কি দলীয় কর্মসূচি না সরকারি কর্মসূচি? স্পষ্ট করে বলুন, আপনি তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী না বাংলার?” জেলা সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে রাজ্যের বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
অবশ্য, রাজ্যে ‘আমরা-ওরা’র বিভাজন এই প্রথম নয়। এক সময় সিপিএমের বিরুদ্ধেও দলবাজির অভিযোগ উঠেছে। অনেকে মনে করেছিলেন, রাজ্যে পালাবদলের পর ‘আমরা-ওরা’র এই বিভাজন মুছে যাবে। কিন্তু, তা হয়নি। পালাবদলের পর বহুবার পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে এসে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধী বিধায়কদের ‘ব্রাত্যই’ রাখা হয়েছে। আগে জেলা পরিষদ সিপিএমের দখলে থাকায় জেলা পরিষদ সদস্যদেরও সভায় ডাকা হয়নি। গত দু’বছরে মুখ্যমন্ত্রীর একটি সভাতেও ডাক পাননি প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এই প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ফলে, এ বার তালিকায় জুড়েছে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতির নাম। পাশাপাশি, জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যরাও ডাক পেয়েছেন। বুধবার এক প্রশ্নের উত্তরে অন্তরাদেবী বলেন, “এই সরকারের আমলে বিরোধী দলের সদস্যরা মর্যাদা পাবেন না, এ আর নতুন কী!” জেলা পরিষদের সিপিএম সদস্যা রীতা জানা বলেন, “নতুন করে আর কী বলব? শুধু তো মেদিনীপুর নয়, রাজ্যের সর্বত্রই বিরোধী দল মর্যাদা পাচ্ছে না। এটাই যেন সংস্কৃতি। এই সরকারের কাছ থেকে বেশি আর কী আশা করব!” জেলা পরিষদের আরেক সিপিএম সদস্যা মল্লিকা মুদি এবং একমাত্র কংগ্রেস সদস্য বিকাশ ভুঁইয়াও সভায় ডাক পাননি। বিকাশবাবুর কথায়, “রাজ্য সরকার যে নীতি নিয়ে চলছে, তা কাম্য নয়। নির্বাচিত সকলকেই প্রশাসনিক সভায় ডাকা উচিত। সেখানে শাসকপক্ষ, বিরোধীপক্ষ বলে কিছু হয় না।”
শুধু মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকই নয়, আগে জেলাস্তরে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম পর্যালোচনার জন্য যে সব বৈঠক হয়েছে, সেখানেও ‘ব্রাত্য’ রাখা হয়েছিল সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদকে। এর ফলে, উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে বলেও অভিযোগ। বিরোধীদের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারের গৃহীত নীতির ফলে জনপ্রতিনিধি এবং আধিকারিকদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ফলে, উন্নয়ন ব্যাহত হয়। ২০১১ সালের মে মাসের পর থেকে জেলা পরিষদ পরিচালনা করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ সহযোগিতা না মেলারও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শাসক দলের বক্তব্য, সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদ বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
শাসক বিরোধী চাপানউতোরে নতুন সংযোজন ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.